সাধারণত বছরের এই সময়ে, পশ্চিমা বাজারের ক্রেতারা পোশাক রফতানিকারকদের সঙ্গে পরবর্তী মৌসুমের আলোচনার জন্য চীনে ভ্রমণ করে থাকে। কিন্তু এবার নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সিংহভাগ ক্রেতাকে চীনে সফর বাতিল করতে দেখা যাচ্ছে। চীনের বদলে পশ্চিমা ক্রেতারা অন্যান্য দেশের রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করতে শুরু করেছে, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতও রয়েছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
চীনা ভাইরাস ইস্যুর কারণে চলতি বছর তৈরি টেক্সটাইল পণ্য, পোশাক ও বস্ত্র রফতানি অন্তত ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান টি রাজকুমার।
কিন্তু এর বিপরীত সুর শোনা যাচ্ছে ভারতের রফতানিকারকদের কণ্ঠে। প্রতিযোগিতার দামের সঙ্গে তাল মেলানো সম্ভব না হওয়ায় পশ্চিমা ক্রেতাদের এ ধরনের অনুসন্ধানগুলোকে কার্যাদেশ পরিণত করার মতো অবস্থানে তারা নেই বলে রফতানিকারকরা জানাচ্ছে। দেখা গেছে, মেড-ইন-ইন্ডিয়ার পণ্যগুলো সাধারণত বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
এর বাইরে বেশকিছু রফতানিকারক ইউনিটের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো, এ মুহূর্তে তারা চীন থেকে আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায়, বহু টেক্সটাইল কারখানা তাদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ফলে বস্ত্র ও কাঁচামাল উভয় খাতের রফতানিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে ভারতের মতো এর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোও বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাপকভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে ভারত সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ও কিছু কর সুবিধা পেলে দেশটির পক্ষে এসব ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
এদিকে তৈরি পণ্য ও পোশাক খাতে মার্চেন্ডাইজ এক্সপোর্টস ফ্রম ইন্ডিয়া স্কিমের (এমইআইএস) আওতায় যে ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল, তা সম্প্রতি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ভারতের পোশাক শিল্পের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ও মুম্বাইভিত্তিক ক্লথিং ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট রাহুল মেহতা বলেন, আমাদের বর্তমান অবকাঠামো ও মূল্য কাঠামো রয়েছে, তাতে বলা যায় আমরা পশ্চিমা ক্রেতাদের অনুসন্ধানের সুবিধা নেয়ার মতো অবস্থানে নেই। এটা সত্যি, আনুষঙ্গিক সরবরাহ প্রভাবিত হবে, তবে সেটাও নিকট ভবিষ্যতে নয়।
ভারতীয় ম্যানুফ্যাকচারারসরা চীন থেকে যে আনুষঙ্গিক পণ্য ক্রয় করত, তা থমকে রয়েছে। চীনের নববর্ষের পর এখনো সরবরাহ শুরু হয়নি এবং সবগুলো ইউনিট বন্ধ। এ প্রসঙ্গে তিরুপুর এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিআর বিজয়াকুমার বলেন, এ পরিস্থিতি প্রকৃতপক্ষে গ্রাহকদের কাছে আমাদের সরবরাহে প্রভাব ফেলবে। এখন আমাদের স্থানীয় উৎসগুলোর সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু তাত্ক্ষণিকভাবে পণ্য তৈরি ও গুণগত মান রক্ষা করা আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১০ শতাংশ বস্ত্র ও ২০ শতাংশ আনুষঙ্গিক পণ্য চীন থেকে আমদানি করে ভারত। অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্কলন অনুসারে, ভারতের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি রুপির আনুষঙ্গিক (বোতাম, জিপ, হ্যাঙ্গার, সুই, প্রভৃতি) আমদানি করে থাকে। যা স্থানীয় উৎস বা অন্যান্য দেশের আমদানি থেকে ৪০-৫০ শতাংশ সস্তা হয়।
চীন থেকে এত বিপুল পরিমাণ আমদানি এখন ভারতের পোশাক শিল্পের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এস্তে এক্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি তিরুকুমারণ। তিনি বলেন, চীন যদি দ্রুত কারখানা চালু না করে, তবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।