কনকনে শীতে বরফের বিশাল ভাস্কর্য দেখার অভিজ্ঞতা শরীরের জন্য সহজ না হলেও মন জুড়িয়ে যায়৷ নেদারল্যান্ডসের এক বরফ উৎসবে গোটা বিশ্বের ভাস্কররা ঐতিহাসিক নানা মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলেছেন৷
ডাইনোসর থেকে শুরু করে ক্লিওপেট্রা৷ ভাইকিং যুগ থেকে শিল্প বিপ্লব৷ নেদারল্যান্ডসের স্ভলে শহরের তুষার উৎসবে কয়েক সহস্রাব্দের নিদর্শন শোভা পাচ্ছে৷ সারা বিশ্ব থেকে আসা দর্শকরা প্রায় সাড়ে পাঁচশ টন বরফের মূর্তি দেখে মুগ্ধ৷ তবে এমন প্রদর্শনী দেখতে হলে গায়ে যথেষ্ট গরম কাপড় থাকতে হবে৷
গোটা বিশ্বের প্রায় ৪০ জন ভাস্কর নেদারল্যান্ডসের স্ভলে শহরে নিজেদের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরেছেন৷দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা বরফ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করেছেন৷ জার্মানির স্ভেন মোরাভিৎস শাকা জুলুর মূর্তি গড়ে তুলেছেন৷ প্রায় ২০০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু উপজাতির প্রভাবশালী রাজা ছিলেন তিনি৷
নেদারল্যান্ডসের বরফ উৎসবে যা আছে
ভাস্করদের জন্য শুধু নিখুঁত শিল্প তৈরি করাই চ্যালেঞ্জ নয়৷ বিশাল হলের তাপমাত্রা মাইনাস দশ ডিগ্রি রাখা হয় বলে নিজেদের শরীর উষ্ণ রাখা বেশ কঠিন৷ বরফের চাঙড়গুলির উচ্চতা দুই মিটার পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ করাত ও ছেনি দিয়ে খোদাই করতে বেশ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়৷ ক্যানাডার শিল্পী ডেনিস ক্লাইনে বলেন, ‘‘ইউরোপে এসে এত বড় আকারে এমন কাজ করার দারুণ মজা৷ এত দ্রুত এমন কাজের সুযোগ সহজে পাওয়া যায় না৷”
বরফের ভাস্কর্য তৈরির কাজের শেষে দর্শকদের মুগ্ধ হবার পালা৷ এই উৎসবের মূলমন্ত্র হলো ‘টাইম ট্রাভেল’৷ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও বরফের ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷ উৎসব প্রকল্পের ম্যানেজার রুবেন স্কলটেন বলেন, ‘‘আগের বছরগুলির মতো এবারও আমরা সারা বিশ্বে সব বয়সের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য বিষয়ের খোঁজ করেছি৷ বিভিন্ন সময়ের এই সব গল্প সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে গেছে৷”
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফ উৎসব
সবই বরফ দিয়ে তৈরি
চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হারবিন শহরে প্রতিবছর বরফ উৎসবের আয়োজন করা হয়৷ উৎসবে দেখানো সবকিছুই বরফ দিয়ে তৈরি করা হয়৷ ২০২০ সালের উৎসবটি চলবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত৷ যদিও তা নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপর৷ কেননা, বরফ গলে গেলেতো আর চলবে না!
রাতেও চালু থাকে
ভেতর থেকে আলোর ব্যবস্থা করায় বরফের তৈরি স্থাপত্যটি দেখতে এমন লাগছে৷ হারবিন উৎসবের কিছু ভাস্কর্য রাতের বেলায়ও দেখতে পাওয়া যায়৷
৫০ মিটার উঁচু টাওয়ার
এমন কিছু নেই যা বরফ দিয়ে তৈরি করা যায় না৷ প্রাসাদ, সেতু, আসল সাইজের গির্জা - সবই বরফ দিয়ে বানানো সম্ভব৷ উৎসবের কোনো কোনো টাওয়ারের উচ্চতা ৫০ মিটার পেরিয়ে গেছে৷
জমে যাওয়া ট্রেন!
ধরুন, বাস্তবে যদি কোনো ট্রেন বরফে জমে যেত তাহলে দেখতে কিন্তু এমনই লাগতো৷
স্বল্প সময়ের শিল্পকর্ম
প্রায় এক ডজন দেশের বরফ শিল্পী হারবিন ফেস্টিভ্যালের জন্য কাজ করেছেন৷ শীত শুরু হওয়ার পরপরই তাঁরা কাজে নেমে পড়েছিলেন৷ প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার ঘনমিটার বরফ ব্যবহার করেছেন তাঁরা৷ কষ্ট করে গড়ে তোলা এসব শিল্পকর্মের মেয়াদ থাকে মাত্র কয়েকদিন৷ কারণ গরম এলেইতো সব শেষ৷
কয়েক সপ্তাহের চেষ্টা
উৎসব শুরু হওয়ার আগের ছবি এটি৷ বরফ শিল্পীসহ ১২ হাজারের বেশি মানুষের কয়েক সপ্তাহের পরিশ্রমের কারণে হারবিন উৎসব শুরু করা সম্ভব হয়েছে৷ এবার ৩৬তম বারের মতো এই উৎসবটি আয়োজিত হচ্ছে৷
এত বরফ কোথা থেকে আসে?
উত্তর, সোঙহুয়া নদী থেকে৷ শীতে সেখানকার পানি জমে বরফ হয়ে যায়৷ সেগুলো কেটে হারবিন উৎসবে ব্যবহার করা হয়৷
বরফ পানিতে সাঁতার
হারবিন উৎসবে আসা দর্শকদের একাংশ বরফকে ভয় পান না৷ তাঁদের জন্যই উৎসবে সাঁতার প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়ে থাকে৷
গণবিবাহ
হারবিন বরফ উৎসবের আরেকটি অংশ গণবিবাহ৷ প্রতিবছর অনেকে সেখানে বিয়ের অপেক্ষায় থাকেন৷