পর্ব- ৩
আমি বিশ্বাস করি, স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কাছে বৃহত্তর মানব সমাজ শৃঙ্খলিত থাকতে পারে না। মানুষের হাত ধরে মানুষই মুক্তি আনবেন। মানুষই মানুষের ইতিহাস রক্ষা করবেন। স্বার্থবাদীরা কখনোই ইতিহাস তৈরি করতে পারে না।
‘রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন বেঁচে ছিলেন’। সত্যি সত্যি রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন লেখালেখিতে সচল ছিলেন; মানে বেঁচে ছিলেন। কাজ মানুষকে বাচিয়ে রাখে, কিন্তু সব কাজ নয়, ভালো কিছু কাজের ভিতর দিয়ে মানুষ বেচে থাকে।
মানুষ হলো সমাজবদ্ধ জীব। ব্যক্তিমানুষের সব সার্থকতা সমাজকে কেন্দ্র করেই। সমাজে স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করেই মানুষের সম্পূর্ণতা। কিন্তু মানুষ দল বেঁধে বাস করলেই তা সমাজ হয় না। প্রত্যেক মানুষ একে অপরের কল্যাণের কথা ভেবে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিয়ম ও শৃঙ্খলার অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাস করলে সেই জনগোষ্ঠীকে সমাজ বলে। এই সমাজকে বাঁচিয়ে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিমানুষের অন্যতম দায়বদ্ধতা।
আমি পুরো সমাজের কথা আপাতত ভাবছি না। আমার ভাবনায় আপাতত ই-কমার্স সমাজ। এই সমাজের প্রতিটি মানুষ আমার কাছে সমান মূল্য রাখে। ই-কমার্স সমাজের প্রতি আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা আছে, যেমন আছে সামাজিক মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি।
আমাদের সমস্যা হলো, সমষ্টিগত সংকট নিয়ে গভীরভাবে ভাবার মতো মানুষের দারুণ অভাব। এ ব্যাপারটা নৈতিক অবক্ষয়ের সঙ্গে যুক্ত। আমরা সবাই সংকটের কথা বলি, সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সমবেত যে উদ্যোগ, সেটা নিতে পারি না। আসলে এই মূহুর্তে সদ্য বিকাশমান ই-কমার্স সেক্টরের যে সমস্যা তা নিয়ে নয় বরং আমরা অনেকই ভাবছি নিজের নিজের সমস্যা নিয়ে।
নির্বাচন ভাবনা থেকে হয়তো আমরা নিজেরা নিজেদের সাথে বিরোধিতা করছি। আরো একটু যদি বুঝিয়ে বলি, হয়তো আমরা নিজেদের বধ করতে ডার্টি গেম প্লান করছি, যা ব্যাক্তির থেকে সমষ্টির ক্ষতি বেশি করবে।
কিছু মানুষ যারা এই সমাজকে সর্বতো যাইগায় নিতে কাজ করছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে যারা কাজ করছেন তার মধ্যে আছেন, মাননীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, মাননীয় আই সি টি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং সবার উপরে থেকে কাজ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়।
এটুআই সর্বাগ্রে এই দায়ীত্ব নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, আমাদের খুব কাছের মানুষ জনাব রেজওয়ানুল হক জামি, হেড অব ই- কমার্স যার প্রতিটি পদক্ষেপ ই- কমার্স দেশ এগিয়ে নিতে অবিরত কাজ করে চলেছেন। বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের মতন কাজের মধ্যে বেচে থাকছেন।
বাংলাদেশের প্রথম গ্রামীণ উন্নয়নে সহায়ক ই-কমার্স প্লাটফর্ম হলো ‘একশপ’। সহজে ও দ্রুত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পের আওতায় এটি চালু করা হয়েছে। ই-কমার্স ও লজিস্টিকস কোম্পানি, পোস্ট অফিস, মোবাইল ফোনে পেমেন্ট সুবিধা এবং ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইউডিসি) নেটওয়ার্কের মধ্যে সমন্বয় করে তৈরি হয়েছে একশপ প্ল্যাটফর্ম। রুরাল এরিয়ার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে একশপ।
ই-ক্যাব যেহেতু রুরাল নিয়ে ভাবছে এবং কাজ করছে,এক্ষেত্রে একশপ ও ই-ক্যাব আরো ক্লোজ হয়ে কাজ করা দরকার বলে আমি মনে করি।
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আরো কিছু নাম নিতে হচ্ছে, আমাদের সবার প্রিয় শমী কায়সার,ই-ক্যাবের সভাপতি যার গ্লামারাস নেতৃত্ব ১৪ বছরে এই কিশোর সংগঠনটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এবং তার পুরো টিম গত দুবছর যে কাজগুলো করেছে, করোনাকালীন সময়ে যে ভাবে মাঠে থেকে কাজ করেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে।
এসক্রো সেবা বাস্তবায়ন, ই-কমার্স নীতিমালা বাস্তবায়ন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চালু হওয়া ডিজিটাল গরুর হাট, ই-কমার্সের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এসওপি, ই-ক্যাব এনবিআর যৌথ সভা,
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের আয়কর বিষয়ে মত বিনিময় সভা,ই-কমার্স সেক্টরে আইন প্রনয়ন ও নিয়ন্ত্রন কতৃপক্ষ বিষয়ে অংশীজনদের সভা,কো ব্রান্ড প্রিপেইড কার্ড, ই-ক্যাব এবং আইবিবিএল ডুয়াল কারেন্সি ভিসা প্রিপেইড কার্ড, ই-ক্যাব প্রিভিলেজ কার্ড,বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং প্রদান সহ অনেক ভালো উদাহরণ আছে ই-ক্যাবের।
কোভিডের সময়, ই-কমার্সের প্রতি জনগনের আস্থা বেড়েছিল অপরিসীম (যা পরিবর্তিতে অবশ্য দারুণভাবে ক্ষতির মুখেও পড়েছিলো)।
বিশেষ করে চালডাল এর উন্নতি তো আমাদের সবার চোখে পড়ছে। ঢাকা পেরিয়ে রুরালে এখন চালডাল।
ই-কুরিয়ার সহ বেশকিছু লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানও বেশ বড় হয়েছে।
লকডাউন এলাকায় সেবাদেয়াকে কেন্দ্র করে যাচাই ডটকম, সবজিবাজারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত উঠে এসেছে। স্বপ্নের অনলাইন সেল বেড়েছিলো দ্বিগুন, অ্যাগোরা এবং মীনাবাজারও অনলাইন সেল শুরু করেছিল।
শুধু নিত্যপণ্য নয়, ওয়ালটনের ফ্রিজ, এসির মতো পণ্যও মানুষ অনলাইনে ক্রয় করেছে। সেবা ও ঔষধ আগের দ্বিগুন বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব ও বাস্তবায়নে ই-ক্যাব কাজ করেছে আর প্রযুক্তির সুবিধা সহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতার কারণে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে করোনাকালীন সেবা দিয়েছিলো এবং ই-কমার্স মুভার্স এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সরকারী ও বেসরকারী সেক্টরের ১২ জন অগ্রণী কর্মী যারা ই-ক্যাবের সাথে সম্পৃক্ত থেকে করোনাকালীন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন দেশ, সরকার ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এই সময়ে এসে ই-কমার্স খাতে উদ্যোক্তাবান্ধব নেতৃত্ব ও বিশ্বাসের কিছুটা চিড় ধরেছে মনে হচ্ছে কিন্তু বিভেদের সময় এখনো এসেছে বলে মনে হয় না। যাঁরা দীর্ঘদিন সরাসরি এ খাতে কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে ই-কমার্স খাতের সঠিক ইকোসিস্টেম তৈরি হওয়া খুব দরকার।আর এজন্যে দরকার নিজেদের মধ্যে ঐক্য। উদ্যোক্তাবান্ধব শুধু নয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্যে একটা কার্যক্রম থাকা দরকার। হাতে গোনা কই একটি প্রতিষ্ঠানের জন্যে ই-ক্যব না বরং এটি হতে হবে সবার জন্যে ই-ক্যব।
আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠেয় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) নির্বাচনের বিষয়টিকে খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।যারা এতদিন ধরে সংস্থাটিকে পাহারা দিয়ে আসছে, তাদের প্রতি অনুরোধ ব্যাক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে সঠিক দায়িত্ব পালন করুন, না হলে আগামী কাউকে ক্ষমা রকবে না।
ই-কমার্স এর উন্নয়নে স্বার্থেই প্রয়োজনীয় মানুষগুলোর নেতৃত্বে আসা দরকার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা আরো বেশি ভূমি রাখা দরকার।
(ক্রমশ)