খুব কাছ থেকে দেখা এই মানুষটিকে। ভালোলাগা ছুয়ে থাকবে আজীবন। এত অল্পতে আসলে তাকে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
দরজায় টক টক শব্দ, ওপাশ থেকে দরাজ গলায় অনুমোদন,’ কাম ইন।
রুমে ঢুকতেই, ও জাহিদ, বসো তোমাকেই মনে মনে ভাবছিলাম। জানোতো ০৬.০৬.০৬ পত্রিকা বাজারে আসছে। এবার আর কোনো ভাবেই তারিখ মিস করা যাবে না,বুঝেছো। তুমি রেডিতো?
কথার মাঝে জানতে চাইলেন, জাহিদ চিনি এক চামচতো?
উনি আমাদের নিজে হাতে চা/কফি বানিয়ে খাওয়াতে পছন্দ করতেন।
পিওন ছিলো না কোনো । নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করাতেন না।
মাথায় সাদা লম্বা চুল। দু’একটি কালোর রেখা শুধু তাতে। পরনে লাল প্রিন্টের শার্ট। তার উপর চাপানো ছাইরঙা স্যুট। সঙ্গে রংচঙা টাই। স্যুটের পকেটে একটি লাল গোলাপ। কে বলবে তার বয়স আশি পেরিয়েছে! যেন এখনও ২০ বছরের টগবগে যুবক। তারুণ্য, রোম্যান্টিকতা ধরে রাখার জন্য যে একটি সুন্দর মনই যথেষ্ট তা একজন শফিক রেহমানকে দেখলেই বোঝা যায়।
ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশে সূচনা করেন সাংবাদিক কলামিস্ট ও সম্পাদক শফিক রেহমান। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার অফিসের সামনে একটি সড়কের নামকরণও করেন ‘লাভ লেন’। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণায় একমাত্র তিনিই সরব ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’। এখন বাংলাদেশে এ দিবস পালিত হয় ব্যাপক পরিসরে, নানা আয়োজনে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সাংবাদিক ও উপস্থাপক শফিক রেহমানের সাক্ষাৎকার ও লেখনিতে উঠে এসেছে আজকের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশে পালনের শুরুর কথা। জানা যায়, লেখালেখির শফিক রেহমানকে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লন্ডনে নির্বাসিত থাকতে হয়েছিল। সে সময় তিনি সেখানে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদ্যাপন হতে দেখেছেন। লন্ডনে নব্বইয়ের দশকে খুব বেশি উদ্যাপিত হওয়া শুরু হয় ভ্যালেন্টাইন ডে। বাণিজ্যিক কারণে হলেও সেখানকার স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকারা দিবসটিকে সাদরে গ্রহণ করেন। ওই সময়ই শফিক রেহমান সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশে ফিরে আসার পর দিনটিকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেবেন। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডের মধ্যে ভালোবাসার বাণী খুঁজে পেয়েছিলেন শফিক রেহমান। আর ঘন বসতির বাংলাদেশে ভালোবাসাটা অনেক বেশি দরকার। সুসম্পর্ক, সহাবস্থান গড়ে ওঠা জরুরি। তবে বাংলাদেশে শুরু করার আগে লন্ডনে প্রচলিত ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ থেকে শুরুর ‘সেন্ট’ শব্দটি ধর্মীয় কারণে বাদ দেওয়া হয়। এটি ‘ভালোবাসার দিন’ হিসেবে প্রচার শুরু হয় তৎকালীন যায়যায়দিন পত্রিকায়। সেই সঙ্গে দিনটিকে শুধু স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ভাই-বোন, বাবা-মা-সন্তানদের মধ্যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও যুক্ত করা হয়। বলা হয়, ‘এই দিনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাও। অন্তত এক কাপ চা বানিয়ে মাকে খাওয়াও।’ তখন ওই পত্রিকায় ‘ভালোবাসার দিন’ নিয়ে লেখাও আহ্বান করেন সম্পাদক শফিক রেহমান। বিপুলসংখ্যক পাঠক নিজ নিজ ভালোবাসার গল্প লিখে চিঠি পাঠায় পত্রিকাটিতে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ব্যাপক আকারে ১৪ জানুয়ারিকে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে পালন করা শুরু হয় বাংলাদেশে। অনেকে দিবসটিকে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ আখ্যায়িত করলেও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বলতে কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।
