শেয়ার বাজারে টানা দরপতনে বেশ কয়েক দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ দেখান ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তারল্য সুবিধা ও নীতিসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
এখন থেকে যে কোনো ব্যাংক তার নির্ধারিত সীমার বাইরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ তহবিল’ গঠন করতে পারবে।
ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থে এই তহবিল গঠন করতে পারবে। তা না পারলে ট্রেজারি বিল/ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তহবিল গঠন করতে পারবে।
ইচ্ছে করলে প্রথমে নিজেদের অর্থে তহবিল গঠন করে পরবর্তীতেও ট্রেজারি বিল/ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সোমবার এই তহবিল গঠনের বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করে বলেছে, এ সুবিধা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সরকারের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজার এখন ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
জানুয়ারিতে পুঁজিবাজারে বড় ধসের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সপ্তাহ খানেক সূচকে উন্নতি দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি ।
গত সপ্তাহে পাঁচ দিনের লেনদেনে তিন দিনই সূচক পড়েছে। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহে ১৭ পয়েন্ট হারায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী গত গত ১৬ জানুয়ারি যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাতে শেয়ার বাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ব্যাংকের জন্য বিশেষ তহবিলের নীতিমালা জারি করা হল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, “সার্বিক বিষয় বিবেচনায় পুঁজিবাজারে ক্রমাগত তারল্য প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীনে” এই বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারি ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার)’ শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের’ জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার এই তহবিল গঠন করতে পারবে।
>> ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে যে কোনো কার্যদিবসে রেপোর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার সীমার মধ্যে যে কোনো অংকের তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।
>> রেপোর সুদের হার ৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকবে এবং কোনো ধরনের অকশনের প্রয়োজন হবে না।
>> ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা নিতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে।
>> নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজার দর আদায়যোগ্য অর্থের চেয়ে কম হলে তা আগে নেওয়া মার্জিন থেকে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে বাধ্য থাকবে।
>> বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদী রেপো দেওয়া হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্যাংকের এ বিনিয়োগসীমার মধ্যে ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হয়।
২০০ কোটি টাকার যে ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ এখন দেওয়া হচ্ছে- তা এই বিনিয়োগ সীমার বাইরে থাকবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা পুঁজিবাজারের জন্য একটি ভাল উদ্যোগ। ৬০টি ব্যাংক যদি ২০০ কোটি টাকা করে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে, বেশ ভালো একটা টাকা বাজারে আসবে।তারল্য সংকট কমে যাবে।
“সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ব্যাংকের বিদ্যমান সীমার বাইরে এসে ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেকে বলেন, “সত্যিকার অর্থে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বলা যায়, সবার জন্য একটা ভালো সুযোগ দিয়েছে। প্রত্যেক ব্যাংক এখন তার সীমার বাইরেও ২০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। বাজারে অবশ্যই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”