ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রেশ না কাটতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ (রবিবার) কলকাতায় গিয়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন।
দিল্লির দাঙ্গার জন্য বিরোধীরা অনেকেই তার দিকে সরাসরি আঙুল তুলছেন, কিন্তু কলকাতার এক জনসভায় অমিত শাহ সে ব্যাপারে একটি শব্দও খরচ করেননি।
বরং তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে।
এর আগে সারাদিন বামপন্থী ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কলকাতার নানা প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় ও তাকে কালো পতাকাও দেখানো হয়।
দিল্লিতে যে ভয়াবহ দাঙ্গায় ইতিমধ্যেই অন্তত ৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে, তার জন্য দাঙ্গাপীড়িত মানুষজন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এক বাক্যে দায়ী করছে দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তাকেই।
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এই পুলিশ বাহিনী অমিত শাহর অধীনে কাজ করে, কাজেই এই দাঙ্গার দায় অনেকটাই বর্তাচ্ছে তার ওপরে।
ফলে যখন নানা সরকারি ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে তিনি যখন কলকাতায় পা রাখেন, তখন গোটা শহর ছিল তার সফরের প্রতিবাদে উত্তাল।
বিমানবন্দর থেকেই তাকে কালো পতাকা দেখাতে থাকেন বামপন্থী নেতা-কর্মীরা।
‘দিল্লির খুনি’ বলে তাকে চিহ্নিত করে শহরে পোস্টার পড়ে - স্লোগান ওঠে ‘গো ব্যাক অমিত শাহ’।
এয়ারপোর্টের সামনে একজন মহিলা বিক্ষোভকারী বলছিলেন, “খুনি অমিত শাহ আজ এখানে পা রেখে বাংলার মাটকে অপবিত্র করছে।”
“আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছি।”
এই বিক্ষোভ প্রতিবাদে সামিল ছিল মূলত বামপন্থী ও কংগ্রেসিরাই - পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকে সেখানে দেখা যায়নি।
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম তাই বলছিলেন, অমিত শাহের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির ইতিমধ্যেই ‘গোপন আঁতাত’ হয়ে গেছে।
মহম্মদ সেলিমের কথায়, “অমিত শাহকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মানি না। তিনি দেশের অনিষ্টমন্ত্রী হয়েছেন।”
“আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একটা সময় নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এত জোরে প্রতিবাদ করছিলেন। অথচ তিনি তো এখন ভুবনেশ্বরে গিয়ে অমিত শাহর সঙ্গে কী কথা বলে এলেন, এখন তো স্রেফ চিঁ চিঁ করছেন!”, বলছিলেন মি সেলিম।
বামপন্থীরা কলকাতার নানা প্রান্তে যেরকম তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, বহুদিন তাদের তরফে সেরকম জোরালো কর্মসূচি চোখে পড়েনি।
তবে এই সব বিক্ষোভ-প্রতিবাদের কোনও আঁচ যে তার ওপর পড়েছে, শহীদ মিনারের জনসভায় অমিত শাহ অবশ্য সে কথা মোটেও বুঝতে দেননি।
দিল্লির প্রাণঘাতী দাঙ্গা নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনও অনুতাপের চিহ্নও দেখাননি তিনি।
বরং যে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত, মোদী সরকার যে তা বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করছে সে কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী লক্ষ কোটি শরণার্থীকে নাগরিকত্বের পুরস্কার দিয়েছেন। এই আইনের যারা বিরোধিতা করছেন, তাদের কান অবধি যাতে পৌঁছয় এত জোরে বলুন ‘ভারতমাতা কি জয়’!”
নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জিই বরং ‘ট্রেন জ্বালিয়ে’ ও ‘দাঙ্গা বাঁধিয়ে’ হিংসায় উসকানি দিচ্ছেন বলে অমিত শাহ পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
আর বিজেপি বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের পাশে সব সময় আছে, এরকম বোঝাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে অমিত শাহের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকার রমনা কালীবাড়ির বিগ্রহের একটি ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু সভামঞ্চ থেকে জানান, “শরণার্থীদের বহু দু:খ-দুর্দশার সঙ্গে এই রমনা কালীবাড়ির স্মৃতি জড়িত, তাই সেই কালী ঠাকুরের ছবি আমরা অমিত শাহজীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিলাম।”
দিল্লির দাঙ্গার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে ও নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে আবারো সওয়াল করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় এই বার্তাই দিয়ে গেলেন, তাদের সরকার যে পথে এগোচ্ছে সেখান থেকে এক চুলও সরে আসতে রাজি নয়।