২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়া শাসনের পথ সুগম করে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার এ পদক্ষেপ পাল্টে দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটির রাজনীতির ভূচিত্র। দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের কনস্টান্টিন মালোফিভের কথায় তা সপষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে- রাশিয়া আপাতদৃষ্টিতে একটি রাজতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
মালোফিভ একজন জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী। ক্রেমলিনের সঙ্গে তার ভালো যোগসাজশ রয়েছে। রয়েছে নিজের মালিকানাধীন একটি টিভি চ্যানেলও। বহু বছর ধরে রাশিয়ায় রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছেন তিনি। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই সপ্তাহের পর, তিনি নিজের লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন।
মালোফিভের কথায়, এই বিদ্যমান আপাত রাজতন্ত্র খুবই ভালো ব্যাপার।
পুতিনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা যদি এখন তাকে প্রেসিডেন্ট না ডেকে, সম্রাট বলে ডাকা শুরু করি, তাহলে আমাদের সংবিধানেও খুব একটা পরিবর্তন আনতে হবে না।
চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রবাহে বড় পরিবর্তন এসেছে। ৬৭ বছর বয়সী পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, আরো ১২ বছর রাশিয়া শাসনের সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। বুধবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সংবিধানের এক ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীটি এর আগের দিন পুতিনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিম্নকক্ষে উত্থাপিত হয়েছিল। বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে, কোনো ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কিন্তু সংশোধনীটি অনুসারে, এ নিয়ম অকার্যকর হয়ে পড়বে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বর্তমান মেয়াদ পূর্ণ হবে। চাইলে এরপর ফের নির্বাচনে লড়তে পারবেন তিনি। ক্রেমলিনের জন্য অবশ্য এ পদক্ষেপ সফল করার কঠিন অংশটুকুই বাকি রয়ে গেছে: রুশ জনগণের মধ্যে তাদের নতুন সম্রাটের জন্য গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা।
রাশিয়ার তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ তাদের জীবদ্দশায় একমাত্র শাসক হিসেবে পুতিনকেই দেখে আসছে। মস্কোর পোশাক প্রস্তুতকারী ব্যবসায় জড়িত ২৪ বছর বয়সী দারিয়া রিসচেভা জানান, তার বয়স যখন ৪০ হয়ে যাবে, তখনও পুতিনই দেশ শাসন করে যাবেন। এটা ভাবতেও আমি পাগল হয়ে উঠি।
পুতিন তার বর্তমান মেয়াদ শেষেও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন- এটা বিস্তৃত পরিসরে প্রত্যাশিত ছিল। তিনি জোর দিয়ে বলে আসছেন, মেয়াদ শেষে ফের নির্বাচনে লড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এই সংশোধনটি পাস হওয়া নির্ভর করবে দেশটির সাংবিধানিক আদালতের অনুমোদন ও জনগণের ভোটের ওপর। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি বেশকিছু সাংবিধানিক সংশোধনের প্রস্তাব তোলেন। আগামী ২২শে এপ্রিল সে বিষয়গুলোর ওপর গণভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সংশ্লিষ্ট সংশোধনীটিও যোগ হয়েছে।
রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের আইনপ্রণেতা কনস্টান্টিন দলগোভ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো নিয়ে দেশব্যাপী ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত আক্কেলমন্ত একটি সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে খুব সাহসীও। তিনি আরো বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের ও সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিগুলোর প্রতি আমাদের প্রেসিডেন্টের আনুগত্যের ব্যাপারটি প্রকৃতরূপে নিশ্চিত করে।
সংশোধনগুলো নিয়ে আদালতের অনুমোদন ও ভোটে সমর্থন প্রায় নিশ্চিত। রাশিয়ার বিচার বিভাগ ও নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর ক্রেমলিনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে পুতিনের নিশ্চয়তা দেয়া পুরোপুরি দুর্ভেদ্য নয়। রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্দশা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করছে।
রাশিয়ার বামপন্থি ক্রেমলিন সমালোচক সের্গেই উদালতসভ বুধবার ইউটিউবে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, আপনি কী আমৃত্যু পুতিনকে দেখতে চান? পুতিন ও তার ক্রেমলিন ব্যান্ডের শাসনাধীন অবস্থায়ই মরতে চান? উদালতসভ জানান, তিনি জনগণকে ভোট বর্জনের বদলে সংশোধনীটির বিপক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাতে প্রস্তুত। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা ভোট দিতে ইচ্ছুক না। কিন্তু মালোফিভ একটি চমকপ্রদ সপ্তাহ পার করেছেন। তিনি ক্রেমলিনের সমর্থক অভিজাতদের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট রক্ষণশীল। পুতিনের পক্ষে ডানপন্থিদের মধ্যে সমর্থন গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে, ইউক্রেনে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়নের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন অবশ্য।
মালোফিভ বলেন, এটাই শেষ নয়। ২০৩৬ সালে পুতিনের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবে পরিণত হলে, প্রত্যাশিত ভবিষ্যতে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রস্তাবও উত্থাপিত হতে পারে।
(নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে)