গত কয়েক দিনে দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুম ভাঙছে মিন্টু মোল্লার৷ বরিশাল জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন তিনি৷ নিজের জমি নেই৷ তারপরও বরগা জমিতে চাষবাস করে তাঁর যথেষ্ট আয় হয়৷ মিন্টুর মতো বরিশালের প্রায় আশি হাজার বরগা চাষি সারা বছর ধরে যথেষ্ট পরিমাণ ধান ও শাকসবজি চাষ করেন৷ তবে ইদানিং সবজির খেতে এক অজানা সংক্রমণে কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁর৷
ছোট্ট এই গ্রামে অনেক চাষিই মিন্টুর চেয়ে বেশি সচ্ছল৷ তাঁদের নিজেদের খেত আছে৷ জাকির তাঁদের একজন৷ তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ আর তাঁর কাছে একটি স্মার্টফোন আছে৷ মিন্টুও নিজের সমস্যার সুরাহা করতে তাঁর কাছে যান৷ গ্রামটির বেশিরভাগ চাষি এখন মোবাইল অ্যাপের মতো কিছু ডিজিটাল সমাধানসূত্র সম্পর্কে জেনে গেছেন৷
বাংলাদেশের চাষীদের পাশে ফসলি
মিন্টুর সমস্যা শোনার পর জাকির নিজের ফোনের ‘ফসলি’ নামের অ্যাপ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ছবি তোলেন৷ সেই ছবির সঙ্গে কিছুটা বর্ণনা লিখে পাঠিয়ে দেন অ্যাপের সার্ভারে৷
এদিকে, প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে ঢাকায় ‘ফসলি’ অ্যাপের অফিসে বসে লিনা হাতে পান জাকিরের পাঠানো প্রশ্ন৷ আজ তিনি প্রায় একশোটির মতো প্রশ্ন পেয়েছেন।
এদিকে, লিনার কাছে পাঠানো চাষিদের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার দায়িত্বে আছেন কয়েকজন কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ৷ ‘ফসলি’ অ্যাপটি এসিআই অ্যাগ্রো নামের স্থানীয় এক কৃষি বাণিজ্য কোম্পানির ডিজিটাল সমাধানসূত্রগুলির একটি৷ এই কোম্পানি চাষিদের জন্য অ্যাপ তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে৷ চাষিদের বিনামূল্যে পরামর্শও দেয় এই কোম্পানি৷ এর ফলে কোম্পানির অন্যান্য কৃষিপণ্যের বিক্রি নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে৷
চাষিদের এই অ্যাপ সম্পর্কে অবহিত করতে কোম্পানি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিল্ড অফিসার নিযুক্ত করেছে৷ এদিকে মিন্টু দুপুর পর্যন্ত উত্তরের অপেক্ষায় বসে রয়েছেন৷ তিনি দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশা করছেন৷ নতুন এই সব ডিজিটাল প্রক্রিয়া তাঁর মতো চাষিদের নিয়তি বদলে দেবে বলে তাঁর আশা৷
বাংলাদেশের কৃষির হালহকিকত
জমি নেই ১১.৩৪ ভাগের
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মোট তিন কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার খানার উপর জরিপটি পরিচালনা করেছে ৷ এর মধ্যে কোন ধরনের জমি নেই এমন ভূমিহীনের সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার খানা৷ শতকরা হিসেবে যা ১১ দশমিক ৩৪ ভাগ৷
ভূমিহীন বেশি শহরে
শহরের খানাগুলোর মধ্যে ১৭ লাখ বা ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশেরই কোন জমি নেই৷ অন্যদিকে গ্রামের মোট খানার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভূমিহীন৷
অধিকাংশ নির্ভরশীল গ্রামে
স্বভাবতই দেশে কৃষির উপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ মানুষেরই বসবাস গ্রামে৷ জরিপ অনুযায়ী গ্রামে খানার সংখ্যা ২ কোটি ৯৬ লাখ যা ৮৩ দশমিক ৩৭ ভাগ৷ আর বাকি ৫৯ লাখ বা ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ রয়েছে শহরাঞ্চলে৷
কৃষিভিত্তিক জীবিকা
দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ ভাগই কৃষিতে নিয়োজিত৷ তবে যাদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি এমন শ্রমভিত্তিক খানা আছে ২৬ শতাংশ৷ বিভাগের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি কৃষি শ্রমিক খানা পাওয়া গেছে রংপুরে, ৪২ ভাগ৷ মৎস্যজীবী খানার পরিমান ৯৯ লাখ ৬০ হাজার৷
বেড়েছে গরু
দেশে এখন গরুর পরিমান দুই কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ টি৷ ২০০৮ সালে ছিল দুই কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩০৮ টি৷ ১০ বছরে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ২৮ লাখ নয় হাজার ১০৭ টি৷
বেড়েছে ছাগলও
বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৯২ লাখ ৫৭ হাজার ৪১৩ টি ছাগল রয়েছে৷ ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ৷ ১০ বছরে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ২৯ লাখ৷
হাঁস-মুরগি
জরিপ চলাকালে বাংলাদেশে ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯০১ টি মুরগি ছিল৷ হাঁস আছে ছয় কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০ টি৷ এর বাইরে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪২০ টি টার্কি আছে৷