মাহফুজ আনাম
তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটির পরিচালক ছিলেন, তারপরও কোনো কিছুই তার ব্যক্তিগত ছোঁয়ার বাইরে ছিল না। তিনি যা করতেন, সবকিছুতেই তার নিজস্ব ও সুনির্দিষ্ট ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়, বিশেষ করে মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে। মানুষটি গুরুত্বপূর্ণ হোক বা না হোক, তাতে কোনো রকমফের হতো না। শামীম ভাই (লতিফুর রহমান, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং এ পত্রিকার জন্য একজন আলোর দিশারী) ১ জুলাই, ২০২০ আমাদেরকে ছেড়ে যাওয়ার পর যত জনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, সবাই তাকে তার মানবিক গুণ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন; যেমন অন্যদের প্রতি তার সমবেদনা, সংবেদনশীলতা, সহানুভূতি, ব্যক্তিগত যত্ন, তিনি যেভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন, যেসব শব্দ ব্যবহার করতেন, অথবা যেভাবে তিনি কোমল কণ্ঠে কথা বলতেন, ইত্যাদি। ব্যবসায়িক, সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত পরিমণ্ডল নির্বিশেষে, মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত, যাদুকরী ছোঁয়া সব সময় তাকে অন্যদের থেকে আলাদা রেখেছে।
আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলোতে তিনি সবসময় সৌজন্যতার উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হতেন। তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেনের আলোচনাগুলোও হতো সবসময় খোলামেলা। সবাইকে মর্যাদা দিতেন তিনি। সবসময় ন্যায়-নীতিতে অটল এই মানুষটি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বোঝাপড়া টিকিয়ে রাখতে সব পক্ষকেই লাভবান হতে হবে।
তিনি সারা জীবন নৈতিকতাকে আঁকড়ে রেখেছিলেন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং সততার বাইরে কোনো কিছু তিনি করতেন না বা এমন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতেন না। একবার তিনি একটি টিভি চ্যানেল কেনার আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। এর জন্য আমরা সব খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলোকে গুছিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারলেন টিভি চ্যানেলটি বৈধ পথে স্যাটেলাইট ফি পরিশোধ করেনি, তখন তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
তিনি গুণগত মান বজায় রাখার ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন। তিনি জোর দিয়ে বলতেন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটি উন্নত ও ভরসা রাখার মতো সেবার সমার্থক হতে হবে। এ ব্যাপারটির সঙ্গে শুধু নৈতিকতা নয়, দূরদৃষ্টিও জড়িয়ে ছিল। একটি ব্যবসা দীর্ঘ মেয়াদে কখনোই সফল হবে না যদি পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করা না হয়। বাকি সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী। তিনি বিশ্বাস করতেন গুণগত মানই একটি পণ্য বা সেবার জন্য সেরা বিজ্ঞাপন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফাঁকির বিরুদ্ধে তিনি সতর্ক করে গেছেন সর্বক্ষণ। তিনি প্রায়ই বলতেন, এ ধরনের কাজ টেকসই ব্যবসার পরিপন্থী।
আর্থিক ক্ষেত্রে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে সেরা পন্থা হচ্ছে স্বচ্ছ থাকা এবং কখনও কোন অস্বচ্ছ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আলোচনা শেষ না করা। আলোচনার ক্ষেত্রেও তিনি একই সুরে বলতেন, টাকার কথা উঠলে আমরা বাঙালিরা কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি না, বিশেষ করে যখন বেতন নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এই আর্থিক ব্যাপারগুলোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে তিক্ত করে তোলে। ‘সুতরাং এটার সুরাহা শুরুতেই করে ফেল’, তিনি আমাকে বলতেন।
তিনি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর খুব জোর দিতেন। তিনি যখন ঢাকায় পিৎজা হাটের উদ্বোধন করলেন, তখন কর্মীদেরকে দিয়ে প্রতিটি শাখার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাতেন। যখনই আমরা সেখানে খেতে যেতাম, তিনি আমার স্ত্রী শাহীনকে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘সব কিছু পরিচ্ছন্ন ছিল তো?’ বাংলাদেশে পিৎজা হাটের আউটলেটগুলো যখন এই অঞ্চলে সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল, তখন তিনি শিশুর মতো উৎফুল্ল হয়েছিলেন। দ্য ডেইলি স্টারে বোর্ড মিটিংয়ের সময় আমি খুব চিন্তায় থাকতাম কারণ যেকোনো জায়গা, এমনকি ঘরের একটি কোণও যদি সামান্য অপরিচ্ছন্ন থাকত, সেটা তার চোখে পড়ত। এ কারণে আমি মিটিংয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরিতে যে পরিমাণ সময় দিতাম তার প্রায় সমান সময় দিতাম অফিস পরিষ্কারের কাজের তদারকির পেছনে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে, যখনই কেউ তার বাসায় বেড়াতে যেতেন, প্রায় সর্বক্ষেত্রেই তিনি আগে থেকে নিচ তলার লিভিং রুমে বসে অপেক্ষা করতেন। এই ঘরটি থেকে সামনের বাগান দেখা যেত। অতিথিদের প্রতি তার থাকত সর্বোচ্চ মনোযোগ এবং পূর্ণ আতিথেয়তা। বিদায় জানানোর সময় তিনি সব সময় অতিথিদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন, প্রত্যেকের জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিতেন এবং দৃষ্টিসীমার বাইরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হাত নেড়ে শেষ বিদায় না জানিয়ে তিনি সেখান থেকে নড়তেন না।
জয়ু ভাবি (মিসেস শাহনাজ রহমান) এবং শামীম ভাই অনেক পরিশ্রম করে বাসায় নিয়মিত সামাজিক মিলনমেলার আয়োজন করতেন এবং সেসব অনুষ্ঠানকে তিনি তার সেই চিরায়ত ব্যক্তিগত ছোঁয়ার মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ, সুন্দর ও হৃদ্যতাপূর্ণ করে তুলতেন। অনুষ্ঠানে তিনি আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবার খোঁজখবর নিতেন। অতিথিরা টেবিলে সাজানো সবগুলো খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন কি না সেটি তিনি নিজে তদারকি করতেন। এরপর থাকত ভাবির নিজের হাতে তৈরি প্রচুর পরিমাণে লোভনীয় আইসক্রিম। সবার শেষে ব্যবস্থা করতেন চা ও কফির। এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর সময় তাকে দেখা যেত বিরামহীনভাবে এক অতিথি থেকে আরেক অতিথির কাছে ছুটে যেতে, যাতে সবাই তার অতুলনীয় ব্যক্তিগত ছোঁয়া খুঁজে পেতেন।
নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সবাইকে নিয়ে তার চিন্তা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে, যার প্রমাণ পাওয়া যেত অসুস্থ কোনো সহকর্মীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে। তিনি দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সব কর্মীর জন্য সেরা স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করেছিলেন। একবার প্রথম আলোর একজন ফটোগ্রাফারকে চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দেশে সব চিকিৎসার পরও যখন তাকে সুস্থ করে তোলা যাচ্ছিল না তখন তিনি নিজে সব ব্যবস্থা করেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসায় ওই ফটোগ্রাফার সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তিনি দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি তারই চিন্তা ছিল যে গাড়িগুলো শুধুমাত্র অফিসের কাজের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পরিবারের ব্যবহারের জন্যে দেওয়া হবে। মতি ভাই (প্রথম আলোর মতিউর রহমান) এবং আমার প্রতি তার পরামর্শ ছিল যে এই উদ্যোগটি সব কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মনে গৌরব ও মর্যাদাবোধ তৈরি করবে। প্রিন্ট মিডিয়াতে সেটাই ছিল এ ধরনের উদ্যোগের সূচনা এবং এটি এককভাবে শামীম ভাইয়ের দূরদৃষ্টির কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
এরপরে বলতে হয় মিটিংগুলোতে তার ব্যক্তিগত ছোঁয়ার ব্যাপারটি নিয়ে। তিনি শুধু তখনই কথা বলতেন যখন তার পালা আসত। কিন্তু যখন তিনি কথা শুরু করতেন, তখন তিনি সবার মধ্যমণি হয়ে উঠতেন। হঠাৎ করেই আমাদের হাতে সেসব প্রশ্নের উত্তর চলে আসত যেগুলো আমরা মরিয়া হয়ে খুঁজছিলাম। তার নিজস্ব চিন্তাধারার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতেন, যা ছিল একই সঙ্গে শক্তিশালী, ধারাবাহিক এবং যৌক্তিক। সত্যি বলতে, তার কোনো মতের বিরোধিতা করা বেশ কঠিন একটি কাজ ছিল, কিন্তু সেটি তিনি ভিন্নমত শুনতে চাইতেন না—একারণে নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিতর্ক করতে বেশ পছন্দ করতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ব্যক্তি-চরিত্র অনুযায়ী, অভিমতগুলো এতটাই তথ্যবহুল, অভিজ্ঞতা-প্রসূত ও উদাহরণে ভরা থাকতো যে সেগুলোর বিরুদ্ধে তর্ক করা বেশ কঠিন একটি কাজ হয়ে দাঁড়াত।
আরেকটি অসাধারণ ব্যাপার ছিল তার মহিমান্বিত উপস্থিতি। তিনি যে কাজই করতেন, কিংবা যাই বলতেন না কেন, তাতেই মর্যাদার ছাপ রাখতেন। স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি ছিলেন শান্ত ও ধীরস্থির এবং তিনি সাধারণত ঠান্ডা মাথায় কাজ করতেন। কখনও দৈবক্রমে যদি তিনি মেজাজ হারাতেন (যা কখনোই আমার ক্ষেত্রে ঘটেনি), খুব দ্রুতই ক্ষমা চেয়ে নিতেন এবং কাজের স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে আনতেন। তিনি প্রায় সব কিছুকেই গুরুত্বসহকারে নিতেন, কিন্তু এ জন্য তাকে প্রায় কখনই উদ্বিগ্ন হতে দেখা যেত না। যখন তিনি খোশমেজাজে থাকতেন, তখন হৃদ্যতাপূর্ণ হাসি দিয়ে তিনি চারপাশের সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন।
যেকোনো জায়গায় তার উপস্থিতি অর্থবহ হয়ে উঠত। তিনি যেকোনো আনুষ্ঠানিক মিটিং অথবা সামাজিক অনুষ্ঠানের পরিবেশ বদলে দিতে পারতেন শুধুমাত্র তার উপস্থিতির মাধ্যমে। তিনি নিজের এবং অন্যের সময়ের মূল্য দিতেন। এ কারণে তাকে কোন সেমিনারে বা মিটিংয়ে অতিরিক্ত সময় নিয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যেত না। বিষয়টি এমনও না যে তিনি যেকোনো বিষয়ের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। মনে হতো যেন তার যেকোনো বিষয়ের মূল ব্যাপারটি সহজে বুঝে নেওয়ার এবং সেটির ব্যাপারে সরাসরি, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের একটি সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। তিনি হয়তো খুব বিখ্যাত বক্তা ছিলেন না, কিন্তু বক্তা হিসেবে তার কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি জানতেন তিনি কি বলতে চাইছেন এবং তার ভাবনার কথা সবাইকে বোঝানোর জন্য প্রয়োজনে তিনি একই কথা বারবার বলতেও দ্বিধা করতেন না।
আমার জন্য তিনি ছিলেন একজন আলোক দিশারী। আমি তার কাছে নিয়মিত যেতাম এবং পত্রিকাটি যেসব সমস্যায় ভুগছে, সেগুলোর ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাইতাম। মাঝে মাঝে আমি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সবগুলো সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ করে দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর প্রতি আচরণ নিয়ে খুবই মর্মাহত হতাম। এক্ষেত্রে সব সময় তার উপদেশ ছিল ‘ধৈর্য ধারণ’ করা। তিনি বলতেন, ‘তুমি নিরপেক্ষভাবে এবং নৈতিকতার সঙ্গে তোমার কাজ করে যাও এবং সরকার বা বিরোধীদল কি বলছে সেটা নিয়ে চিন্তা করো না।’ তিনি কাজের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হলেও একইসঙ্গে নৈতিকতাসম্পন্ন ছিলেন। সাধারণত কোনো কিছুই তাকে খুব বেশি বিচলিত করতে পারত না, কিন্তু তিনি উদাসীনও ছিলেন না। তিনি কাজ করতে গিয়ে যেসব বাধার সামনে পড়তেন, সেসব ব্যাপারে তিনি ভালো করে জানলেও কখনও ভয় পাননি। তিনি অন্ধের মতো দেশকে ভালবাসতেন। দুর্বলতাগুলোকে স্বীকার করে নেওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস তার ছিল। তিনি একজন গর্বিত বাংলাদেশি ছিলেন, এ ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো ধরনের উন্নাসিকতা ছিল না। তিনি গভীরভাবে বাংলাদেশের সাফল্য কামনা করতেন এবং যখনই সাফল্য আসত, তিনি তা উদযাপন করতেন।
তিনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পুরো একটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, এটি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ ভাইয়ের (এ এস মাহমুদ) সৌজন্যে ১৯৮৮ সালে প্রথমবার তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই আমরা দ্য ডেইলি স্টার নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকি। সেসময় আমাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক রসায়ন কাজ করছিল, যা পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্কটিকে সহযোগী থেকে সহযাত্রী, সহকর্মী ও শেষে খুবই ভালো বন্ধুত্বে পরিণত করে। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো হয়ে যান। এই পুরো সময়টা জুড়ে তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও মুগ্ধতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল এবং তিনি তার শেষ নিঃশ্বাস নেওয়া পর্যন্ত এটি বজায় ছিল। আমাদের শেষ দেখা হয় কুমিল্লায়, তার সুন্দর গ্রামের বাড়িতে, যেখানে জয়ু ভাবির আন্তরিক আতিথেয়তা ও শামীম ভাইয়ের স্নেহমাখা কুশল বিনিময় এবং ভালোবাসাপূর্ণ কথোপকথন আমার মনে সারা জীবন একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে।
তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক যত শক্তিশালী হচ্ছিল, আমি ততই অনুভব করছিলাম তাকে ছাড়া আমি একদিনের জন্যেও দ্য ডেইলি স্টার পরিচালনা করতে পারব না। তবে আমার মনে হয় জীবন এমন একটি ইতিবাচক শক্তি যা সকল বাধা, বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা ও দুঃখজনক ঘটনাকে পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। আমরা জানি সময়ে সকল ক্ষত সেরে যায় এবং গত এক বছর ধরে আমরা এই সেরে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাচ্ছি। তবে আমাদের হৃদয়ের গভীরে আমরা জানি যে সব কিছু আর আগের মতো নেই।
তার অনুপস্থিতিতে আমরা হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যাচ্ছি, আর আমি অনুধাবন করছি একটি ঘটনাই তাকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করত এবং তা হচ্ছে আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া। আমি জানি, তিনি চাইতেন আমাদের জন্য সুচারুভাবে তৈরি করা পথটি ধরে আমরা যেন আরও দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যাই। তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন যদি আমরা সাহসিকতা ও নৈতিকতার সঙ্গে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের চেতনাকে ধারণ এবং প্রতিটি সাফল্যকে উদযাপন করতে পারি, যেমনটা করা হয়েছে আগে এবং করা হবে ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশে।
আমরা আমাদের প্রিয় শামীম ভাইয়ের রেখে যাওয়া চেতনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব যার ভিত্তি হবে সবার প্রতি ন্যায়পরায়ণ আচরণ, সততা ও নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা, যার জন্য তিনি আজীবন সাধনা করেছেন।
পাদটিকা:
দেশের দুটি প্রথমসারির পত্রিকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার অসামান্য অবদানের কথা উপরের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে উল্লেখ করা হয়নি; এখানে মূলত তার ব্যক্তিগত জীবনের গুণাবলীর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি তার সময়াসাময়িকদের থেকে সুস্পষ্টভাবে নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন।
সংগৃহীত