আনোয়ার ফারুক তালুকদার
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
বাংলাদেশের উন্নয়নে এস এস ই খাত যিনি উদ্যোগ নিতে পারেন তিনিই উদ্যোক্তা। তিনি সাহসী। তিনি শুধু নিজের জন্য ভাবেন না। সমাজ , দেশ এগিয়ে যাওয়ার পিছনের গল্প হল উদ্যোক্তাদের সাহসিকতার গল্প। উদ্যোক্তা শ্রেনী তৈরি না হলে বিশ্ব এত উৎকর্ষ সাধন করতে পারত না। তাই উদ্যোক্তা তৈরির জন্য রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। এই ছোট ছোট উদ্যোক্তাদেরকেই বলা হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প যা এস এস ই নামে পরিচিত। এসএমই কার্যক্রমের সঙ্গে পারিবারিক আবহে, পারিবারিক সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত কুটির শিল্পকে এসএমই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসে, যেখানে অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগও স্থান করে নিয়েছে। আজকাল এস এম ই এর পরিসর কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এস এম ই খাতের মাঝারী উদ্যোগে ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। ১০০০ এর মত মানুষ কাজ করে এমন শ্রমঘন উদ্যোগও কিন্তু এস এম ই খাতের আওতায় আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই কার্যক্রম বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএমএসএমই নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক এসএমই ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বড় বড় ঋণের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ঋণ বিতরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এসএমই ঋণ যেহেতু অপেক্ষাকৃত ছোট উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়, এজন্য ওই ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সারা দেশে সুষম অর্থনৈতিক বিকাশ সাধনে এসএমই ঋণের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করেছে। এ বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এখন সব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করছে। এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি মাইক্রো ও কটেজ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ব্যাংকঋণ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারী খাতে ঋণ পেতে গেলে ব্যবসায়ের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র, দোকান ভাড়া চুক্তিপত্র, ইন্স্যুরেন্স, জামানতনামা, ব্যবসায়ের মজুদ বিবরণী, ব্যাংক হিসাব বিবরণী, ব্যবসায়ের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ইত্যাদি থাকতে হয়। উদ্যোগ গ্রহণকারী ব্যক্তির ব্যবসায়িক জ্ঞান/প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও প্রকল্পের সফলতার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান একেবারে নতুন উদ্যোগেও অর্থায়ন করে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। দিন বদলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আওতায় বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সিএমএসএমই খাত দেশে শিল্পায়নের বিকল্প ও সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন কর।