বিশ্ব অর্থনীতিতে একচ্ছত্র অধিপতি হতে যাওয়া চীনকে কোণঠাসা করতেই উহানে করোনাভাইরাসের উদ্ভব ঘটিয়েছে আমেরিকা। এমনটাই বিশ্বাস করেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানায় হংকংয়ের জনপ্রিয় অনলাইন ডিমশুম ডেইলি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উইলিয়াম এবসের মতে, একাধিক রাশিয়ান বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, চীনকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকাই উহান করোনাভাইরাস তৈরি করেছিল। যাতে পরবর্তীকালে একটি প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন নিয়ে এসে কোটি কোটি ডলার উপার্জন করতে পারে দেশটি।
রাশিয়ান মিডিয়া সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, অভিনব এই রোগটি আপাতত 2019-nCoV নামেই পরিচিত। এটি হতে পারে চীনকে নাশ করার জন্য আমেরিকার তৈরি একটি জৈব অস্ত্র।
তবে, এ অভিযোগগুলো উল্লেখ্যযোগ্য হারে রাশিয়ার মূলধারার মিডিয়াগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অসম্মানিত করতে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রচেষ্টাসমূহের অংশ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, জনপ্রিয় কমসোমলস্কায়া প্রাভদার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনারাও বিশ্বাস করে যে, করোনোভাইরাসটি আমেরিকানরাই তৈরি করেছে। এমনকি এটাই প্রমাণ হয় যে, ভাইরাসটি আমেরিকান গবেষণাগারে জিনগত আকৃতিতেই ছিল। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত যে সমস্ত লোক আক্রান্ত হয়েছে তারা সবাই-ই এশিয়ান! এবং তাদের মধ্যে কোনও ইউরোপীয়ান নেই।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রাচীনতম সংবাদ সংস্থা আরআইএ নোভোস্টি জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াটা একটা নাশকতা হতে পারে।
নিকুলিনের বরাত দিয়ে আরআইএ নভোস্টি জানায়, অনুমান করা হচ্ছে যে, মার্কিন কূটনীতিক কর্মীরা “আমেরিকান ল্যাব” থেকে উহানের কাছে একটি বিপজ্জনক কার্গো “হস্তান্তর” করেছেন।
এদিকে, রাশিয়ার লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এবং জনপ্রিয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি কয়েকদিন আগে মস্কো রেডিওকে বলেছেন যে, “অবশ্যই” এই প্রাদুর্ভাবের পিছনে আমেরিকানরা ছিল।
এমনকি, তিনি এও ইঙ্গিত দেন যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী যখন ভাইরাসটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য “পরীক্ষার সুযোগ” লাভ করেছে, তখনই দেশটির ফার্মাসিস্টরা কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে নিচ্ছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রধান একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চ্যানেল ওয়ান, ভ্রেমিয়া বা ‘সময়’ নামে সন্ধ্যায় তাদের মূল সংবাদ অনুষ্ঠানের মধ্যে করোনাভাইরাসের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের একটি আলাদা সময় বা স্লট বরাদ্দ করেছে।
যেখানে প্রতিবেদন তৈরির ধারাও বেশ অস্পষ্ট। দেখে মনে হবে যে তারা হয়তো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভ্রান্ত ধারণা অপসারণ করছে, কিন্তু দর্শকদের মধ্যে তারা এমন একটি অনুভূতি দেয় যে, এতে হয়তো কিছুটা সত্যও থাকতে পারে।
ভ্রেমিয়ায় সম্প্রতি সবচেয়ে অযৌক্তিক যে তত্ত্বটি প্রচার করা হয়েছে তা হলো, করোনাভাইরাসের ‘করোনা’ শব্দটি নিয়ে। ল্যাটিন এবং রাশিয়ান-দুই ভাষাতেই করোনা শব্দের অর্থ মুকুট, তারা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সাথে কোনভাবে জড়িত।
চ্যানেল ওয়ানের কিরিল ক্লেইমিয়নভ ধারণা করে বলেন যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার বিষয়টি বাদ দেয়া যায় না।
আর এর কারণ হচ্ছে, তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং বিজয়ীদের হাতে মুকুট তুলে দিয়েছেন।
মূলত বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এমন নামকরণ করেছেন এগুলোর মুকুটের মতো আকারের কারণে, কিন্তু ভ্রেমিয়ার উপস্থাপক ট্রাম্পের জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনই বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, “আপনি হয়তো বলবেন নির্বোধের মতো শোনাচ্ছে, এবং আমি আপনার সাথে একমতই হতাম যদি এটা আমাদের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে না থাকতো।
প্রতিবেদনে সহযোগী যেসব ভিডিও দেখানো হয় তাতে এটা স্বীকার করা হয় যে, মুকুটের এই তত্ত্ব “আজগুবি বা বানোয়াট”, কিন্তু একপাক্ষিকভাবে এমন একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয় যিনি বলেন যে, চীনের করোনাভাইরাস কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিংবা আমেরিকার ওষুধ কোম্পানিগুলো এর জন্য দায়ী।
প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের মিডিয়া এবং কর্মকর্তাদের ছড়ানো কিছু পুরনো ও মিথ্যা তথ্য আবারো তুলে ধরা হয়। যাতে বলা হয়, জর্জিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগার রয়েছে যেখানে মানুষের উপর জৈবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়।
এর পর চ্যানেল ওয়ানের প্রতিবেদক অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে বলা হয় যে, নতুন করোনাভাইরাস শুধু এশিয়ার মানুষদের আক্রান্ত করে এবং এটা এক ধরণের “জাতিগত বায়ো ওয়েপন বা জৈবিক মারণাস্ত্র।”
চ্যানেল ওয়ানের করোনাভাইরাস নিয়ে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “বায়ো ওয়েপন বা জৈবিক অস্ত্র” তৈরির ভিত্তিহীন অভিযোগ আবারো আনা হয়।
তিনি স্বীকার করেন যে, ওই তথ্য ভুল প্রমাণিত করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন: “যেসব বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যথেষ্ট সতর্ক থাকেন, তারাও এই সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।”
রাশিয়ায় সতর্কতা
করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায়েও। চীনসহ বিশ্বের কয়েক দেশে ভাইরাসটির মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে দেশটির কর্মকর্তাদের মধ্যে এ উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ কারণে চীনের সাথে রেল এবং বিমান চলাচল কমিয়ে আনা হয়েছে। চীন থেকে ফেরত নেয়া রুশ নাগরিকদের সাইবেরিয়ার একটি হাসপাতালে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মস্কোতে অবস্থিত একটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাশিয়ার দৈনিক ভেদোমস্তি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাকে মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ “সতর্কতামূলক পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন।