চাইনিজ দেখলেই নাকি উদ্বিগ্ন হচ্ছে কেউ কেউ৷ করোনা ভাইরাসের জন্য প্রয়োজন সতর্কতা৷ আমাদের অনেকে এতই সতর্ক হয়ে উঠেছি যে, বর্ণবাদি আচরণ করতেও দ্বিধা করছি না৷
আমি এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে থাকি এটি মূলত একটি কমিউনিটি অ্যাপার্টম্যন্ট৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা মিলে সত্যিই একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটি তৈরি হয়েছে এখানে৷ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা গল্প করি, আড্ডা দেই৷ তবে গত কয়েকদিন ধরে আমাদের আড্ডায়, গল্পে করোনা ভাইরাসের বিষয়টি বারবার আসছে৷
আমার পাশের রুমেই থাকে তাইওয়ান থেকে আসা একটি মেয়ে৷ আইন নিয়ে পড়শোনা করছে সে৷ সেদিন সন্ধ্যায় তার সাথে কথা হচ্ছিল এ বিষয়ে৷ জানালো একটু শঙ্কিত সে, তাঁর এক বোন আছেন হংকংয়ে এ কারণে একটু উদ্বিগ্ন৷ জানতে চাইলাম তার দেশের পরিস্থিতি৷ বলল, তার দেশে এখনো এধরনের কিছু ধরা পড়েনি, তবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে তার সরকার৷ সেই সাথে জানালো করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া ভ্রান্তি নিয়ে৷ ‘‘আমাকে দেখেই বুঝা যায় আমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এসেছি৷ আর এ কারণে আমি একটু অপ্রস্তুত থাকি কেননা অনেকেই বিষয়টিকে এভাবে ভাবতে শুরু করেছে যে দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার কাউকে দেখলেই সতর্ক থাকতে হবে৷” জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি এ ধরণের কোন পরিস্থিতে পড়েছ? ‘‘এখনো এধরনের পরিস্থিতে পড়িনি তবে একটু অস্বস্তিতে থাকি৷”
করোনা ভাইরাস নিয়ে বর্ণবাদি আচরণের বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের৷ সোশ্যাল মিডিয়াতে এর মধ্যেই এ সংক্রান্ত আলোচনা চলছে৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা বিশেষ করে কোন চীনা নাগরিক দেখলেই তাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ভাবা হচ্ছে৷ ফ্রান্সে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, এ অবস্থা মোকাবেলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা তরুণরা ইতিমধ্যে ‘আই অ্যাম নট অ্যা ভাইরাস’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে৷
অ্যা ভাইরাস’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে৷
কথা বলছিলাম আমার হলে থাকা চীন থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সাথে৷ নিজের দেশের আক্রান্ত মানুষের বিষয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানালেন তিনি৷ এও বিশ্বাস করেন যে তার দেশের সরকার সফলভাবেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম হবে৷
নিজের দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার, কিন্তু সে পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন তিনি, জানালেন৷ নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছুটা উদ্বিগ্নও এ শিক্ষার্থী৷ বলছিলেন করোনা ভাইরাস বিষয়ে বিষয়ে মানুষের বর্ণবাদি ভাবনার কথা৷ তার এক বন্ধুর উদাহরণ দিয়ে বলেন চীন থেকে আসা অনেকেই এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন৷ আর তাই তিনি নিজেও অস্বস্তিতে থাকেন৷
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন? ফেসবুকে দেখা যায় চাইনিজদের খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে একটি দল৷ বলছে, এ কারণেই নাকি করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে৷ করোনা ভাইরাসের বিষয়ে প্রয়োজন সতর্কতা৷ কিন্তু এ সতর্কতা যদি ভয়াবহতায় রুপ নেয়, যদি সমাজে স্টেরিওটাইপ তৈরি করে তখন সচেতনতা নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে৷