ভালোবাসা দিবস পালন শুরুর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার একটি সড়কের নাম ‘লাভ লেন’ রাখতে সক্ষম হয়েছেন শফিক রেহমান। আসলে তিনি নিজে যখন প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন তখন চট্টগ্রামে ডিসি হিলের উল্টোদিকে ছোট্ট একটি রাস্তার নাম ছিল লাভ লেন। এই লেনের শুরুতে পানের দোকান ছিল। প্রেমিক-প্রেমিকারা সেখানে এসে পান খেত। পানের আকৃতিও ছিল হৃদয়ের মতো। শফিক রেহমান যখন যায়যায়দিনের প্লট বুকিং দেন তখন সেই রাস্তাগুলোর কোনো নাম ছিল না। এ সুযোগে তৎকালীন নগরপিতার মাধ্যমে এলাকাবাসীর আগ্রহে তেজগাঁওয়ের রাস্তার নাম রাখা হয় ‘লাভ লেন’।
শফিক রেহমান কিছু আকাঙ্ক্ষা ও অভিব্যক্তি, যা প্রকাশিত হয়েছিলো মানবজমিন পত্রিকায়।
কিছু মৌলবাদী সংস্কৃতিসেবী ছাড়া সারা দেশে ভালবাসা দিন সব বয়সের মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এ উপমহাদেশে বাংলাদেশই প্রথম ভালবাসা দিন চালু হয়েছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সালে। অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ২৭ বছর আগে। ভালবাসা দিন এখন সাবালক হয়েছে। এখানে বলা উচিত বিশ্ব নারী দিবস বা বিশ্ব ছড়ি (সাদা) দিবসের মতো এটা জাতিসংঘ ঘোষিত কোন দিবস নয়। এটা নেহায়েতই বাংলাদেশের নিজস্ব দিন। এ ক্ষেত্রে এ উপমহাদেশে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এবং রাখছে। যে সর্বজনীনতার কথা বললাম সেটা আরও ব্যাপক হয়েছে ২০১৪ সালে এসে। ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার গ্রামগঞ্জে-মফস্বলে-রাজধানীতে। আমরা লক্ষ করছি, গুলশান-বনানীসহ বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্রে ভালবাসা দিন উপলক্ষে অনেক আয়োজন করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে কেএফসি তাদের ক্যালেন্ডার বের করেছিলো যেখানে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে দুটি হার্ট এঁকে এ দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি এই ভালবাসা দিনটির জন্য চারটি জিনিস করতে চেয়েছিলেন। এক. বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে একটি ভালবাসা কার্নিভালের আয়োজন। দুই. বাংলাদেশের সব প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর জন্য একটি নিরাপদ ভালবাসা পার্ক তৈরি কর। তিন. দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা । চার. লখিন্দর বেহুলার শহর বগুড়াকে বিশ্বের এক নম্বর ভালবাসার শহর হিসেবে ঘোষণা দেয়া । ভালবাসা দিনে যে বার্তাটি বিশেষ করে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন সেটা হলো, ফুল ও চকোলেটের পাশাপাশি প্রেমিক-প্রেমিকারা ইচ্ছে করলে দুটি তালা কিনে একে অপরকে লক করে চাবিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরও শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। আমরা আশা করতেন সব প্রেমিক-প্রেমিকা ও মিডিয়াকর্মী সংঘর্ষের বদলে ভালবাসার বাণী, সংঘাতের বদলে প্রেমের বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট থাকবেন। ভালোবাসায় বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে বাংলাদেশ শফিক রেহমান বিশিষ্ট সাংবাদিক বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক শফিক রেহমান বলেছেন, ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে। কারণ, ভালোবাসার অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে এ দেশে। তিনি বলেন, বগুড়াতে যে বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনী আছে উপমহাদেশে তেমন কোনো কাহিনী নেই। তাজমহলকে অনেকে ভালোবাসার প্রতীক বলেন। কিন্তু সম্রাট শাহজাহানের একাধিক প্রেম ছিল। নবম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মমতাজ মারা গিয়েছিলেন। সমাধিটা কার প্রতি কার ভালোবাসার নিদর্শন তিনি পরিষ্কার নন। তিনি বলেন, এটা তো সম্রাটের ইগোও হতে পারে যে আমি একটা বিশালতম জিনিস বানালাম। কিন্তু যদি এই উপমহাদেশে নিখাঁদ ভালোবাসার গল্প থাকে, আমি বলব সেটি বেহুলা-লখিন্দরের গল্প। তাছাড়া বেহুলা-লখিন্দরের সমাপ্তি মিলনাত্দক। ভালোবাসায় এর চেয়ে