২০১৯ সালে ১৭৪ জন শিক্ষার্থী BYLC লিডারশীপ প্রোগ্রামগুলিতে গ্রাজুশন করেছে
বাংলাদেশ ইউথ লিডারশীপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) গতকাল ২০১৯ এর জন্য তার লিডারশীপ প্রোগ্রামগুলির স্নাতক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বিআইএলসির ১০-সপ্তাহ ব্যাপী “নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিল্ডিং ব্রিজ” (বিবিএলটি) এবং ছয় সপ্তাহের “নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ জুনিয়রের মাধ্যমে বিল্ডিং ব্রিজ” (বিবিএলটিজে) প্রোগ্রাম থেকে মোট ১৭৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক হয়েছে বলে জানিয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্বের, তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা, সমস্যা-সমাধান, এবং যোগাযোগের তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক ধারণা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর দুটি কর্মসূচী জলবায়ু পরিবর্তন, নগরীর নিরাপদ স্থান এবং নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে নিয়ে কাজ করেছে। বিবিএলটি এবং বিবিএলটিজে উভয়কেই নেদারল্যান্ডসের কিংডম দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থায়ন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ বলেন, “দেশের যুবকরা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে এবং একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ গঠনে একত্রে কাজ করার মঞ্চের মঞ্চ এটি।”
এই বক্তৃতায় বিওয়াইএলসির ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ ও বওয়াইএলসির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট এজাজ আহমদ গ্রাজুয়েটের হাতে সার্টীফীকেট তুলে দিচ্ছেন’ /> বলেছিলেঅলেন, একটি সম্প্রদায় বা দেশের যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলি নিয়ে অগ্রগতি অর্জনে নেতৃত্বের কাজ অন্যদের সাথে নিয়ে করা।
বিগত দশকে, বিওয়াইএলসি বিভিন্ন পটভূমির যুবকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে, নেতৃত্বে দক্ষতার সাথে সজ্জিত করতে, তাদের মধ্যে সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য এবং তাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে আটটি কর্মসূচির মাধ্যমে পাঁচ হাজারের বেশি স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং চাকরি ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছেন।
বিওয়াইএলসি সম্পর্কে
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) হলো দেশের প্রথম নেতৃত্ব বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন মাধ্যমের তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, তাদেরকে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি, ও বিভিন্ন নাগরিক খাতে কাজ করতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তাদের সকল প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বের সমাজব্যবস্থায় সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার, এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
লক্ষ্য
একটি সমৃদ্ধ এবং সমতার পৃথিবী গড়ে তোলা যার মূলে থাকবে সাহসিকতা, সহানুভূতিশীলতা এবং যোগ্য নেতৃত্ব।
উদ্দেশ্য
তাদের কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন অবস্থান থেকে উঠে আসা তরুণদের মধ্যে একটি সংযোগ সৃষ্টি করে তাদের নেতৃত্বের গুণকে বিকশিত করা; যাতে তারা সরকারি, বেসরকারি এবং বেসামরিক খাতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।
কেন তারা কাজ করছে
সময়ের সাথে সাথে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই বাংলাদেশ। সেই সাথে আমাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ আর প্রতিবন্ধকতার। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ছাড়াও রয়েছে অস্থির রাজনীতি, বেকারত্ব এবং ব্যাপক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অসমতা। বিওয়াইএলসি’র লক্ষ্য হলো এদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে কার্যকরী নেতৃত্ব চর্চার ধারা তৈরি এবং তাদের মধ্যকার সম্ভাবনাগুলোকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করা। যাতে করে তারা দেশের বিরাজমান সমস্যাগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কাজ করতে পারবে।
বিওয়াইএলসি বিশ্বাস করে “ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব” দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। নেতৃত্ব কোনো পদবী নয় বরং একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে মানুষকে তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করা হয়। এর ফলে ক্ষমতা থাকুক কিংবা না থাকুক প্রতিটি মানুষই নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে। জাতিসংঘের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের ২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের মধ্যম সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বয়স হলো ২৪। সাধারণত এই বয়সটাতে মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা ব্যবহার করার মতন অবস্থানে পৌঁছায় না।তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে তারা দেশের উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না?
