এখনও পর্যন্ত আপনার নেওয়া সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত কি ছিলো? এর ফলে কি ভালো কিছু হয়েছিল নাকি পরে আফশোস করেছিলেন?
সত্যি কথা বলবো | ব্যাক্তিগত কিছু রাখব না | আমাকে খুব খারাপ মনে করলে করতে পারেন | এই লেখা পড়ে ভাস্কর ব্যানার্জীকে কে ঘৃনা করতে পারো তোমরা | সে অধিকার তোমাকে দিলাম |
আমি আমার জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম যে দিন আমি আমার চাকরি কে পদাঘাত করলাম | আর সেই সিদ্ধান্তের কারণেই আমি আজ আমি হতে পেরেছি | এক জন দাসের জীবন থেকে মুক্তি পয়েছি | আজ আমি আমার নিজের Boss আর এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি শুধুমাত্র আমার স্ত্রী সাগরিকার মনোবলের জোরে |
বাবা মায়ের আদরের এক মাত্র ছেলে আমি | বেশ বড় বয়েস অবধি পৃথিবী দেখেছি মায়ের আচলের তলায়, তালুতে বাবার হাতের স্পর্শে | তখন বেশ বড় কম্পানিতেই চাকরি করতাম, এক জন এন আর আই বাঙালির কোম্পানি | প্রথম এমপ্লয়ী আমিই ছিলাম | নিউজ ওয়েব সাইট ছিল ও ইল্যায়েন্স থেকে পাওয়া আউট সোর্সিং এর কাজ আমরা করতাম। খুব খেটে ছিলাম। আমার আন্ডারে ওই কোম্পানিতে অনলাইনে কাজ করত প্রায় ৩০ জন যুবক যুবতী | বলতে পারেন নিজের হাতেই সব গড়ে ছিলাম |
কিন্তু হঠাত এক দিন ওই মালিক তার শ্যালককে এনে চাপিয়ে দিলেন আমার মাথার ওপর | কারণ নাকি, কোম্পানি বড় করতে হবে | অনেক বড় | অনেক অনেক বড় | পার্টনার করারর কথা যিনি বলতেন, তিনি আমাকে ৩০০$ এর চাকর বানিয়ে দিলেন রাতারাতি | ওদিকে বিয়ে করেছি তখন সবে দেড় বছর | বাবা মারা গেছেন তিন মাস আগে | এমন অবস্থায় আমার সব কিছু মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না | মাইনের ডিমশান পর্যন্ত মানতে বাধ্য ছিলাম। ওনার বক্তব্য ছিলো প্রফিট হচ্ছে না তাই একটু এডজাস্ট করতে হবে। আদৌ সেরকম পরিস্থিতি ছিলো না । তুও মানতে হলো। আমি অসহায় ছিলাম পরিস্থিতির চাপে | হতাস | খুব হতাস |
রাতে সাগরিকা যখন ঘুমাতো তখন ওর মুখটা দেখে ভাবতাম, মেয়েটার জীবন টা নষ্ট করে দিলাম | ও জানেও না |
সদ্য বিধবা মায়ের চোখে চোখ মেলাতে পারতাম না | আমি জানতাম আমার জন্যে ভরসা করে ওরা যে স্বপ্ন দেখেছে সেগুলো বুদ বুদের মতন মিলিয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে | বেকার হতে হবে খুব তারাতারি | আমার বিরুদ্ধেই আমার কোম্পানিরই একটা গ্রুপ জাল বুনছে |
প্রতিদিন অকারণে হেনস্থা | চেষ্টা যাতে আমি রিজাইন করি | আমার অধীনে যারা কাজ করতো তাদের অকারণে ছাটাই করে নতুন লোক নিয়ে আসা হচ্ছিল | আমি ওদের রক্ষা করতে চাইলে, উল্টে আমাকে অন্য কোনো ইসুতে কাজে গাফিলতি করারর অভিযোগ আনা হতো | মার্কেটিং এর জন্যে তৈরি করা প্রোফাইল গুলো ছিনিয়ে নেওয়া হলো। প্রতিদিন অফিসে অশান্তি | গরম ইমেইল চালা চালি। ঝগড়া।
একদিন আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না | চিত্কার করে কেঁদে ফেললাম | সাগরিকাকে সব জানিয়ে দিলাম | বলেছিলাম, তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও, আমি ফুরিয়ে গেছি | সব শেষ হয়ে যাবে। আমি হেরে গেছি, শুনছো আমি হেরে গেছি।
সাগরিকা সেদিন বলেছিল- তুমি ফুরিয়ে যাও নি | আমার বিশ্বাস আছে | ঐরকম কোম্পানি তুমি একাই তৈরী করতে পরো | আমার বিশ্বাস আছে |
সাড়া রাত ভেবেছিলাম কি করা যায় |
পরের দিন অফিসে লগইন করলাম না। দুজনে সিনেমা দেখলাম কম্পিটার সারাদিন।
তার, পরের দিন একটা ওদের গ্রুপেরই মার্কেটিংয়ের ছেলেকেই আলাদা করে ডাকলাম | জিগ্গেস করলাম,
কত মাইনে দেয় তোমাকে?
৩০০$
টার্গেট কতো দিয়েছে ?
বলেছে, মাসে ২০ টা গ্রাফিক্সের কাজের ক্লোস করতে হবে | বড় বড় তিনটে ইল্যান্সের পেইড প্রফাইল দিয়েছে | তিন মাস দেখবে বলেছে, টার্গেট এর পরেও না দিলে তাড়িয়ে দেবে |
৫০ - ৫০ | ওই প্রফাইল গুলো থেকে যা কাজ আসবে তুমি আমাকে দেবে | কোম্পানি কে একটা দুটোর বেশি নয় | আমি কাজ নামিয়ে দেব | আমি ফটোশপ জানি | তিন মাস পরে আমরা কেউ কাউকে চিনবো না | কোনদিন যোগাযোগ রাখবো না | রাজি |
রাজি হয়েছিল | কারণ মারোয়ারী ছেলে ছিলো | ওরা চাকরি বোঝে না, ব্যবসা বোঝে |
এক মাসের মধ্যেই বুঝে গেলাম কালো ঘোড়ায় বাজি ধরেছি | ঘোড়া টক বক টক বক করে ছুটছে |
কোম্পানি ওদিকে অনবরত খিস্তচ্ছে | আগে যাতে দুঃখ পেতাম, এখন আনন্দ পাচ্ছিলাম | এবার ওদের রাগ দেখে আমার মজা লাগচ্ছে |
ওয়াট মে যা তু আর তেরা কোম্পানি | খাল্লাস | হিসাব বরাবর না করে ছাড়ব না |
একই ভাবে ওয়েব ডেভলপার একটা ছেলেকে টানলাম | আর মার্কেটিং থেকে ওই ছেলেটাই টানলো আরো একজনকে |
খেলা জমে ক্ষীর |
তিন মাস পর আমরা সবাই এক সাথে রেজিগনেশন দিয়েছিলাম কারণ ওনাকে বোঝানোর দরকার ছিল আমার দম | আমার সাথীরা আমাকে সাহায্য করেছিল | ওরা আমার ফ্যান হয়ে গেল কি ভাবে কে জানে | আমি তখন ঘোরের মধ্যে ছিলাম প্রতিশোধের নেশায় |
আমাদের টিম এখনো আছে | তিন মাসের চুক্তি আমরা ভঙ্গ করেছিলাম | আজ প্রায় পাচ বছর হলো ওই চুক্তি ভঙ্গ করে আমরা এক সাথে কাজ করছি | যদিও এছাড়াও প্রত্যেকেরই নিজের আলাদা আলাদা সোর্স অফ ইনকাম তৈরী করা আছে | আমার যেমন ইউটিউব ইত্যাদি। কারণ, আমরা সবাই তো আদতে…………………….
পাপ পুন্যের প্রসঙ্গ তে বলবো আমার ডেক্স টপের ওয়াল পেপারের ছবিটা দিলাম | ওটা আমিই বানিয়েছি | কিছু লেখা আছে ওতে, সেটা পড়ে নেবেন প্লিস |