বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। তারা সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে। তারা অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রগতিশীল প্রেসিডেন্ট, বারাক ওবামা, নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকেই।
কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সবসময় এরকম ছিল না। অতীতে ডেমোক্র্যাট পার্টি ছিল শ্বেত সন্ত্রাসের আস্তানা, দাসপ্রথার সমর্থক। কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংঘটন কু ক্লাক্স ক্ল্যানের প্রতিষ্ঠাতেও ছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইন্ধন। বর্ণবাদী শ্বেত সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কীভাবে বারাক ওবামার পার্টিতে পরিণত হলো, তা নিয়েই আমাদের এবারের আলোচনা।
বিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আসলেন প্রাক্তন আর্মি জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। জ্যাকসন সেই সময়কার মার্কিন রাজনীতির ভিত্তি ও রাজনীতিবিদদের মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করলেন। তার সমালোচকরা তাঁকে ‘জ্যাকএজ’ (Jack-ass) বলে হাসি-ঠাট্টা করা শুরু করলো। জ্যাকসন সমালোচনায় প্রভাবিত হলেন না, বরং জ্যাক বা গাধাকে তার দৃঢ় চিত্তের প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখা শুরু করলেন। সেসময়ের পত্রপত্রিকাগুলোও গাধার ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে জ্যাকসন ও তার অনুসারীদেরকে ফুটিয়ে তুলতে শুরু করলো।
‘গাধা’ প্রতীক নিয়েই ১৮২৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। জ্যাকসনের অনুসারীরা নির্বাচনের মাধ্যমেই রায় দিলো, তারা আগের রাজনৈতিক এলিটদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তার মতাদর্শের সঙ্গে তখনকার চলমান রাজনৈতিক মতাদর্শে অনেক ফারাক থাকায় জ্যাকসনের অনুসারীরা নিজেদের একটি আলাদা রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করলো। নিজেরকে একটি নতুন নাম দিলো, ‘ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’। প্রতীক হিসেবে নেয়া হলো ‘গাধা’।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ক্ষমতায় আসামাত্রই আদিবাসীদের বিতাড়িত করতে শুরু করলেন। ১৮৩০ সালে জ্যাকসন ‘ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্ট’ এ স্বাক্ষর করলেন (হাজার বছরের পুরনো অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও শ্বেতাঙ্গরা আদিবাসীদের আমেরিকান ভাবতো না, তাদের ডাকতো ‘ইন্ডিয়ান’ বলে)। এই বিলের মাধ্যমে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি বড় গোত্রকে জোরপূর্বক তাদের পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেয়া হয়। তারা পশ্চিমাঞ্চলে বসতি গাড়তে বাধ্য হলো, যেখানে তখনো সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি।
আমেরিকা-মেক্সিকো যুদ্ধ
ডেমোক্র্যাটরা এখানেই থেমে যায়নি। চল্লিশের দশকে তারা একটি নতুন মতবাদ সামনে নিয়ে আসলো। ‘ডক্ট্রিন অব ম্যানিফেস্ট ডেস্টিনি’; যে মতবাদের আলোকে তারা বিশ্বাস করতো, পুরো উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মালিকানাই শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের। এবং তা ঈশ্বর-প্রদত্ত।
শিল্পীর তুলিতে মেক্সিকো-আমেরিকা যুদ্ধ; Source: The National Interest
পুরো উত্তর আমেরিকা মহাদেশ শাসন করার তৃষ্ণা জেগে উঠলো ডেমোক্র্যাটদের। সেই তৃষ্ণা থেকেই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোলক যুদ্ধ ঘোষণা করলেন মেক্সিকোর বিরুদ্ধে। মেক্সিকোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলো টেক্সাস, অরিগন, নেব্রাস্কাসহ বেশ কিছু প্রদেশ। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ প্রদেশই তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে এই যুদ্ধের মাধ্যমে।
যুদ্ধের পরপরই বিজিত প্রদেশগুলোয় দাসপ্রথার প্রবর্তন করা হবে কি না সেটা নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। ডেমোক্র্যাটরা প্রবর্তন করার পক্ষে রায় দেয়, কেননা তাদের ঘাটি হচ্ছে দাসপ্রধান দক্ষিণা প্রদেশগুলো। তারা এই মর্মে নতুন আইনও জারি করে।
ঐতিহাসিক গৃহযুদ্ধ ও দাসপ্রথা বিলোপ
অচিরেই মার্কিন রাজনীতিতে ‘রিপাবলিকান পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আগমন ঘটে। ১৮৬০ সালে তারা প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জিতেও যায়। আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে রিপাবলিকানরা দাসপ্রথা বিলোপ করার কথা বলতে শুরু করে। ডেমোক্র্যাটরা ১১টি দক্ষিণা প্রদেশ নিয়ে উত্তরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে যখন দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন রিপাবলিকান পার্টি দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গদের চোখে বিষফোড়া হয়ে উঠে। ডেমোক্র্যাটরা হয়ে ওঠে দক্ষিণের একমাত্র রাজনৈতিক দল।
বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন: প্রগতিশীল চিন্তাধারার উন্মেষ
বিংশ শতাব্দীতে এসে মার্কিন রাজনীতির ধারাপাত বদলাতে শুরু করে। দুই রাজনৈতিক দলেই ধনী ব্যবসায়ীদের সমারোহ বাড়তে থাকে। রাজনীতিও তাদের মুনাফা উপার্জনের একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলোও সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে সমাজের ধনাঢ্য শ্রেণীর অভিপ্রায় পূরণ করতে লাগলো।
ফলে কিছু সংস্কারক ‘প্রোগ্রেসিজম’ নামে নতুন একটি মতবাদ সবার সামনে তুলে ধরলো। এই মতবাদের মাধ্যমে সংস্কারপন্থীরা বলার চেষ্টা করলো, সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের দমন করার জন্য সোচ্চার হওয়া। অল্প সংখ্যক ধনাঢ্য ব্যক্তির চাটুকারিতা না করে সাধারণ জনগণ নিয়ে ভাবা। প্রথমে দুই দলেই সংস্কারপন্থী প্রগতিশীলরা ছিল। কিন্তু ডেমোক্র্যাট উড্রো উইলসন প্রথম প্রগতিশীল হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ১৯১২ সালে। নির্বাচিত হওয়ার পর উইলসন সেসময়ের অধিকাংশ প্রগতিশীল এজেন্ডাকে আইনেও পরিণত করেন।
উড্রো উইলসনের সময় থেকেই ডেমোক্র্যাট পার্টি প্রগতিশীল দল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শুরু করলো। আর রিপাবলিকান পার্টি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের পার্টি হিসেবে পরিচিত হতে লাগলো।
ত্রিশের দশকের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেমোক্র্যাটদের এই পরিচিতিকে একদম পাকাপোক্ত করে দেয়। ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন’ মোকাবেলা করার জন্য ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট তার সরকারের আকার ও কর্তৃত্ব বাড়াতে শুরু করেন। অর্থনৈতিক ভগ্নদশা মোকাবেলার জন্য রুজভেল্ট মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্থানীয় সরকার প্রকল্প হাতে নেন, যার নাম দেয়া হয় ‘নিউ ডিল’।
রুজভেল্ট চার মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গ্রেট ডিপ্রেশন মোকাবেলা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জন্য তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একজন হিসেবে দেখা হয়।
সিভিল রাইট অ্যাক্ট ও ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি
ষাটের দশকে মার্টিন লুথার কিং, ম্যালকম এক্সদের নেতৃত্বে আমেরিকা জুড়ে শুরু হয় নাগরিক অধিকার আন্দোলন। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছিলো সারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীলরা। আর দাসপ্রথা বিলোপ আইনের মতো এখানেও বিরোধিতা করছিল দক্ষিণাঞ্চলীয় শ্বেতাঙ্গরা।
দক্ষিণাঞ্চলের বিরোধের মুখে ১৯৬৪ সালে পার্লামেন্টে ‘সিভিল রাইট অ্যাক্ট’ বা ‘নাগরিক অধিকার আইন’ উত্থাপন করে ডেমোক্র্যাট সরকার। এই বিল পাশ হয় এবং ঐতিহাসিক এই বিলে স্বাক্ষর করেন ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন। এই আইনের ফলে দক্ষিণের কৃষ্ণাঙ্গরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার পায়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাদের বর্ণবাদী অতীতকে পিছনে ফেলে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মন জয় করে নেয়।
‘সিভিল রাইট অ্যাক্ট ১৯৬৪’-তে সাক্ষর করছেন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন; Source: Time Magazine
তবে এই নাগরিক অধিকার আইন পাশ করানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের উপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয় দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গরা। তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে পরিত্যাগ করে। যে পার্টির ঘাটি ছিল দক্ষিণাঞ্চল, সেই পার্টি হঠাৎ করেই দক্ষিণে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। এর প্রভাব পড়ে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনগুলোতে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি টানা প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন হারতে থাকে, তা-ও আবার বিশাল বিশাল ব্যবধানে। লিন্ডন জনসনের পর ডেমোক্র্যাটরা ৬টি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে মাত্র একবার বিজয়ী হয়েছে, সেটিও ছিল আবার নিক্সন পরবর্তী নির্বাচন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্য রিপাবলিকান পার্টি সেময় দেশবাসীর রোষানলে ছিল, যে কারণে ১৯৭৭ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়লাভ করতে পেরেছে।
অভিবাসী বিপ্লব: মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাটদের ফিরে আসা
একটা সময় মনে হচ্ছিলো, ডেমোক্র্যাটরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাবে। কিন্তু গত শতাব্দীর শেষভাগে সংখ্যালঘু ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক ঘোড়দৌড়ে ফিরিয়ে আনে।
গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে আমেরিকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা ভিড় করতে শুরু করে। বর্তমান আমেরিকায় মোট ভোটারদের একটি বড় অংশ অভিবাসী। বিশেষ করে হিসপ্যানিক ভোটারদের সংখ্যা গত কয়েক দশকে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এছাড়া গত শতাব্দীর শেষের দিকে আমেরিকার তরুণ প্রজন্ম প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী হতে শুরু করে। বহু বছর রক্ষণশীলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পর প্রগতিশীল কোনো রাষ্ট্রনায়কের উত্থান হওয়াটা তাই সময়ের দাবি ছিল। আর সেই দাবি থেকেই বিল ক্লিনটনের উত্থান। ক্লিনটন এতটা প্রগতিশীলও ছিলেন না। তিনি ছিলেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট। কিন্তু রিগান-বুশ পরবর্তী যুগে ক্লিনটনের মধ্যপন্থাই আমেরিকাকে দিয়েছিল লিবারেল বা উদারনৈতিক রাজনীতির সুবাতাস। ডেমোক্র্যাট পার্টি যে দিন দিন বামে সরে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছিল ক্লিনটনের কাছ থেকেই।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সত্যিকার অর্থে আমেরিকাকে বিস্মিত করে ২০০৮ সালে। প্রগতিশীলতা ও পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে ঝড়ের গতিতে আমেরিকান রাজনীতিকে জয় করে নেন বারাক ওবামা। শ্বেতাঙ্গদের আবাস ‘হোয়াইট হাউজ’ এ প্রবেশ করেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে। যে সংগঠনের জন্মই হয়েছিল বর্ণবাদ ও শ্বেত সন্ত্রাসের উপর ভিত্তি করে, তারাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করে ইতিহাস গড়লো।
ওবামার লিগ্যাসি
ওবামা ছিলেন প্রচলিত ধারার ডেমোক্র্যাটদের থেকে আলাদা। পরিবর্তন ও আশার বাণী দিয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। আট বছরের শাসনামলে ছুঁয়েছেন অনেক রাজনৈতিক মাইলফলক। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় চলাকালীন সময়ে অফিসে অধিষ্ঠ হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওবামার যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি গ্রেট ডিপ্রেশনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে।
প্রায় একশ বছর ধরে আমেরিকান রাজনীতিবিদরা পরিকল্পনা করে আসছিলেন একটি সার্বজনীন হেলথ কেয়ারের। আমেরিকানদের সেই হেলথ কেয়ারের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ওবামা। ঐতিহাসিক সমলিঙ্গ বিবাহ আইনও পাশ হয়েছে তার সময়েই। পররাষ্ট্রনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাতেও ওবামা সৃষ্টি করেছেন নতুন মাইলফলক।
বার্নি স্যান্ডার্স ও আমেরিকায় বাম রাজনীতির উন্মেষ
২০১৬ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লড়াইয়ে হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একজন স্বল্পপরিচিত ডেমোক্র্যাট, বার্নি স্যান্ডার্স। বার্নি একজন স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট। ২০১৬ সালে বার্নি যখন নির্বাচন করার ঘোষণা দেন, তখন ৭৬% আমেরিকান তার নামই জানতো না। কিন্তু এই বামপন্থী রাজনীতিবিদ কিছু মৌলিক ইশতেহার আমেরিকানদের সামনে তুলে তাদের সমাজতন্ত্রের প্রতি থাকা প্রচলিত ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেন। সবার জন্য ফ্রি মেডিকেয়ার, বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষা, সামরিক খাতে বাজেট হ্রাস, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, সমাজের উঁচু শ্রেণীর ট্যাক্স বৃদ্ধিসহ তার সব নীতিনির্ধারণীই ছিল প্রলেতারিয়েতবান্ধব। তিনি এক রাজনৈতিক অভ্যুত্থানেরও ডাক দেন, যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে।
যদিও বার্নি নমিনেশনের দৌড়ে হিলারির কাছে হেরে যান, তবে তার ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিজমের স্বপ্ন অনেক আমেরিকানের মনেই দাগ কেটে যায়। তার উদারনৈতিক নীতিনির্ধারণী মার্কিন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি বড় প্রভাব ফেলছে বর্তমান সময়ে। গত দুই-তিন বছরের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে তার ঘরানার একদল লিবারেল রাজনীতিবিদের উন্মেষ ঘটেছে, যারা কেউই কর্পোরেট লবিং গ্রহণ করে না এবং কম-বেশি বার্নির মতবাদে বিশ্বাস করে। বলা বাহুল্য, এই অল্প সংখ্যক প্রোগ্রেসিভ লিবারেলরাই এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ।
সম্প্রতি শেষ হওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনেও এই প্রোগেসিভদের জয়জয়কারই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে তাদের মধ্যে একজনই হয়তো পেতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়ন। ভবিষ্যতে বার্নি স্যান্ডার্সের মতো একজন প্রোগ্রেসিভ লিবারেলকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যাবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই সময়ে প্রোগ্রেসিভ লিবারেলিজমের জনপ্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে, ডেমোক্র্যাট পার্টি সম্ভবত আমেরিকার প্রথম বামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে।