শীতকালীন ক্রীড়া মানে শুধু বরফের উপর স্কেটিং নয়৷ স্নোবোর্ডিং তার মধ্যে অন্যতম৷ অস্ট্রিয়ার এক নারী এ ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে সবার নজর কাড়ছেন৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে৷
আনা গাসার ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ‘ক্যাব ট্রিপল আন্ডারফ্লিপ’ কসরত দেখিয়ে স্নোবোর্ডিং-এর ক্ষেত্রে ইতিহাস রচনা করেছেন৷ তিনি এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘‘এর আগে কোনো নারী এই সাফল্য পাননি৷ একবার লাফ মারলে আর ফেরার উপায় নেই৷ ঈশ্বরের কৃপায় শূন্যে ভাসা অবস্থায়ও আমার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ছিল৷ লাফানোর সঙ্গে সঙ্গেই জানতাম, আমি ভালো থাকবো৷”
আনা গাসার বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সফল নারী স্নোবোর্ডার৷ অনেক উদ্যোগ ও আবেগের সঙ্গে তিনি অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেরাদের মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছেন৷ আনা বলেন, ‘‘কোনো কিছু ভালো না লাগলে আপনি সেই কাজে ভালো হতে পারেন না৷ নির্দিষ্ট এক মনোভাবের প্রয়োজন৷ কারণ প্রশিক্ষণ ছাড়াই এমন একটি কায়দা পরখ করে দেখতে হবে, যা কতটা নিরাপদ তাও জানা নেই৷ কেউ ধরার নেই, নীচে কোনো ম্যাট নেই৷ তাই নিজেকেই লাফ মারতে হয়৷ তার জন্য মানসিক শক্তি ও সাহসের প্রয়োজন৷”
অন্য যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় গাসার আরও বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন৷ যেমন অস্ট্রিয়ার ক্রাইশব্যার্গ-এ স্নোবোর্ডিং বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা৷ আনা গাসার বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, উত্তেজনায় রোম খাড়া হয়ে যাবে৷ মাথার মধ্যেই পুরো বিষয়টি ভেবে নেই, মনে মনে প্রতিটি পদক্ষেপ দেখে নেই৷ ক্রমান্বয়ে প্রত্যেকটি বিষয়ে মনোনিবেশ করা অত্যন্ত জরুরি৷”
অস্ট্রিয়ার জাতীয় স্নোবোর্ডিং টিমের কোচ আনা-র সাফল্য নিয়ে গর্বিত৷ পর পর দুবার আনা অস্ট্রিয়ায় বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাঁর তারিফ করেন৷ তাদেরই একজন সিলইয়ে নোরেনডাল৷ তিনি বলেন, ‘‘আনা-র মতো ভালো ফল করতে তাঁকে ঈর্ষা করা সহজ৷ কিন্তু আমি অনেককাল আনা-র সঙ্গে রয়েছি, জানি সে কত কঠিন পরিশ্রম করে৷ সম্প্রতি সে যে ফল করছে, তার পুরোটাই তার প্রাপ্য৷”
ইসাবেল ডেরুংস-ও স্নোবোর্ড ক্রীড়াবিদ হিসেবে আনা গাসারকে ভালোই চেনেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সে সত্যি কিছু চাইলে, অবশ্যই তা পেয়ে যায়৷ সেই সাফল্য অর্জন করতে সে অনেক পরিশ্রম করে৷ নিজের প্রতি তার বিশাল প্রত্যাশা রয়েছে৷ শুধু বেশিরভাগ নারীর তুলনায় ভালো ফল করেই সে সন্তুষ্ট হয় না৷ পুরুষদের তুলনায়ও ভালো ফল করতে চায়৷”
আনা গাসার-এর জীবনসঙ্গী ক্লেমেন্স মিলাউয়ার-ও একজন স্নোবোর্ডার৷ অস্ট্রিয়ার জাতীয় পুরুষ টিমের সদস্য হিসেবে তিনিও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আনা-র সঙ্গেই থাকেন৷ আনা-র মতো এতটা সফল না হলেও ক্যামেরা নিয়ে তিনি কাছাকাছি থাকেন৷ ক্লেমেন্স বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে আদৌ কোনো প্রতিযোগিতা নেই৷ অবশ্যই আমি যখন বলি, যে সে নির্দিষ্ট একটি কৌশল আয়ত্ত করতে পারবে না, তখন সে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আমাকে তা করে দেখিয়ে দিতে চায়৷ কিছু করতে পারলে সে বড়ই খুশি হয়, সাফল্য অর্জন করতে ভালোবাসে৷”
অস্ট্রিয়ার দক্ষিণে এক গ্রামে আনা গাসার বড় হয়েছেন৷ কম বয়সেই জিমনাস্টিক্সের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখা গিয়েছিল৷ ১৮ বছর বয়সে স্নোবোর্ডিং-এর প্রতি আকর্ষণ আবিষ্কার করে তিনি বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে এক বছরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷ সে দেশে স্নোবোর্ডিং অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্রীড়া৷ তারপর থেকেই তাঁর পেশাজীবনে সাফল্য আসে৷ প্রত্যেক জয়ের খবর তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করেন৷ তবে শুধু মজার জন্য নয়৷
অ্যাথলিটরা কত ক্লিক পাচ্ছেন, স্পনসররা সে দিকে নজর রাখেন৷ আনা গাসার বলেন, ‘‘একদিকে বিষয়টি অসাধারণ, কারণ আপনি নিজেকে যেভাবে তুলে ধরতে চান, সেই সুযোগ রয়েছে৷ কারণ সংবাদ মাধ্যম তাদের পছন্দ অনুযায়ী আপনার সম্পর্কে সেভাবে লেখে বা আপনাকে সেভাবে দেখায়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমি নিজের পছন্দমতো নিজেকে তুলে ধরতে পারি৷ কেউ তা নিয়ে কিছু বলতে পারে না৷”
চোখ ধাঁধানো জাম্পের কারণেই তিনি সবচেয়ে বেশি ক্লিক পান৷ আনা গাসার ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন৷