সবশেষ গত ৮ মাসের মধ্যে ৬ মাসই তৈরি পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক৷ এই পরিস্থিতি থেকে সেক্টরকে বাঁচাতে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা চান গার্মেন্টস মালিকরা৷ সরকারের কাছ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি৷
চলতি অর্থবছরে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়করও কমানো হয়েছে৷ এখন নতুন করে রপ্তানি পণ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের উপর বিনিময় হারে প্রতি ডলারে পাঁচ টাকা করে চেয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা৷ এ সহায়তার পরিমাণ মোট প্রায় চার হাজার কোটি টাকা৷
গত জানুয়ারিতে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে এমন একটি আবেদন করা হলেও এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি৷ তবে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি৷
বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন‘‘ সরকারের কাছ থেকে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি৷ তবে অর্থমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ আসলে আমরা প্রতি ডলারে যে ৫ টাকা করে চেয়েছি, সরকার হিডেন নানা ধরনের ট্যাক্স-ভ্যাট পেয়ে থাকে, এই টাকা তার মধ্যেই চলে যাবে৷
সরকারের বিশেষ সহযোগিতা দরকার- ফারুক:
আমি মনে করি, এই সুবিধা যারা রপ্তানি করে তাদের সবারই পাওয়া উচিৎ৷ কারণ বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে গেছে৷ আমাদের এখন টিকতে গেলে সরকারের বিশেষ সাপোর্ট দরকার৷ কারণ দেখেন এখন ‘নেগেটিভ গ্রোথ’ চলছে এই অর্থবছরের ৭ মাসের মধ্যে ৫ মাসেই৷ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন পথও এই মুহুর্তে খোলা আছে বলে মনে হচ্ছে না৷”
২৫ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত, ৪০ কারখানা বন্ধ:
গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারকরা রপ্তানির বিপরীতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা পেয়ে আসছেন৷ চলতি বছর নতুন করে সব ধরনের রপ্তানিতে এক শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা দেয়া শুরু করেছে সরকার৷ নগদ সহায়তার উপর উৎসে করও অর্ধেক কমিয়ে ১০ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ অন্যদিকে রপ্তানিতে উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ (০.২৫%) কার্যকর করা হয়েছে৷ এর ফলে গার্মেন্টস খাত থেকেই সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ছাড় হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা৷ ফলে রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে ছাড় ও অব্যাহতি দেয়ায় সরকারের রাজস্বেও টান পড়েছে৷ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এনবিআরের ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা৷
তবে দীর্ঘদিন ধরে একই খাতকে প্রণোদনা দিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে৷ অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন তারা বিশেষ সুবিধা পেলে, কয়েকদিন পর আরেকজন দাবি করবেন৷
সুবিধা দিলে সবার জন্য হওয়া উচিৎ: নাজনীন
ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে একটা ঝুঁকি তৈরী হবে৷ আসলে একচেঞ্জ রেটটা ঠিক করা দরকার৷ একটা দেশে একচেঞ্জ রেট নিয়ে বিশৃঙ্খলা থাকলে ঝুঁকি তৈরি হতেই পারে৷ সরকার যে সুবিধাই দিক, সেটা সবার জন্যই হওয়া উচিৎ৷ এতে পোশাক খাতও লাভবান হবে৷”
তিনি যোগ করেন, ‘‘আশঙ্কা হলো, আমদানিতে এর প্রভাব পড়বে৷ ভিয়েতনামের দিকে দেখেন, কাঁচামালের জন্য তাদের আমদানি নির্ভরতা ৯০ শতাংশ, যেটি আমাদের দেশে ২৫ শতাংশের মতো৷ তাই আমদানি ব্যয় বাড়ার চেয়ে আমরা যে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছি তার তুলনা করলে মোটের ওপর ডলারের একচেঞ্জ রেটটা পরিবর্তন করা দরকার৷’’
বিজিএমইএ’র পাঠানোর চিঠিতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷ গত সাত বছরে ডলারের বিপরীতে প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার অবমূল্যায়নের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে পোশাক রপ্তানি কমেছে পৌনে আট শতাংশ৷ এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের সুরক্ষার জন্য পোশাক রপ্তানির স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর (রপ্তানি মূল্যের ২৫ শতাংশ) ডলার প্রতি বিনিময় হারে অতিরিক্ত ৫ টাকা করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়৷
গত কয়েক মাস ধরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমে গেছে৷ সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও রপ্তানি কমেছে৷ এটি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷ এর ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) হিসাবে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমেছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১৫ কোটি মার্কিন ডলার৷ স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা৷ গত সপ্তাহে বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী সংসদে বলেছেন, ৬৩টি গার্মেন্টস একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে৷ এতে প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন৷