২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচন। সামনেই পুরভোট। এই অবস্থায় সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের জনসংযোগ আর প্রচারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার গর্ব মমতা’। প্রচারাভিযানের সূচনার পাশাপাশি আগামী দিনে তৃণমূলের নিচু তলার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভোকাল টনিকও দিয়ে রাখলেন দলের সুপ্রিমো। পাশাপাশি মমতার কথায় উঠে এল দিল্লিতে হিংসার ঘটনার প্রসঙ্গও। ওই ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
এদিন নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি অবশ্যই ‘দিদিকে বলো’-র পর তৃণমূলের নতুন প্রচারাভিযান ‘বাংলার গর্ব মমতা’। ২ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ৭৫ দিন ধরে রাজ্যজুড়ে চলবে তৃণমূলের এই জনসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি। এই ৭৫ দিনে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে কর্মসূচি সফল করার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ সফল করতে ৭৫ হাজারের বেশি দলীয় নেতা ১৫ হাজার এলাকায় পৌঁছে আড়াই কোটি মানুষের মুখোমুখি হবেন। এর জন্য তৃণমূলের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, বুথ থেকে জেলাস্তরের সাংগঠনিক নেতৃত্ব এবং শাখা সংগঠনকে কাজে লাগানো হবে। এই অভিযানের নীল নকশা এঁকেছে ভোট গুরু প্রশান্ত কিশোরের পেশাদার সংস্থা। রূপায়ণের দায়িত্বেও থাকছে তারা।
তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যের দ্বিতীয় ভাগ ছিল দিল্লির হিংসার ঘটনা ও বিজেপির ভূমিকা। প্রথমেই দিল্লির এই ঘটনাটিকে পরিকল্পিত গণহত্যা আখ্যা দেন তিনি। বলেন, ‘দিল্লিতে গুজরাত মডেল প্রয়োগ করা হয়েছে’। এরপর তাঁর প্রশ্ন, উস্কানি যাঁরা দিয়েছেন তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? এই সূত্রে দোল, রামনবমীর সময় প্ররোচনায় পা না দেওয়ার জন্য দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। পাশাপাশি দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করতে হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। রাজধানীতে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে আর্থিক সাহায্যের জন্য তহবিল তৈরির ঘোষণাও করেছেন।
অন্যদিকে, সংশোধিত নাগরিক আইন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘অমিত শাহ উদ্বাস্তুদের অপমান করছেন। আপনি নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছেন। ভূমিপুত্রদের ক্ষমতা দেবেন, আমরা ভূমিপুত্র নই? আমাদের কী এনআরসি করে তাড়াবেন?’ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে রাজ্যে বাংলার লোকদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল কলকাতায় অমিত শাহর সভায় আসা বিজেপি সমর্থকদের বিতর্কিত ‘গোলি মারো’ স্লোগান দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘তাঁদের এই ভাষাটা দানবিক। যাঁরা বলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
বক্তব্যের তৃতীয় ভাগে দলের নেতা-কর্মীদের সমঝে চলার বার্তা দেন নেত্রী। স্পষ্ট বলেছেন, ‘তৃণমূলে লবি হয় না। যাঁরা এসব করছেন দল তাঁদের ছেড়ে কথা বলবে না’। দলের পুরনো ও নতুনদের মিলে মিশে কাজ করার বার্তা আরও একবার দিয়েছেন মমতা। কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও যেন কোনও নেতা-কর্মী আইন হাতে তুলে না নেন। পরিশেষে আশ্বাস দিয়েছেন, ভালো কাজ করলে ভোটে তাঁর টিকিট পাওয়া নিশ্চিত।