উজ্জ্বল নিদর্শন আর কী হতে পারে? এটাকে যদি আমরা সেল করতে পারতাম, তাহলে সারা বিশ্ব থেকেই লোক আসত এটা দেখতে। নব্বই দশকের বহুল আলোচিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের মাধ্যমেই প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের সূচনা করেন তিনি। এ সময় নিজের উদ্যোগে ভালোবাসার উপহার সামগ্রীরও প্রবর্তন করেন তিনি। পরে ২০০৬ সালে যায়যায়দিন দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হলে এর তেজগাঁও কার্যালয়ের সামনের সড়কটি ‘লাভ লেন’ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। সিটি করপোরেশন কর্তৃক স্বীকৃত সড়কের নাম এটি। বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনীর স্থাপনাগুলো কীভাবে উন্নয়ন করা যায় জানতে চাইলে শফিক রেহমান বলেন, এটি একটি ইউনিক প্রেমের গল্প। ইউনিসেফের সাহায্য নিয়ে এটার উন্নয়ন করা যেতে পারে। যেহেতু মূল জায়গাটা এখনো অক্ষত রয়েছে। প্যারিসে গেলে যেমন আইফেল টাওয়ার, আমেরিকা গেলে স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ভারতে গেলে তাজমহল কেনে মানুষ। তেমনি লখিন্দরের কোলে মাথা রেখে বেহুলা যে কলার ভেলায় মশারি টানিয়ে ভেসে গিয়েছিল আমরা কিন্তু সেটা বানিয়ে বিক্রি করতে পারি। এটা বিদেশিরা দেখলে আগ্রহী হবে। একটা ভালোবাসার দিন ওখানে পালন করব। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালন সম্পর্কে শফিক রেহমান বলেন, ১৯৯৩ সালে আমি যখন সাপ্তাহিক যায়যায়দিন সম্পাদনা করছিলাম তখন ভাবলাম, এবারের বিশেষ সংখ্যাটি ভালোবাসার ওপর করব। তখনো আমাদের মিডিয়ায় ঈদ, পূজা কিংবা বর্ষ শুরু বা বর্ষ শেষ অথবা ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর বিশেষ সংখ্যা বের হয়। মনে হচ্ছিল একঘেয়েমি হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি পাঠককে বলি যে আপনারাই লিখুন, আপনাদের জীবনের অভিজ্ঞতা। যায়যায়দিন আমার হাতছাড়া হয়ে গেলেও এখনো আমি সেই ধারাবাহিকতা রেখেছি ‘মৌচাকে ঢিল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে। শফিক রেহমান বলেন, ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম যায়যায়দিনের ভালোবাসা দিবস সংখ্যা প্রকাশিত হয়। আমি ভেবে দেখলাম ১৪ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ২ ফাল্গুন। ১৩ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে পহেলা বসন্ত বা স্প্রিং। যার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। কাকতালীয়ভাবে তাই ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য এবং সময়োপযোগী। পহেলা বসন্তে ছেলেমেয়েরা হলুদ পাঞ্জাবি, শাড়ি পরে বের হয়। বইমেলা চলে। অনেক কিছু চিন্তা করে মনে হলো এটাই তো আসল সময়। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয় প্রেমিক-প্রেমিকা এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। আমি চিন্তা করলাম, এটার পরিধি বাড়াতে হবে। নামটা বদলে দিতে হবে। সেটায় যেন বাঙালিত্ব থাকে। আমি যখন কলকাতায় ছিলাম তখন আমাদের আশপাশে অনেকেই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমার বাড়িওয়ালাও ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। আমি খুব মুগ্ধ হতাম যখন আমার হাতে তাদের মেয়েরা রাখি পরিয়ে দিত। এই যে ভাই আর বোনের মধ্যে সম্পর্ক এটা একটা আবহমান বাংলার সম্পর্ক। এগুলো চালু হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ভালোবাসা তো শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী নয়, এটা ভাইবোনের মধ্যে হতে পারে, বাবা-মা সন্তানের মধ্যে হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার সম্পর্ক হচ্ছে মা এবং সন্তানের মধ্যে। রাস্তায় বের হলেও লেখা দেখা যায় ‘মায়ের দোয়া’। সে দিক বিবেচনা করে আমি ভালোবাসা সংখ্যা বের করলাম ১৯৯৩ সালে। মাত্র ৩২ পৃষ্ঠার মধ্যে তখন যায়যায়দিন বের করতাম। শফিক রেহমান বলেন, বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রচলনের এবার ২৭ বছর চলছে। এই ২৭ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। অনেকে এই দিনে বিয়ে করে, প্রথম হাত ধরে ভালোবাসার কথা বলে, চুমু খায়, বেড়াতে যায়, ডেট করে। এটা আমার জন্য নিতান্তই আনন্দের বিষয়। ভালোবাসার বাণী বাবা-মা, ভাইবোন, পাড়া-প্রতিবেশী, পুলিশের সঙ্গে জনগণের, বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়াটিয়ার হতে পারে। যেখানেই সংঘাত সেখানেই যদি ভালোবাসা থাকে তাহলে দেশটা অনেক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে। ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক জানান, দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রচলনের পর আমি সমালোচিত হয়েছিলাম। আমার নিকট বন্ধুরাই মনে করেছে, আমি একটা পশ্চিমা জিনিস আমদানি করছি। আমার কথা হলো আমাদের চীন, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো করতে হবে। পশ্চিমা সব ভালো জিনিস এনে আমাদের মতো করে ব্যবহার করতে হবে। আজকে আমরা যে আইপ্যাড ব্যবহার করি এটা কিন্তু আমেরিকার আবিষ্কার। কিন্তু তৈরি হচ্ছে চীনে, জাপানে। পশ্চিমাদের থেকে নেব না বললে কিন্তু ভুল হবে। রবীন্দ্রনাথ তার সময়ে বড় বিপ্লবী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পৃথিবী ঘুরে ঘুরে ভালো কিছু নিয়ে এসেছিলেন। রবিঠাকুর প্রকৃতই বিপ্লবী এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। এগুলো মনে করেই আমি করেছি। কিন্তু আমাকে তখন কেউ পাত্তা দেয়নি। উল্টো আমাকে উপহাস করা হলো শফিক রেহমান ‘গদি বালিশ’ বিক্রি করে। কারণ, আমি ভালোবাসার কুশন বের করেছিলাম। ভালোবাসা সংখ্যায় নানারকম ব্যাজ, ব্যাগ, চকোলেট, ফ্রি ব্যাগ দেওয়া ইত্যাদি আমি অনেক কিছু করেছিলাম। যাতে বাংলাদেশে ভালোবাসার বাণী ছড়িয়ে পড়ে। আমি খুশি যে এদেশের সুশীল সমাজের সংকীর্ণতা গোঁড়ামি তরুণ সমাজ উপেক্ষা করে তারা সাদরে এটা গ্রহণ করেছে। এত দ্রুত এটা ছড়াবে তা আমি ভাবিনি।
ভ্যালেন্টাইন ডে:
২৭০ খ্রিষ্টাব্দের কথা। তখন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার ধারণা ছিল, বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ রাজার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনের কাজ সম্পন্ন করতেন।
এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তাকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়। ভ্যালেন্টাইন রাজাকে জানালেন, খিষ্টধর্মে বিশ্বাসের কারণে তিনি কাউকে বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হতে বারণ করতে পারেন না। রাজা তখন তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে এ ধর্মের প্রাধান্য ছিল। যা হোক, ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অনুগত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন।
তখন রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাধান্য সৃষ্টি হলে গির্জা ভ্যালেন্টাইনকে Saint’ হিসেবে ঘোষণা করে। ৩৫০ সালে রোমের যে স্খানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে তার স্মরণে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়।
অবশেষে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর যুবতী মেয়েকে ভালোবাসার কারণে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ ঘোষণা করেননি।
কারণ, খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই পুরোহিত হয়ে মেয়ের প্রেমে আসক্তি খ্রিষ্ট ধর্মমতে অনৈতিক কাজ। তা ছাড়া, ভালোবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে যেতে হয়নি। কারণ, তিনি কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন কারাগারে যাওয়ার পর।
সুতরাং, ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদণ্ডদানের সাথে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালোবাসা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’র মূল বিষয় ছিল না। বরং ধর্মের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তার মৃত্যুদণ্ডের কারণ ছিল।