চারটি ব্যবসায়ী উদ্যোগই তাঁর
মাত্র ১৮ বছর বয়সে সারাবান তাহুরা শুরু করেছিলেন তাঁর নিজের আইটি কোম্পানি। বর্তমানে ২৫ বছর বয়সে ৪টি সফল ব্যবসায়ী উদ্যোগ আছে তাঁর।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে সারাবান তাহুরা (তুরিন) শুরু করেন তাঁর নিজের আইটি কোম্পানি। তখন তিনি হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পলিটেকনিকের কোর্স শেষে যে ইন্টার্নশিপ করতে হয়, তা করেন নিজের কোম্পানিতেই। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিজেই সই করে কর্মদক্ষতার প্রতিবেদন দেন, ইনস্টিটিউটকে সেটা গ্রহণ করাতেও সক্ষম হন।
আর বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী সারাবানের ৪টি সফল ব্যবসায়ী উদ্যোগ আছে, দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত এবং চারটি সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত।
গ্রাফিকস ডিজাইনিং, সব ধরনের আইটি সেবা প্রদান, নতুন উদ্যোগকে সহায়তা দান ও একটি অনলাইন বাজার—এমন চারটি ব্যবসায়ী উদ্যোগ আছে সারাবানের। এর সঙ্গে তৈরি করেছেন আরও চারটি সেবাদানকারী উদ্যোগ। রক্তদাতা খোঁজা, শিশুদের প্রোগ্রামিং শিক্ষা দেওয়া, ওয়েবসাইটে ঢাকার সম্পর্কে তথ্য দেওয়া এবং গবেষক ও উদ্ভাবকদের সহায়তা—এসবই করছেন একসঙ্গে। সারাবানের প্রতিষ্ঠানে কাজও করেন তরুণেরা।
ব্যবসার পাশাপাশি সারাবান নাটক, ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ক্রিকেটও খেলেছেন। নতুন কিছু করতে আগ্রহের কোনো শেষ নেই তাঁর। উদ্যম ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার জন্য ২০১৯ বেইজিংয়ের শি লাভস টেক প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত হন তিনি। সে বছরই মালয়েশিয়ার শিক্ষা বিস্তারে সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ুথ হাবের বাংলাদেশে দেশীয় পরিচালকের পদ পান।
সারাবান বলেন, ‘এমন না আমাকে কেউ কখনো বলেনি যে আমি মেয়ে, আমি পারব না। কিন্তু এটা তাঁদের ভাবনার সীমাবদ্ধতা। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি এবং সামনেও তাই করতে চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে সারাবান। ২০১১ সালে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র সাতজন, আর সারাবানের ক্লাসে তিনি একাই ছিলেন। সারাবানের প্রথম লক্ষ্য ছিল প্রোগ্রামিং শেখা।
সারাবান পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় এসে শুরু করেন প্রোগ্রামিং ট্রেনিং। যুক্ত হন একটি সফটওয়্যার ফার্মে। সারা দিন অফিস, বিকেলে কোর্স। আর পরীক্ষার সময় রাত ১২টার বাসে উঠে হবিগঞ্জে ফেরত। পরীক্ষা দিয়ে এসে আবার ঢাকার চাকরি, কোর্স।
সারাবান বলেন, ‘আমি সব সময় রাত জেগে বাসে বসে পড়তাম। সেটাই একমাত্র উপায় ছিল আমার কাছে। বাসে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি মাথার ওপরের বাতিটা জ্বেলে পড়তে থাকতাম।’
ঢাকার কোর্স শেষে হবিগঞ্জ ফিরে ঢাকায় কোম্পানিতে যে কাজ করতেন, তা নিজের কোম্পানিতে করার চিন্তা করেন। কিন্তু তখন তো বয়স মাত্র ১৮। জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যন্ত নেই যে ট্রেড লাইসেন্স নেবেন। তার পরও সাহস করে একটা-দুটো কাজ দিয়ে শুরু করে পাস করার আগেই দাঁড়িয়ে যায় তাঁর কোম্পানি।
কারিগরি শিক্ষা শেষ করেই সাধারণত শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেন অনার্স কোর্স শুরু করার। সারাবান যে কাজ শিখেছেন তার উপযোগ করতে চান, তাই দেশে এবং বিদেশে বৃত্তি পাওয়া সত্ত্বেও অনার্স কোর্সে ভর্তি হননি।