করোনা আতঙ্ক কমার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এশিয়ায় ভাইরাস আরও ছড়াচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ইউরোপে আতঙ্ক আরও বাড়ল। ইটালিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭। অ্যামেরিকায় আক্রান্ত একশরও বেশি মানুষ। ভারতে এই মুহূর্তে আক্রান্ত ২৯। ইরানে আক্রান্ত দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
করোনার সঙ্গে লড়াই করতে আগেই বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল অ্যামেরিকার ট্রাম্প সরকার। বুধবার দেশের কংগ্রেস ৮৩০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে তা পাশ হয়ে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। কারণ, অ্যামেরিকায় করোনার প্রকোপ ক্রমশ ছড়াতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে একশ। তবে এই মুহূর্তে সব চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ইটালিতে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৯। বুধবার তা এক লাফে ১০৭ এ পৌঁছে গিয়েছে। উত্তর ইটালির বহু স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জন সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সকলকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটালিতে বসবাসকারী এক ভারতীয় গবেষকের বক্তব্য, ”গত এক সপ্তাহ ধরে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে বসে আছি। বাজারে যাওয়া ছাড়া বেরতে পারছি না। প্রবল আতঙ্ক কাজ করছে সকলের মধ্যে। ইটালি ছেড়ে যে দেশে ফিরে আসব, সে উপায়ও নেই। বিমানবন্দর কিংবা রেলওয়ে স্টেশনে যেতেও ভয় করছে।”
ইরানে করোনায় আতঙ্কের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২৩ জন সাংসদ সেখানে করোনা আক্রান্ত। তার মধ্যে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্টও আছেন। তারই মধ্যে সে দেশে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলেছে। অস্ট্রেলিয়াও জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সে দেশে করোনায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৫২। বিভিন্ন দেশে যাতায়াতের বিষয়ে আরও কড়া নিয়ম জারি করেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও জাপান অলিম্পিক পিছোতে রাজি হচ্ছে না। আগামী জুলাই মাসে সেখানে অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা। সে দেশের অলিম্পিক মন্ত্রীর বক্তব্য, অলিম্পিক বাতিল করলে কিংবা পিছিয়ে দিলে ক্রীড়াবিদরা তা মেনে নিতে পারবেন না। চার বছর ধরে তাঁরা নিজেদের অলিম্পিকের জন্য তৈরি করছেন। যদিও জাপানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বহু দেশ। তাদের বক্তব্য, করোনা যদি এ ভাবেই সংক্রমিত হতে থাকে, তা হলে অলিম্পিকের মতো বড় সমাগম পিছিয়ে দেওয়াই উচিত হবে।
ভারতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আরও একজনের শরীরে ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বুধবারেই ঘোষণা করে দিয়েছেন তাঁদের হোলি উৎসব এ বছর হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, ইরাকে আটকে থাকা ভারতীয় ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ চিকিৎসক দল পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রশাসনও জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য চরটি ধাপের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে একজনের শরীরেও করোনার জীবাণু মেলেনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। এখনও পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩৮ জন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৫। এ দিকে শুধু চীনেই বুধবার মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। যার জেরে সে দেশে মোট করোনা মৃত্যু তিন হাজার ছাড়িয়ে গেল। আক্রান্ত ৮০ হাজার ৪০৯ জন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই, এএফপি)