বাংলাদেশে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বেড়ে গেছে মাস্ক-স্যানিটাইজারের চাহিদা৷ দেখা দিয়েছে অপ্রতুলতা৷ অনেক জায়গায় পাওয়া গেলেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা৷
বাংলাদেশে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সংকটের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷ ঢাকায় আল নূর ও সাফাবি নামের দুইটি ফার্মেসি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে একটিকে জরিমানাও করা হয়েছে৷
অভিযানের পর অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি রাখি৷ তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্রেতার কাছে মাস্কের দাম বেশি রাখে৷ এসব তথ্য আমরা ভিডিওতে ধারণ করেছি৷ পরে আমরা যখন তাদের কাছে মাস্ক কিনতে যাই তখন তারা বলে মাস্ক নেই৷ অথচ এর আগে তারা বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করেছে৷ যার প্রমাণ অধিদপ্তরের কাছে রয়েছে৷ এ অপরাধে ফার্মেসি দুটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে৷’’
কৃত্রিম সংকট যারা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ সবার মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই৷ শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললেই হবে৷ তারপরও মানুষ এসব জিনিস কিনতে ছুটে যাচ্ছেন৷ এসব বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি হয়েছে৷ আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছি৷ পাশাপাশি সরকারিভাবে মাস্ক ও স্যানিটাইজার পর্যাপ্ত পরিমানে মজুত রাখারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷’’
রোববার দেশে তিনজনের শরীরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সংবাদের পর থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঢাকার মানুষ৷ সোমবার পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারি স্যানিটারি পণ্য বিক্রির মার্কেটে একাধিক দোকানে গিয়েও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি৷ বিক্রেতারা বলছেন, রাতেই সব পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে৷ অনেক ফার্মেসি মালিক ফোনে অর্ডার দিয়ে ভোরে মালামাল নিয়ে গেছেন৷
শাহবাগের ঔষধ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে চাহিদা অনেক, কিন্তু সরবরাহ নেই৷ বেশি দামে বিক্রি তো দূরে, আমরা বিক্রিই করতে পারছি না৷” বাজারে বর্তমানে দেশীয় বেশ কয়েকটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ পাশাপাশি বিদেশি স্যানিটাইজারগুলোরও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে৷
মিরপুরে শেওড়াপাড়ার নাজ ফার্মেসির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘দাম বাড়বে বলে গুজবে লবণের বেলায়ও মজুত করতে দেখা গেছে৷ এখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে ঔষধের দোকান থেকে মাস্ক ও হেক্সিসলের মতো জীবাণুরোধী জিনিসের ওপর সাধারণ মানুষ যেন হামলে পড়েছে৷ এর মধ্যে মাস্কের দাম অন্তত ১০ গুন বেড়ে গেছে, যদিও এ মুহূর্তে ঔষধের দোকানে মাস্ক পাওয়াই যাচ্ছে না৷’’
মানুষের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘এটার যেহেতু প্রতিষেধক নেই তাই আমাদের সচেতন হতে হবে৷ কিন্তু এটাতে মৃত্যুর হার খুবই কম৷ ফলে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতনতাই প্রধান৷ এই মুহূর্তে জনসমাগমপূর্ণ এলাকাগুলোতে না গেলেই হয়৷ পাবলিক পরিবহন এড়াতে পারলে ভালো৷ তবে এসব করতে গিয়ে ঘরে বসে থাকার দরকার নেই৷ সচেতনভাবে এই কাজগুলো করতে হবে৷’’
সরকারের প্রস্তুতি কেমন, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে যা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটা খারাপ না৷ প্রয়োজন হলে আরো নেওয়া হবে৷ এই মুহূর্তে দুটি হাসপাতাল আলাদাভাবে রাখা হয়েছে৷ মানুষকে সচেতন করতেও বিভিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে৷’’
এদিকে আক্রান্ত তিন জনের অবস্থা ভালো বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা৷ তিনি বলেন, ওই তিনজনকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ দেশে নতুন করে আর কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়নি৷
তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে আসায় ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম৷ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম৷ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব৷