বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির মতো সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সতর্ক নজর রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ৯ জানুয়ারি (রবিবার) মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ২০১৯-২০২০ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সমাজে মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির মতো কিছু সামাজিক অভিশাপ রয়েছে। আমি এসব বিষয়ে আপনাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি। সমাজের বিদ্যমান সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান পরিচালনায় সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। অপরাধ বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে রক্ষা করার জন্য এই ধরণের অভিশাপ নির্মূল করা জরুরি। কারণ আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ধ্বংস করার কোন সুযোগ দিতে চাই না।
তিনি একইসঙ্গে বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে তেমনই একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তরুণদের মেধা, জ্ঞান এবং শক্তি দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে চায়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সশস্ত্রবাহিনীকে এমনভাবে উন্নত করতে চাই যাতে তারা যেকোন দেশে যেকোন পরিস্থিতিতে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীর যেখানে কাজ করেছে সেখানেই সুনাম অর্জন করেছে। মানবিক সেবা দিয়ে বিভিন্ন দেশে স্থানীয় মানুষের হৃদয় জয় করেছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। অনুষ্ঠানে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কম্যাড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
সেনাবাহিনীর ১২৫ জন, নৌ বাহিনীর ৩৪ জন এবং বিমান বাহিনীর ২২ জন ছাড়াও ২১ দেশ থেকে আগত ৫৪ জন বিদেশি অফিসারসহ মোট ২৩৫ জন শিক্ষার্থী এ বছর এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করা অফিসারদের হাতে সনদ তুলে দেন। ২১টি দেশের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা এবং জাম্বিয়া।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১১লা জানুয়ারি কুমিল্লার সামরিক একাডেমীতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত জাতির পিতার ভাষণের বিশেষ কিছু অংশ উদ্বৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যেকোন দেশের যেকোন সৈনিকের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে। আজকে এটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে অনেকটা ছোট পরিসরে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করলেও তা আজকে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, শুরু করলে যে পারা যায়, আমরা তা প্রমাণ করেছি।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। আমরা আশা করি ২০ দশমিক ৫ ভাগ থেকে দারিদ্রের হার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র মুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবো। ‘মুজিব বর্ষে’ দেশের সকল ঘরে সরকার বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি এবং আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণসহ সর্বক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছে।