নিজের কাছে এক সময় জেলা পুলিশের চেয়েও বেশি অস্ত্র থাকার কথা বলে আবার আলোচনায় এসেছেন শামীম ওসমান৷ তবে একদিন পরই একটি অনলাইন পত্রিকার কাছে নারায়ণগঞ্জের এই আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদের দাবি, আর কোনো অবৈধ অস্ত্র নেই তার কাছে৷
নতুন উপলব্ধির কথা জানাতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আগে মনে করতাম অস্ত্রই শক্তিশালী, কিন্তু এখন বিশ্বাস করি পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহ শক্তিশালী৷’’
রবিবার নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন মাঠে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শামীম ওসমান৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘২০০১ সালের আগে জেলা পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র না ছিল, তার থেকে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল৷” অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলার ডেপুটি কমিশারও উপস্থিত ছিলেন৷
সোমবার ওই বক্তব্য নিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি৷ তবে সময়টি হবে ১৯৯১ সাল৷ তখন আমার বয়স ছিল ২২ বছর৷ আমি ভুলে ২০০১ সাল বলে ফেলেছি৷ আমার কাছে তো অস্ত্র ছিল৷ আমরা গোলগুলি, ফাটাফাটি তো করেছি৷ এটা অস্বীকার করবো কিভাবে?’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে৷ তবে তা ২০০১ সাল থেকে আমার সাথে নাই৷’’
শামীম ওসমান সেইঅবৈধ অস্ত্র রাখার পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমরা অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি৷ কারণ, ওই সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়েছে৷ মিথ্যা কথা বলবো না, তখন আমরা অস্ত্র জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছি৷ বঙ্গন্ধুকে মেরে ফেলার পর আমরা মনে করেছিলাম প্রতিশোধটা আমরা হত্যার মাধ্যমে নেবো৷ কিন্তু আমাদের এই ধারণা পরিবর্তন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেছেন, হত্যার মাধ্যমে প্রতিশোধ নয়, আইনের শাসনের মাধ্যমে প্রতিশোধ৷’’
শামীম ওসমানের দাবি, ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসার পর তার আর অস্ত্রের প্রয়োজন হয়নি৷ তাই জমা দিয়ে দেন৷ তিনি জানান, ওই সময় নারায়ণগঞ্জের এসপি ছিলেন মমিন উল্লাহ পাটোয়ারি৷ তখন তিনি ও তার সহযোগীরা পুলিশের কাছে লাইন ধরে, প্যাকেট ভরে সব অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জে ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমা পড়েছে৷ তবে আমাদের অস্ত্র জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছলো কিনা জানি না৷ কারণ, এরপর আমাদের ওপর জুলুম হয়েছে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত৷’’
তিনি বলেন, ‘‘যখন অস্ত্র ছিল, তখন বয়স কম ছিল৷ তখন আমি অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতাম৷ মনে করতাম অস্ত্রই শক্তিশাী৷ কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি অস্ত্র শক্তিশালী না, একজনই শক্তিশালী, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ৷’’
নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের রাজনীতির এখনকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে শামীম ওসমান দাবি করেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জে এখন আর কোনো অস্ত্রের রাজনীতি নেই৷ এখানে সবচেয়ে বেশি শান্তি বিরাজ করছে৷ বিভিন্ন সময়ে আমাদের ৫০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷ জবাবে আমরা একটা ফুলের টোকাও দেইনি৷ আমার ওপরে বোমা হামলা হয়েছে, আল্লাহ বাঁচিয়েছে৷ আর কোনো দলের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই৷ নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসী নয়৷ যারা সন্ত্রাস করে, তারা বহিরাগত৷’’
শামীম ওসমানকে আজকাল বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যেতে দেখা যায়৷ হেফাজতের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা যায়৷ এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের যাতে অপব্যাখ্যা না দেয়া হয় সে কারণে আমি ওয়াজ মাহফিলে যাই৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি খারাপ কিছু খাই না৷ খারাপ কিছু করি না৷ আমি ফেরেস্তা নই, তবে মানুষ হিসেবে যে কাজ করায় নিষেধ আছে তা আমি করি না৷’’
শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক৷ বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য তিনি৷ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এর আগেও দু’বার সংসদ সদস্য ছিলেন৷