আসিফ আহনাফ
২০২০ এ নতুন কে স্বাভাবিক মেনেই আগাচ্ছি আমরা, পরিবর্তিত জীবনে প্রযুক্তির ব্যাবহারে অর্থনীতিকে চলমান রাখতে এবছরের মার্চ মাস থেকেই নানা রকম কর্মসূচি হাতে নিয়ে ই-কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ কে জনগণের নিত্য জীবনের অংশ করেছে ই ক্যাব।
মার্চ মাস থেকেই ঘরে থাকা জনসাধারণের দোরগোড়ায় ১৭০ টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের নিত্যপণ্য সরবরাহ করেছে ই-ক্যাব, এ সময় আমাদের সম্মুখ যোদ্ধা ডেলিভারি কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় আলাদা গাইডলাইন তৈরির পাশাপাশি, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফোনে ডেডিকেটেড চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
কিন্তু এই দুর্যোগকালীন সময়ে চাকুরী হারানো মানুষ যারা হয়তো জরুরী ত্রাণ চাইতে পারছেন না তাদের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে চালু করা হয়, ই-ক্যাব এর মানবিক উদ্যোগ “মানবসেবা ডটকম”।
শুধু এপ্রিল মাসেই সরাসরি প্রায় ১০০০ পরিবারকে মাসিক/সাপ্তাহিক জরুরী খাদ্য সেবা দেওয়ার পাশাপাশি, উম্মুক্ত সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় ই-ক্যাব।
পবিত্র মাহে রমজান এ সীমিত জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অর্থনীতি চলমান রাখতে জরুরী তথ্য সেবা ৩৩৩ এ এটুআই এর “ফোনে নিত্য সেবা” কার্যক্রমে যুক্ত করা হয় দেশব্যাপী ই-ক্যাব সদস্য উদ্যোক্তাগণ কে। রমজান ও ঈদের কেনাকাটায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার সফল ডেলিভারি হয় ই-ক্যাব এর আওতাভুক্ত কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে।
স্বাভাবিক সরবরাহ চেইন বিঘ্ন ঘটায় দুশ্চিন্তায় থাকা প্রান্তিক কৃষকদের পাশে দাড়াতে জুন মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কে সাথে নিয়ে ই-ক্যাব আয়োজন করে “আম মেলা, ই-বাণিজ্যে সারাবেলা” যার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রায় ১,৫২,০০০ কেজি আম ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহ।
পূর্বে শুরু হওয়া সকল কার্যক্রম সচল রেখে, পুরোপুরি লকডাউন এ যাওয়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর রাজাবাজার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ারী অঞ্চলে ই ক্যাব এর সদস্য ভুক্ত ৭০ টি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন জরুরী নিত্যপণ্য এবং ওষুধ সেবা প্রদান করেছেন।
মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় পবিত্র উৎসব ঈদ-উল-আযহার উপলক্ষ্যে প্রতিবছর কোরবানির হাট আয়োজিত হলেও এবার গণজমায়েত এ করোনা সংক্রমনের আশঙ্কা থাকায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ই-ক্যাবের যৌথ উদ্যোগে “ডিজিটাল হাট” এর মাধ্যমে শতাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৭ হাজার পশু বিক্রির পাশাপাশি প্রথমবারের মত সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত স্থানে কোরবানি এবং মাংস প্রসেসিং এর মাধ্যমে নিরাপদ প্যাকেজিং এ হোম ডেলিভারি করা হয়।
সব সেবা চলমান করার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও সেবা বৃদ্ধি এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ই-ক্যাব সদস্য ভুক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহকে সহজ শর্তে ব্যাংকিং লোনের আওতায় আনতে প্রাইম ব্যাংকের সাথে কাজ শুরু করে ই ক্যাব এবং ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত দশটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়।
সেপ্টেম্বরে শুরু থেকেই সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় ই-ক্যাব এবং মাত্র ৩৬ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে ৮ টি প্রতিষ্ঠান যা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়াও ৫ হাজার উদ্যোক্তাদের বিনামূল্যে অনলাইন প্রশিক্ষণ, ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এর মাধ্যমে ১৩০০ এর অধিক সদস্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে ই ক্যাব প্রায় ৬০ লক্ষ প্রত্যক্ষ উপকারভোগী তৈরি করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল অর্থনীতি তৈরির চালিকাশক্তি ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স সেবাকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ই-ক্যাব বদ্ধপরিকর।
সর্বোপরি মুজিব বর্ষে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করে পুরো কভিড ১৯ চলাকালীন ডিজিটাল অর্থনীতি চলমান রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ই ক্যাব এর সকল চলমান কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতার জন্যে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, টিসিবি, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, এটুআই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সহ আমাদের সকল সদস্য সমূহ, পলিসি প্রণেতাগণ, সকল সেবা গ্রহীতা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)