প্রতিবছর বড়দিনের আগে নেদারল্যান্ডসের একটি ছোট্ট শহর চার্লস ডিকেন্সের স্মরণে যেন উৎসবে মাতে৷ শহরটির নাম ডেহভেনটা৷ যদিও ডিকেন্স কখনো ডেহভেন্টায় ছিলেন না, তার অনেক উপন্যাসে এখানকার চরিত্র রাস্তা ঘাটগুলো উঠে এসেছে৷
প্রতিবছর প্রায় এক লাখ পর্যটক এখানে আসেন একটি সপ্তাহান্তের জন্য ঊনিশ শতকে ফিরে যেতে৷ চার্লস ডিকেন্সের যুগের মানুষগুলোকে এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ কৃষক, ভিক্ষুক, কারিগর কিংবা সাধারণ মানুষ- সবাইকেই পাওয়া যাবে ডেহভেন্টায়৷ সময়টা ঊনিশ শতকের, ক্রিসমাসের ঠিক আগেকার৷
এই যেমন ফান গুল পরিবার৷ সাত বছর বয়সী ফ্রেডেরিকের টুপিটা একটু আঁটোসাঁটো, কিন্তু চলবে৷ শহরের পুরোনো অংশটিতে থাকার কারণে উৎসবে যোগ দেবেনই তারা৷ কেন্দ্রীয়ভাবে এই পোশাকগুলো ভাড়া পাওয়া যায়৷ একেবারে বাস্তব মনে হবে দেখলে৷
স্থানীয় বাসিন্দা শানতাল ফান গুল বলেন, ‘‘প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পাই৷ আপনি প্রতিবেশী হিসেবে শুধু নাম লেখাবেন৷ ওরা আপনাকে পোশাক দেবে৷ এটা খুব মজার৷ প্রতিবছল আপনি একটি নতুন চরিত্র৷”
তিনি যোগ করেন, ‘‘এখানে এই শতাব্দীর কোনো কিছুই থাকবে না৷ এমনকি জুতোজোড়াও৷ স্নিকার বা তেমন কিছুও পরতে পারবেন না৷”
শানতালের স্বামী পিটার হিলেব্রান্ড বললেন, এমনকি কোনো ঘড়িও থাকবে না৷ আসলে এখানে নিয়ম খুব কড়াকড়ি৷ এমনকি মোবাইল ফোনও নেয়া যাবে না৷ এর অর্থ, হাঁটতে বের হতে হবে এবং বাইরে গিয়ে দেখতে হবে কী হচ্ছে৷ আগেকার দিনের মতো৷
এখানে শুধু পুরোনো কাপড় পরার বিষয়টিই নয়, ডেহভেন্টায় যেন পুরো ঊনিশ শতকটিই জেগে ওঠে৷
একদিকে যেমন শিশুরা ভিক্ষা করছে, অন্যদিকে বিষয়টি, তখন ও এখন, কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়৷ আবার বুর্জোয়া পরিবেশে কফি খাওয়া চলছে৷ ইয়ান ট্যের ভেমে তাঁর থাকার ঘরটিকে একটি খাবারের দোকানে পরিণত করেছেন৷
‘‘এই রুপার জিনিসগুলো যেমন কাঁটাচামচ, ছুরি ১৮৫০, ১৮৫২ সালের৷ এটা ভিন্ন জগৎ৷ সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ মজাই লাগে করতে৷ তাড়নাটা আসে গায়ে যে কাপড়টা পরছি বা যা যা করছি তা থেকে, ” বলেন তিনি৷
এমি স্ট্রিক সবসময় চাইতেন চার্লস ডিকেন্সের ক্রিস্টমাস স্টোরি বইয়ের চরিত্রগুলো বাস্তবে দেখতে৷ ২৯ বছর আগে তিনি এই উৎসব শুরু করেন৷ তাঁর বাবাও ডিকেন্সের ফ্যান ছিলেন এবং ইংল্যান্ডকে ভালোবাসতেন৷
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এমি স্ট্রিক বলেন, ‘‘আমি শুধু কয়েকটি দোকান দিয়ে শুরু করি এবং সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চলচ্চিত্র দেখাই৷ অবশ্যই সেটি ‘ক্রিস্টমাস ক্যারল’, এবং আমি বলি যে, এমনটা করা যেতে পারে৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দোকানগুলোর লোকেরাই শুধু নয়, এখানকার সব মানুষ অংশ নিলেন৷”
চার্লস ডিকেন্সের ক্রিস্টমাস স্টোরি গল্পটি এবেনেসার স্ক্রুজ নামের একজন ব্যবসায়ী কিভাবে কৃপণ থেকে দানশীলে পরিণত হন তা নিয়ে৷ ল্যোক ফান ফুর্স্ট ভারিক্কী সেই মানুষটির চরিত্র ২৫ বছর ধরে করছেন এখানে৷
‘‘একটা বাজে লোকের চরিত্রে অভিনয় করা দারুণ ব্যাপার,” বলেন এই অভিনেতা৷ ‘‘তাহলে নিজেকে খারাপ জিনিসের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়৷”
ডেহভেন্টার এই উৎসবটি আসলে একটা ক্রিস্টমাসের শক্তির এক বহিঃপ্রকাশ, ঠিক যেমনটা এখানে দেখা যাচ্ছে৷