বাবা চেয়েছিলেন নিজে ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর সফল হয়নি। তাই ছেলেকে প্রথমে ক্রিকেটার বানানোর চেষ্টা করেন সঞ্জীব শর্মা। যে দিন ছেলেকে নিয়ে প্রথম কোচিং ক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন তিনি, সঙ্গী ছিল মেয়ে শেফালিও। ভাই অনুশীলন করে গিয়েছে, আর ছোট্ট শেফালি বল কুড়িয়ে দিয়েছে। বেশ কয়েক ঘণ্টা এ রকম চলার পরে মেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘‘বাবা, আমি কি একটু ব্যাট করব?’’ বাবা অনুমতি দিয়েছিলেন।
সে দিনই প্রথম ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিল খুদে শেফালি। সেই ব্যাট এখন ঝড় তুলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। শেফালিকে করে দিয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। আইসিসির যে র্যাঙ্কিং বুধবার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৭৬১ পয়েন্ট পেয়ে এক নম্বরে আছে ভারতের ষোলো বছরের কিশোরী শেফালি। দুইয়ে নিউজ়িল্যান্ডের সুজি বেটস।
বিশেষজ্ঞরা মুগ্ধ শেফালির শটের শক্তি আর বৈচিত্রে। যে শটের নমুনা অনেক দিন আগেই টের পেয়েছিল রোহতকের ছেলেরা। কী ভাবে ছেলেদের ক্রিকেটেও দাপট দেখিয়েছিলেন তিনি, তা আইসিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন শেফালি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এক বার ছেলেদের ক্রিকেটে খেলে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলাম।’’ কী ভাবে, জানা যায় শেফালির কথায়। তাঁর ভাইয়ের ওই প্রতিযোগিতায় খেলার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভাই যেতে পারেনি। তখন বাবাকে বলে সেই প্রতিযোগিতায় খেলতে চলে যান শেফালি। ভাইয়ের টি-শার্ট পরে গিয়েছিলেন তিনি। চুল ছিল ছোট করে ছাঁটা। যার ফলে কেউ তাঁকে মেয়ে বলে বুঝতে পারেনি। শেফালিও চুটিয়ে ব্যাট করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার জিতে নেন।
মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলতে কতটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল? শেফালি বলেছেন, ‘‘খুবই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ছেলেরা আমাকে খেলতে নিত না। মেয়েদের জন্য কোনও অ্যাকাডেমি খুঁজে পাইনি। বাবাকে বলে চুল ছোট করে নিয়েছিলাম। পরে অনেক কষ্টে মেয়েদের অ্যাকাডেমি খুঁজে খেলা শেখা শুরু করি।’’
এখন পর্যন্ত ১৮টি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে ৫৮টি চার এবং ২১টি ছয় মেরেছেন শেফালি। কিছু দিন আগে পর্যন্ত শেফালির সঙ্গী ওপেনার স্মৃতি মন্ধানাকে সব চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা হত। সেই স্মৃতিও এখন শেফালির ছায়ায়। ইংল্যান্ডের স্পিনার অ্যালেক্স হার্টলি বলেছেন, ‘‘যখন প্রথম মন্ধানাকে দেখি, ভেবেছিলাম ওর চেয়ে জোরে বল আর কেউ মারতে পারে না। কিন্তু এর পরে শেফালি এল। এখন মনে হচ্ছে মন্ধানার ব্যাটিংটা ঘুমপাড়ানি। অবিশ্বাস্য সব শট খেলে শেফালি।’’
শেফালির ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছেন স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগরাও। দিন কয়েক আগে সহবাগ টুইট করেছিলেন, ‘‘শেফালি বর্মা তো পুরো রকস্টার।’’ ভারতের জয়ের পরে সচিন টুইট করেছিলেন, ‘‘শেফালি দারুণ সব ইনিংস খেলে চলেছে।’’ সচিনকে দেখেই ক্রিকেট খেলবেন বলে ঠিক করেন শেফালি। বাবার কাঁধে চেপে দেখেছিলেন রোহতকে সচিনের ইনিংস। পরে সচিনের সঙ্গে একটি ছবি টুইট করে শেফালি লিখেছিলেন, ‘‘আমি ক্রিকেটে এসেছি সচিন স্যরকে দেখেই। আমাদের পুরো পরিবারের কাছেই সচিন স্যর প্রেরণা। আজ সেই কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা হল।’’
সে দিনের সেই শেফালি আজ নিজেই অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।