জাহিদ ইউ.জেড সাঈদ
উনিশ শতকে বঙ্গদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন সুচিত হয়। এ পরিবর্তনকে বঙ্গীয় রেনেসাঁ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। প্রথমত, কতিপয় ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও মিশনারি এবং স্থানীয় বিদ্বজ্জনদের মধ্যে যোগাযোগ-সংশ্লেষের ফলে এ পরিবর্তন দেখা দেয়। এ রেনেসাঁর উদ্ভব কলকাতায়।
রেনেসাঁ(Renaissance) একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ ‘‘পুনর্জন্ম’(rebirth)। এটি ইউরোপীয় সভ্যতার এমন একটি সময়কালকে বোঝায় যা শাস্ত্রীয় শিক্ষা এবং প্রজ্ঞার পুনরুজ্জীবন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। রেনেসাঁর ফলে বৈজ্ঞানিক আইন, শিল্প ও স্থাপত্যের নতুন রূপ এবং নতুন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ধারণা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক ধরণের বিপ্লব সংগঠিত হয়।
প্রযুক্তির সূচনা এবং নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে, শিল্পী এবং শিক্ষার্থীরা অন্বেষণে ঝুঁকেছিল। যখন পশ্চিমা বিশ্বে আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন হচ্ছিল, তখন ইতালির শিল্পীরা বিশ্ব এবং প্রকৃতির সমস্ত সম্ভাব্য দিকগুলো অন্বেষণ করতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ইউরোপের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং চিত্রকলার নতুন উদ্ভাবনের সাথে নতুন সমুদ্র পথ, মহাদেশ এবং উপনিবেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মানবতাবাদ ছিল রেনেসাঁ যুগের একটি প্রধান শাখা এবং বৈশিষ্ট্য। রেনেসাঁর সময় মানবতাবাদ ছিল একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন যা ১৩ শতকে শুরু হয়েছিল। ১৫ শতকের দিকে, রেনেসাঁ মানবতাবাদ শিক্ষার প্রধান রূপ হয়ে উঠেছিল। ফ্রান্সেস্কো পেত্রার্ক কে ইতালীয় মানবতাবাদের জনক হিসাবে গণ্য করা হয়, দর্শনে তার অবদান ছিল যথেষ্ট বিশাল।
দশটা দোকান ঘুরে, একশটা পণ্য দেখে, দামাদামি করে একটা বা দুটো পণ্য কেনা বাঙালি নাকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য কিনবে? এটা তো কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের সহজ-সরল পরিসংখ্যান আসলে এমনই।
উন্নত দেশগুলো যখন ই-কমার্সকে সহজভাবে নিয়ে পথচলা শুরু করেছে, আমরা তখনো ইন্টারনেটকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই জেনেছি। এইতো কদিন আগেও ই-কমার্স বাংলাদেশের মানুষের কাছে হাসিঠাট্টার ব্যাপারই ছিল। তবে অবস্থা ধীরে ধীরে বদলে গেছে। বেশকিছু পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ দেয়।
একটি তথ্যমতে ,২০১১-২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার বাড়ছে। বর্তমানে বই থেকে শুরু করে জামাকাপড়, খাবার, শৌখিনসামগ্রী ইত্যাদি ই-কমার্সের মাধ্যমে বেচাকেনা হচ্ছে।
একটি দেশের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের কোনো বিকল্প নেই। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশ, ইন্টারনেটের উদ্ভব ও বিকাশ এবং কাগজের মুদ্রার বাইরেও ইলেকট্রনিক বিনিময় প্রথা চালু হওয়ার ফলে বাণিজ্যেরও একটি বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে। এখন ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও বাণিজ্য করা যায়, যার প্রচলিত নাম ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য।
ই-ক্যাবের ১৪ বছরের পথচলা।প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে এবং সফল কার্যক্রমের মাধ্যমে ই-ক্যাবের পথচলা তরুনদের আশাব্যঞ্জক এবং দেশের জন্য সফলতার এক নতুন স্বাক্ষর।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ডেলিভারি কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় আলাদা গাইডলাইন তৈরি করা, তাদের স্বাস্থ্য পরার্শ দেয়া, ফোনে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে জরুরী সেবা চালু রাখার মাধ্যমে ই-ক্যাব নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছে।
রমযানে রেস্টুরেন্ট ফুড বাসায় ডেলিভারী দেয়ার অনুমতির মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ ঘরে বসে তৈরী খাবার সেবা পেয়েছে।
ঈদের কেনাকাটায় ঘরেবসে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার করেছে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
“আম মেলা, ই-বাণিজ্যে সারাবেলা” যার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রায় ১,৫২,০০০ কেজি আম ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ঢাকার ২টি লকডাউন এলাকায় প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পৌছে দেয়ার যে কর্মযজ্ঞ, লক্ষাধিক মানুষকে মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করার যে চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবিলা তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ ব্যাপারে তাদেরকে আইসিটি ডিভিশন, এটুআই সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
সফলতার একটা মাইলফলক ছিল। ডিজিটাল কুরবানি হাট। আমি নিজে এখান থেকে গরু বিক্রি করেছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ই-ক্যাবের যৌথ উদ্যোগে “ডিজিটাল হাট”।
মানবসেবা কার্যক্রম। এতো ব্যস্ততার মাঝেও সদস্য কোম্পানী অনুদান সংগ্রহ করে সারাদেশে ১ হাজার পরিবারের ৫ হাজার মানুষকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়েছে।
সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় মাত্র ১৮ থেকে ৩৬ টাকায় অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে ই-ক্যাব। ই-ক্যাবকে সরকার যেভাবে সাড়া দিয়েছে প্রতিটি কাজে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের এই দায়িত্বশীলতার কথা আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে।
কোভিডের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো, ই-কমার্সের প্রতি জনগনের আস্থা।
কিছু মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল আজকের এই ই- কমার্সের বাংলাদেশ।
যার মধ্যে কিছু নাম সবার আগে আসে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কাইসার, এটুআই-এর হেড অব ই- কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল, প্রাক্তন সভাপতি রাজিব আহমেদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার নিশা, সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন, পরিচালক জিয়া আশরাফ ও সাঈদ আহমেদ, আসিফ আহনাফ, ফাইনেন্স সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল হক, প্রাক্তন পরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন, ইউএনডিপির ন্যাশনাল কনসাল্টেন্ট সারাহ জিতা, প্রাক্তন জয়েন্ট সেক্রেটারি মীর সাহেদ আলী, ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন, রুরাল ই- কমার্স স্টান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুজ্জামান সাঈদ, জুনায়েদ আহমেদ, এক্সিকিউটিভ মেম্বার মাফরুজা আক্তার, সাদিয়া আক্তার মিতু, পার্থ প্রতিম।
স্টার্ট আপ এস সি এর চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার জাহিদ, ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি মেনাফা, এক্সিকিউটিভ মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার জিয়া, সোনিয়া আক্তার, মাহজাবিন বিনতে কবির, মারুফা পারভিন নাদিয়া, হারুন-অর-রশিদ, আমিনুর রহমান রাতুল।
ইনভেস্টমেন্ট এস সি এর চেয়ারম্যান আশিকুল আলম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ফারহা মাহমুদ ত্রিনা।
মেম্বার ওয়েলফেয়ার এর চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান রাকিব হাসান, এক্সিকিউটিভ মেম্বার মেসবা উদ্দিন, রিয়াদ হাসান বাদশা।
ক্রসবর্ডার এস সি-এর ভাইস চেয়ারম্যান নূসরাত আক্তার টুম্পা, সদস্য আরমান আল হোসেন।
স্মার্ট লজিস্টিকস এর চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম ফাহমি,এক্সিকিউটিভ মেম্বার ফাতিমা আক্তার।
কর্পোরেট এফেয়ার্স ও পার্টনারশিপ এস সি এর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আদনান, হোসনে আরা খান নওরিন।
ব্রান্ডিং, মার্কেটিং এন্ড সোসাল মিডিয়া এস সি এর চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ছোটন, ভাইস চেয়ারম্যান হুরাইরা শিশির, মেম্বার লিটন দেবনাথ।
ই হেলথ এর চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন মাহমুদ।
ইউথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট তাজদিক হাবিব, জেনারেল সেক্রেটারি জুয়েল রানা, ভাইস প্রেসিডেন্ট সজিবুর রহমান খান।
এফ কমার্স এলায়েন্স এর চেয়ারম্যান সাজ্জাদ বিন আহসান সৌরভ।
এর বাইরে আরো অনেক নাম আছে যা এ মূহুর্তে মনে পড়ছে না।
ই-কমার্স এর রেনেসাঁ এসেছে এই মানুষগুলোর হাত ধরে।খুব প্রিয় সব মানুষগুলো এক সাথে ই- কমার্সেকে সারা দেশময় ছড়িয়ে দিবে, এই ভাবনা সারা অন্তরজুড়ে প্রভাবিত।
গত কয়েক বছরে বিশেষ করে করোনাকালে আমাদের দেশে খুব দ্রুত ই-কমার্স খাতের প্রসার ঘটে। কিন্তু হঠাৎ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এই বিকাশমান খাত, শুরু হয় নতুন অনিশ্চয়তার।
তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে আনুমানিক ২৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন প্রায় ২ লাখ উদ্যোক্তা। অল্প দিনেই এই ই-কমার্স খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলো। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছিল।
দ্রুত বাড়তে থাকা দেশের ই-কমার্স খাত মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখে ফেলেছে গত বছর। ২০২০ সালে একদিকে যেমন ই-কমার্সে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, অন্যদিকে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক।
ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় গ্রাহকদের মধ্যে ই-কমার্স নিয়ে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ফেসবুককেন্দ্রিক শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিদিনই প্রতারণা করে যাচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা থেকে একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দেবার পর জানা গেলে দেশের ৫৪টি অনলাইন প্রতিষ্ঠান টাকা পাচারের সাথে জড়িত। তারা প্রতারণা করে এর মধ্যেই হুন্ডি ও বিট কয়েনের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। তার পরিমান ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
কিছুদিন হয় আবারো একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ই- কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। ঠিক সেই সময় ই-ক্যব নির্বাচন।
জানা চেনা মানুষগুলো একটু একটু অচেনা মনে হচ্ছে।
একবার ব্লেম গেইমের ফাদে প্রিয় ইন্ডাস্ট্রি থমকে যাবে না তো, ভয় জাগে মনে।