জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ-দলগত-বেসরকারি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২২’ অর্জন করল ডিজিটাল পল্লী উদ্যোগ।
মোঃ জোনায়েদ সিদ্দিক,সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, আইসিটি বিভাগ,ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭ ডিসেম্বর একটি ই- মেইল বার্তার মাধ্যমে এটি জানান। মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, ই-ক্যাব-এর সাধারণ সম্পাদক নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘‘ডিজিটাল পল্লীর’ প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামকে ডিজিটাল গ্রামে রূপান্তর করার উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল পল্লী টিমকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার প্রদান করবেন।
দেশের প্রান্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্ভাবনাকে প্রযুক্তির সাহায্যে সমগ্র দেশ ও দেশের বাহিরে ছাড়িয়ে দিতে ’ডিজিটাল পল্লী’ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি)ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছয় টি গ্রাম বেছে নেওয়া হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল পল্লী বা ডিজিটাল কমার্স ভিলেজ হিসেবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ২০০ জন তাঁতীকে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ।
এছাড়া গত ৫ ডিসেম্বর শরিয়তপুরের ডামুড্যাতে উদ্বোধন হলো দেশের দ্বিতীয় ডিজিটাল পল্লী।
জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের মূলমন্ত্র প্রান্তিক জনগণের হাতের মুঠোয় নাগরিক সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিপিসি - এর কো-আর্ডিনেটর কমার্স মিনিস্ট্রীর এডিশনাল সেক্রেটারি জনাব আব্দুর রহিম খানের তত্বাবধানে ডিজিটাল পল্লী ডিজিটাল পল্লী টিম এটি বাস্তবায়ন করতে কাজ করছেন।
ডিজিটাল পল্লী টিমে অন্যান্য হলেন ক্রাফট ভিশনের স্বত্তাধিকারী জনাব ইব্রাহীম খলি, প্রেসিডেন্ট; ভাইস প্রেসিডেন্ট ই-ফার্মারের কো-ফাউন্ডার এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব জাহিদুজ্জামান সাঈদ, আই- মেশ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব মীর শাহেদ আলী এবং ই- পল্লীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব জুনায়েদ আহমেদ।
একটি ডিজিটাল গ্রাম হল একটি ধারণা যা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জীবন ব্যাবস্থাপনার সাথে ডিজিটাল ব্যাবস্থাপনা সম্পৃক্ত করে উক্ত গ্রামের অর্থনৈতিক জীবিকা, ব্যক্তিস্বাস্থ্য এবং সামাজিক সংহতি গগতিশীল করে।
এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর, ভীষণ ২০৪১ এর সাথে সম্পৃক্ত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে ডিজিটাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহ সকল স্তরের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয় করা হয়েছে এখানে।”গ্রাম থেকে বিশ্বে” অর্থাৎ গ্রামীণ অর্থনীতিকে বিশ্বের সাথে সংযুক্তকরণ, পণ্য উৎপাদন থেকে বিশ্ববাজারে তা পৌছে দেওয়া এবং এখানে প্রযুক্তির ব্যাবহার, যার মধ্যদিয়ে গ্রামীণ কৃষি, যোগাযোগ ও সাপ্লাইচেইন উন্নয়ন নিয়ে কাজ হচ্ছে। গ্রামের সকল রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল কমার্স ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য এবং এই মডেল গ্রামের আঙ্গিকে দেশব্যাপি গড়ে তোলা হবে হাজারো ডিজিটাল পল্লী।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
ক. ডিজিটাল ইকোনোমিক ইকোসিস্টেম উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে সচেতনতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করন।
খ. আইটি/আইটিইএস শিল্পের প্রচারের মাধ্যমে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
গ. আইটি শিল্পের ভিত্তি প্রসারিত করতে এবং সুষম আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি সুরক্ষিত করার জন্য আইটি/আইটিইএস সেক্টরে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ।
ঘ. আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে শ্রম নির্ভরশীল জাতি থেকে মেধা ও প্রযুক্তি নির্ভরশীল উচ্চ আয়ের উন্নত বাংলাদেশ গড়া ।
ঙ . ২০২৭ সালের মধ্যে ৪০ টা জেলায় ১০০০ গ্রামকে ডিজিটাল পল্লীতে রুপান্ত।
গ. ই-হেলথ, ই- শিক্ষাক ও ই- বাণিজ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া।
চ.গ্রামীণ নাগরিক টেকসই জীবন যাত্রা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা যা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিকগুলিকে প্রভাবিত করে, তাই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলিতে একটি বড় প্রভাব ফেলে ।
ডিজিটাল পল্লী পাইলোটিং:
গ্রাম: সাভার ও আগ-সাভার। ইউনিয়ন: বেড়াইত, উপজিলা: সাটুরিয়া, জিলা: মানিকগঞ্জ।
যা করা হয়েছে:
ক. ওয়ান স্টপ সার্ভিস সল্যুশন।যার মাধ্যমে গ্রামীণ নাগরিকদের জন্য টেলি মেডিসিন, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা, আর্থিক পরিসেবা ইন্টারনেট সংযোগ এবং অন্যান্য জিটুসি-বিটুসি পরিসেবাগুলোর মত মানসম্মত পরিসেবা সরবরাহ করা হচ্ছে।
খ. ডিজিটাল প্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত অর্থনৈতিক কার্যকারীতা এবং টেকসই গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে সার দেশে ও পরিবর্তেতে ক্রসবর্ডার ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ পণ্যগুলিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গ. উদ্যোক্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা এবং আইটি ও আইটিইএস শিপ্লের প্রচারের মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ঘ. সাটুরিয়া উপজেলার বরাইত ইউনিয়নের ৭টি গ্রামকে বাছাই করে মাঠ পর্যায়ে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়।
ঙ. জরিপের মাধ্যমে ২০০ জন্য প্রান্তিক উদ্যোক্তাকে নির্বাচন করে এবং তাদের পেশা ও লিঙ্গ ভিত্তিক হাতে-কলমে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মাঝে ১৪৯ জন পুরুষ এবং ৫১ জন নারী উদ্যোক্তা।
চ. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০০ জন উদ্যোক্তাদের পণ্য গ্রাম থেকে বিশ্ব বাজারে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি তথ্যবহুল এগ্রিগেটর ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে।
যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
ছ. প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ উপজেলা পোস্টঅফিস ও দরগ্রাম পোস্টঅফিসকে ফ্রি ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে ফ্যাসিলিটিস সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
জ.গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং গ্রাম পর্যায়ের উন্নতি সাধনের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল পল্লী ইকো টুরিজম নিয়ে কাজ করছে।