তারা মনে করে নেতৃত্ব চর্চার জন্য প্রয়োজন নেই কোন আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব। নারী পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো বয়স কিংবা আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে মানুষ নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা আর সামর্থ্য। বিওয়াইএলসি দেশের তরুণদের জন্য এমন কিছু সুযোগ তৈরি করে দেয় যেখানে তারা নেতৃত্ব চর্চার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। বিওয়াইএলসির এই উদ্যোগের একটি ভিত্তি হলো ভিন্ন আর্থসামাজিক এবং শিক্ষামাধ্যম থেকে উঠে আসা তরুণদের একত্রিত করার মাধ্যমে নেতৃত্ব চর্চায় আগ্রহী করা। এতে করে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মতামত ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করে। নেতৃত্ব চর্চার জন্য এটি একটি অপরিহার্য যোগ্যতা। যেসব বিষয় এদেশের তরুণদের ভাবায় সেসব বিষয় নিয়ে তাদের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে তারা। আর এভাবেই সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চাই ন্যায়পরায়ণ, সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ।
তাদের কৌশল
প্রতিবন্ধকতা ১:
বিভাজন
তরুণদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণে চির ধরা সামাজিক ঐক্য এবং সামাজিক কলহ।
তআদের পদ্ধতিঃ
সহানুভূতি তৈরি করা
ইংরেজি, বাংলা ও মাদ্রাসা। এই তিন শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে বিওয়াইএলসি সকল শিক্ষার্থীদের একটি সার্বজনীন মঞ্চ দিতে চায় যেখানে তারা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়ার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
প্রতিবন্ধকতা ২:
যোগ্যতার অভাব
মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর বর্তমান পাঠ্যসূচী সূক্ষ্ম চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রসার ঘটায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাঁধার সম্মুখীন হয়।
তাদের পদ্ধতিঃ
যোগ্যতা গড়ে তোলা
একটি বাস্তবসম্মত পাঠ্যসূচী অনুসরণের মাধ্যমে বিওয়াইএলসি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সূক্ষ্ম চিন্তা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, দলীয় কাজের গুণাবলি এবং কার্যকরী যোগাযোগের গুণাবলী গড়ে তোলে। ফলে তআদের শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
প্রতিবন্ধকতা ৩:
নেতৃত্বকে ক্ষমতার সাথে মিলিয়ে ফেলা
বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ভুল ধারনা রয়েছে যে নেতৃত্ব শুধুমাত্র ক্ষমতায় থেকেই চর্চা করা যায়। এ কারনে এদেশের জনগণ তাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির উপর নির্ভর করেন।
পদ্ধতিঃ
সাহসিকতা সৃষ্টি
তআরা তআদের পাঠ্যসূচিতে ক্ষমতাসহ কিংবা ক্ষমতা ছাড়া নেতৃত্ব চর্চার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। তআদের শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের উদ্যোগ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করে। তআদের বাস্তবসম্মত পদ্ধতি সার্বিক বাঁধা দূর করার জন্য চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে।
তারা কি করে
নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ
তআরা বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ ধরণের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। অভিজ্ঞ শিখনপদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রোগ্রামগুলোতে বিশ্লেষণধর্মী ভাবনা, সমস্যা সমাধান এবং যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পেশাগত উন্নয়ন
২১ শতকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকুরিবাজারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে বিওয়াইএলসি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য রয়েছে প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
অনলাইন শিক্ষণ
সবার মাঝে নেতৃত্ব শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তআদের প্রচেষ্টার একটি অংশ হলো বিওয়াইএলসিএক্স। এটি একটি অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা নেতৃত্ব ও পেশাগত উন্নয়নের কোর্সগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে।