যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক হাওয়া বইছে শুরু করেছে। এরইমধ্যে জোরেসোরে প্রচারণায় নেমেছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই শিবিরই। অভিসংসন শুনানিতে পার পেয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আরেক দফা আশাবাদি রিপাবলিকানরা। অন্যদিকে গত নির্বাচনে হিলারির হারের পর ডেমোক্রেট শিবিরে রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়।
এমনি অবস্থায় মার্কিন গণমাধ্যমে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে নতুন একটি নাম। বাংলাদেশি-বংশোদ্ভুত নাবিলাহ ইসলাম ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে কংগ্রেসের একটি আসনে লড়বেন। বয়স মাত্র ৩০। ২০২০ এর ভোটে লাল-নীল দুই শিবিরেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি আসনে প্রতিনিধি পরিষদের শূন্য আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
রাজনীতিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে এরই মধ্যেই তিনি চাকরি ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আর ভোটের মাঠে প্রচারণার মূল অস্ত্র হিসেবে নাবিলাহ বেছে নিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি।
জর্জিয়ায় ৭ম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট প্রতিনিধি পরিষদ আসনটিতে যে ছয়জন ডেমোক্রেট প্রার্থীতার জন্য লড়ছেন তার মধ্যে একজন নাবিলাহ। গণমাধ্যমে তাকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে ‘আটলান্টার এওসি’ হিসেবে। তুলনাটা আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজ (এওসি) এর সঙ্গে। কোর্তেজ মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত কনিষ্ঠতম নারী আইনপ্রণেতা। ২০১৮ সালে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি নিউ ইয়র্কের ১৪তম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট আসন থেকে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন মাত্র ২৯ বছর বয়সে। মার্কিন গণমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনীতি ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা একইরকম সম্ভাবনা দেখছেন নাবিলাহ’র ক্ষেত্রেও।
কোর্তেজের মতো নাবিলাহ চমক দেখাবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে, ভোটের আগ পর্যন্ত তিনি যে তার আসনের অন্যতম দাবিদার হিসেবে আলোচনায় থাকবেন তেমন আভাস মিলছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ডেমোক্রেট প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ‘রো খান্না’ দলের পছন্দের বাইরে গিয়ে সমর্থন দিয়েছেন নাবিলাহকে। কংগ্রেসে দায়িত্বরত কোনো আইনপ্রণেতার দলীয় পছন্দের বাইরে গিয়ে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার নজির মার্কিন রাজনীতিতে এটাই প্রথম।
খান্না তার সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দ্য ইন্টারসেপ্টকে বলেন, ‘তার নির্বাচনি মূল্যবোধে আমি অণুপ্রানিত হয়েছি। তিনি এমন একজন প্রার্থী যিনি একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক হিসেবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা বোঝেন।’
রো খান্না বিশ্বাস করেন, হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্স এর সমর্থকদের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারবেন নাবিলাহ। খান্নার ভাষায়, ‘ইসলাম ধর্মের অনুসারী, অশ্বেতাঙ্গ একজন নারী হিসেবে তিনি তার আসনের বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতাকে দারুণভাবে তুলে ধরতে সক্ষম।’
খান্নার সমর্থন পাবার পর ধন্যবাদ জানিয়ে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) একটি টুইট করেছেন নাবিলাহ। লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে বেড়ে ওঠার সময়, আমার মতো দেখতে কাউকে আইনপ্রণেতা হিসেবে কখনও দেখিনি- একজন গর্বিত দক্ষিণ এশিয়ান হিসেবে রো’কে নেতৃত্ব দিতে দেখাটা ছিল আমার নির্বাচনের অণুপ্রেরণাগুলোর মধ্যে একটি।’
নাবিলাহর নির্বাচনি প্লাটফর্মের নীতিগুলো গোটা আমেরিকাজুড়েই্ জনসমর্থন বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রস্তাবিত ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও মোকাবিলার জন্য প্রস্তাবিত ‘গ্রিন নিউ ডিল’।
আসছে প্রাইমারি নির্বাচনে (যেখানে বেছে নেওয়া হবে দুই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে) নাবিলাহ’র সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ হলেন ক্যারোলিন বোর্দেউ। প্রসঙ্গত এর আগে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান প্রকাশ করেছিলেন বোর্দেউ।
জর্জিয়ার ৭ম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে আটলান্টার উত্তর শহরতলি এলাকার ভোটারদের মধ্যে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে বিগত কয়েক বছরে। এখন সেখানে বেশিরভাগ ভোটারই অশ্বেতাঙ্গ। সেকারণে ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসনাল ক্যাম্পেইন কমিটিও ২০২০ এর ভোটের মৌসুমে নাবিলাহর আসনকে টপ টার্গেট হিসেবে রেখেছে।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহের প্রচারণায় সতীর্থ ডেমোক্রেট ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীর অনেককেই পেছনে ফেলেছেন নাবিলাহ। এর মধ্যে দুজন স্থানীয় আইন পরিষদের আইনপ্রণেতা।
গত মাসে টিন ভ্যোগ নামের ম্যাগাজিনে, এক মতামত কলামে তিনি লিখেছেন, ‘আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে একটি বাংলাদেশি অভিবাসি পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। আমার বয়স এখন ৩০। আমার স্টুডেন্ট লোন আছে প্রায় ৩০ হাজার ডলার। আর সঞ্চয় প্রায় শূন্যের কোঠার দিকে। সে কারণে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রচারণা তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করার অনুমতি চাইছি সরকারের কাছে। কেননা, সরকারি আসনের জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করা কর্মজীবী নারীদেরও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হয়।’