বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে এই দেশে অভিবাসী হয়ে আসা অনেকেরই এখন চাকরির বিষয়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশে চাকরি। এই জন্য তারা নিউইয়র্ক পুলিশ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে চাকরির আবেদন করছেন, পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ভাল স্কোর করার পাশাপাশি সফলভাবে সব স্তরের পরীক্ষায় পাস করে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। যোগদান শেষে বিভিন্ন পদে পদোন্নতিও লাভ করছেন। পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশীরা আরো বেশি সংখ্যক যোগ দিবেন ও তারা আরো উচ্চ পদে আসীন হবেন বলেও প্রত্যাশা করেন অনেকেই।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রীনকার্ডধারীদের সুযোগ রয়েছে। পুলিশ বিভাগে অফিসার পদে যোগ দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হয়। ট্রাফিক বিভাগে গ্রীনকার্ডধারীদের পাশাপাশি এই দেশের নাগরিক (বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত) ও এর পাশাপাশি এই দেশে যাদের জন্ম ও বেড় উঠা, শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তারাও অনেকেই পুলিশে যোগ দিচ্ছেন। বাংলাদেশী অভিবাসী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভুতরা এই দেশে পুলিশে যোগ দেওয়ার পর যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে পুলিশে বিভিন্ন পদে বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে যারা জয়েন করেছেন তারা পদোন্নতির লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক পদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাফল্য পাচ্ছেন অনেকেই। এখন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা চাইছেন ট্রাফিক পুলিশে যারা আছেন তারা যাতে আগামী দিনে পদোন্নতি পেতে পারেন। সেই জন্য তারা পদোন্নতির পরীক্ষায় কীভাবে ভাল করা যাবে সেই বিষয়েও পরামর্শ দিচ্ছেন। পুলিশ বিভাগে আরও সংখ্যা বাড়বে সেই প্রত্যাশাও করছেন।
জানা গেছে, বিশ্বের অন্যতম সেরা পুলিশ বাহিনী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (এওয়াইপিডি) নিয়মিত অফিসারদের পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এজেন্ট কর্মরত রয়েছেন ট্রাফিক বিভাগে। যাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় পদ ট্রাফিক ম্যানেজার ও সুপারভাইজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকেই। সম্মানজনক পেশা এবং ভালো বেতনের জন্য অনেক বাংলাদেশি এখন যোগ দিচ্ছেন এনওয়াপিডির ট্রাফিক বিভাগে।
এদিকে ট্রাফিক এজেন্ট থেকে সুপারভাইজার পদে পদোন্নতির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে প্রস্তুতি ক্লাসের আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের কুইন্সে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ও শেষ প্রস্তুতি ক্লাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ট্রাফিক এজেন্ট অংশ নেন। তাদের পরামর্শ দেন বাপার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিউইয়র্ক পুলিশের লেফটেন্যান্ট শামসুল হক, বাপার অন্যতম সদস্য ও পুলিশ অফিসার আব্দুল লতিফ, ট্রাফিক ম্যানেজার মো. জলিল প্রমুখ।
প্রস্তুতি ক্লাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) প্রেসিডেন্ট ও নিউইয়র্ক পুলিশের এক্সিকিউটিভ অফিসার ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী, জেনারেল সেক্রেটারি ও নিউইয়র্ক পুলিশের লেফটেন্যান্ট প্রিন্স আলম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নিউইয়র্ক পুলিশের সার্জেন্ট এরশাদুর রহমান, মিডিয়া লিয়াজোঁ ও নিউইয়র্ক পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিটেকটিভ জামিল সরোয়ার, ট্রাস্টি ও নিউইয়র্ক পুলিশের অফিসার রাসেক মালিক, করেসপন্ডেন্ট সেক্রেটারি ও নিউইয়র্ক পুলিশের অক্সিলারি সার্জেন্ট সৈয়দ এনায়েত আলী, সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ও নিউইয়র্ক পুলিশের অফিসার জুয়েল মাহবুবুর রহমানসহ বাপার এক্সিকিউটিভ কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে দুই শতাধিক নিয়মিত অফিসার রয়েছেন। যাদের মধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছেন দুজন বাংলাদেশি। আরো কয়েকজন ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া লেফটেন্যান্ট ও সার্জেন্ট পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন আরো অর্ধশত কর্মকর্তা। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী কর্মকর্তাও রয়েছেন। বাংলাদেশি সহকর্মীদের পেশাগত উন্নয়ন ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে বাপা। যা ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।