ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো হিজাব পরে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি আপসানা বেগম। বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে দেওয়া প্রথম ভাষণের সময় তিনি মাথায় হিজাব পরা ছিলেন। ভাষণে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের শ্রমজীবী শ্রেণির অধিকারের জন্য সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কাজ করবেন।
লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছেন আপসানা বেগম। তিনি পূর্ব লন্ডনের পপলার-লাইমহাউস সংসদীয় আসন থেকে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন। বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রথম ভাষণ দেন তিনি। যুক্তরাজ্যের নারী ও সমতাবিষয়ক মন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাস এই বিতর্কের প্রস্তাব করেন। ভাষণে তিনি তার জন্ম নেওয়া এলাকায় দৃঢ় সামাজিক পদক্ষেপের ইতিহাসের কথা তুলে ধরেন।
আপসানা বেগম বলেন, এটি সমাজতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সংহতি ও পদক্ষেপে রয়েছে যা আমি আজ এই চেম্বারে তুলে ধরছি। প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারী হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছি। এখন আমি প্রথম হিজাব পরে ভাষণ দেওয়া এমপি।
লেবার এমপি বলেন, পার্লামেন্টে আমার অনেক সহকর্মীর মতো আমরা ব্যক্তিগত পথচলা সহজ ছিল না। কিন্তু এখন নারীদের অধিকার ও সমতার জন্য আমার দলের প্রগতিশীল ভূমিকার জন্য আমি গর্বিত। আমি এটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি বলেন, গত দশকে যাদের ইসলামবিদ্বেষের উত্থান সরাসরি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা জানেন নির্দিষ্টভাবে বর্ণবাদ, ইসলামবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে চলেছে। সরকার বিভাজনের রাজনীতির ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে এবং অভিবাসীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আমি সব সময় আমার সংসদীয় আসনের বৈচিত্র্য, বহু সংস্কৃতি, নানা বর্ণ ও ধর্মের মানুষের পাশে আছি। এর মধ্যে অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে আন্দোলনও রয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের কাঁধে দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুভব করছেন জানিয়ে আপসানা বেগম বলেন, যে ভেঙে পড়া অর্থনীতি শুধু মুষ্টিমেয় মানুষকে সেবা দিচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠকে বঞ্চিত করে সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা লড়াই করে গেছেন তাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস ও শক্তি দিয়ে লড়াই করে যাব।
ভাষণে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য সরকারের নির্মম ব্যয় সংকোচন ও বাজেট কমানোর তীব্র সমালোচনা করেন।
নিজের সংসদীয় আসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ক্ষুব্ধ যে দেশে সবচেয়ে বেশি শিশু দারিদ্র্যের হার আমাদের রয়েছে। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রে দোরগড়ায় আমাদের অবস্থান। যে ভালো অবস্থা আমাদের শিশুদের হওয়ার কথা তা না হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অগ্রহণযোগ্য। আমি আরও ক্ষুব্ধ একারণে যে, আমার আসনের এক-পঞ্চমাংশ মানুষ বেঁচে থাকার মজুরির চেয়ে কম পাচ্ছে। আমি ক্ষুব্ধ কারণ আমাদের আবাসন সংকটে পড়তে হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই সংকটে মাসিক ভাড়া আরও বাড়তে যাচ্ছে। ফলে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
আপসানা বেগম আরও বলেন, সত্য হলো আরও অনেক কিছুই করতে হবে। পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস এলাকায় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষের হার অনেক বেশি। অন্যায় যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদের চেয়ে আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে প্রগতিশীল বৈশ্বিক ভাবনা ধারণ করতে হবে।
ভাষণে তিনি তার সংসদীয় আসনে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, ১৯৮০-র দশকে টাওয়ার হ্যামলেটসে অন্তত দুই বাঙালি নারী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে আহ্বানে বাংলাদেশি নারীরা এলাকায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে অনুপ্রেরণা পেয়েছিল।
আপসানা বেগম বলেন, আমরা যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে বিতর্ক করছি, যে দিবসটি শ্রমজীবীদের ইতিহাসের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। আমার সংসদীয় আসনে সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য নারীদের মহান সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই। আমি ইস্ট এন্ড থেকে আসা যেখানে শ্রমজীবীদের গর্বের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করার, যেখানে কম মজুরি পাওয়া নারী শ্রমিকরা প্রায়ই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সামনের সারিতে ছিলেন।