নিখোঁজ কয়েদি আবু বকর সিদ্দিক যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত। আবু বকর সিদ্দিকের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবাদ চন্ডীপুরে।
কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, আবু বকর সিদ্দিক ২০১১ সালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফাঁসির আসামি হিসেবে কাশিমপুর কারাগারে আসেন। ২০১২ সালের ২৭ জুলাই তার সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত।।
কারাগারের ২০ কর্মচারীর ‘দোষ’ দেখছে তদন্ত কমিটি
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বিভাগীয় ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে জেলা কারাগারে পদায়ন ও কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, কারাগারের কয়েকজনের চাকরি চলে যেতে পারে। একই সঙ্গে পদাবনতি হবে অন্তত তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আগের তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো কারা কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। কিন্তু এবার কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েই তদন্ত করা হয়েছে। সুতরাং কোনো অজুহাতই এবারের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাধা হতে পারবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, তদন্ত কমিটির সব সুপারিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিলম্ব না করে দ্রুত এ বিষয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা হয়েছে, তা গুরুতর অন্যায়। এর শাস্তি পেতেই হবে।
তদন্ত কমিটি কী চায় জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেনে বলেন, কমিটির একজন হিসেবে চাই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হোক। পাশাপাশি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব থেকেও চাই দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাক। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারের কোনো কর্মকর্তা এত বড় একটি ঘটনার পর তা জানাননি। আমরা জেনেছি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে জানালে আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। যেসব অনিয়ম আমরা কারাগারের ভেতরে পেয়েছি, সেগুলোর জন্য দায়ভার সেখানকার ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নিতেই হবে।
বন্দী পালানোর ঘটনায় কারাগারে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার কী অপরাধ, তা চিহ্নিত করে সাজার বিষয়ে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে।
১. সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদ
বন্দী গণনা না মেলার বিষয়টি দুপুরে গণনার সময় বিষয়টি সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদের নজরে আসার কথা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা, যা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে গেছেন। সে হিসেবে কারা অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান এবং দায়িত্বে থাকা সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদ তাঁর দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
২. গোয়েন্দা সহকারী প্রধান কারারক্ষী আহম্মদ আলী
গোয়েন্দা সহকারী প্রধান কারারক্ষী আহম্মদ আলী, যাঁর মূল দায়িত্ব কারাগারের ভেতরে ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যাদি তাঁর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বন্দীদের ওপর নজরদারি করা। অথচ তিনি কারা অভ্যন্তরে বানানো মইটির বিষয়ে জেলার বা জেল সুপারকে জানাননি এবং সঠিকভাবে এটিকে তালাবদ্ধ করেও রাখেননি। ফলে পলায়ন করা বন্দী আবু বক্কর সহজেই মইটি পেয়ে যান এবং তা নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া
ব্রহ্মপুত্র ভবনের দায়িত্বে নিয়োজিত গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া, যিনি তাঁর নির্ধারিত এলাকায় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে কয়েদির পক্ষে মই বের করা কখনই সম্ভব হতো না। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. কারারক্ষী মনিরুল ইসলাম
ব্রহ্মপুত্র ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষী মনিরুল ইসলাম ভবনের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৫. কারারক্ষী আলী নূর
ব্রহ্মপুত্র ভবনের বাইরের গেটে ডিউটিরত কারারক্ষী আলী নূর সতর্ক থাকলেই বন্দীর মই নিয়ে যাওয়া রোধ করতে পারতেন। তাঁর কর্তব্যে অবহেলায় বন্দী পলায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৬. কারারক্ষী সজীব হোসাইন
তাঁর দায়িত্ব ছিল কারা অভ্যন্তরে প্রধান ফটকসংলগ্ন সেন্ট্রি বক্সে অর্থাৎ যে স্থানের সামনে দিয়ে মই নিয়ে বন্দী পালিয়ে যান। এখানে তাঁর দায়িত্বে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৭. নবীন কারারক্ষী আনোয়ার
আনোয়ারের কর্তব্যস্থল ছিল কার অভ্যন্তরে ১ নম্বর প্রাচীর অর্থাৎ তাঁর ডিউটিস্থল থেকে মই পড়ে থাকা বা বন্দী পলায়নের স্থান সন্নিকটে। একজন বন্দী পেরিমিটার ওয়ালে মই লাগিয়ে পালিয়ে গেলেও তিনি কিছুই দেখতে পাননি। বেশ কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখতে পান পলায়নের স্থানে একটি মই পড়ে আছে এবং তখন তিনি এবং প্রধান গেট সেন্ট্রি সজীব কয়েদি গোয়েন্দা জাকিরকে ডেকে মইটি কেস টেবিলে পাঠান। তাই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৮. কারারক্ষী ইউসুফ
কারারক্ষী ইউসুফ ৬ আগস্ট সকাল তালামুক্তি হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সশস্ত্র অবস্থায় রুফ সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিলেন এবং জেল কোড মোতাবেক তাঁকে অস্ত্রসহ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বন্দী পলায়ন রোধ করতে। কিন্তু তাঁর দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে বন্দী সহজে পলায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
৯. সহকারী প্রধান কারারক্ষী আ. রউফ
সহকারী প্রধান কারারক্ষী আ. রউফ ৬ আগস্ট সব তালামুক্তি হতে দুপুর ১২ পর্যন্ত পলায়ন করা কয়েদির আবাসস্থল ব্রহ্মপুত্র ভবন রান্নাঘর ও সেল এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। কয়েদি মই নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি রান্নাঘর এলাকায় ছিলেন বলে জানান। তাঁর এলাকায় অরক্ষিত অবস্থায় কোনো মই আছে কি না, তা তাঁর জানা ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১০. সহকারী প্রধান কারারক্ষী শওকত আলী
কোনো ওয়ার্ডে একজন বন্দী কম থাকলে সে অন্য খাতায় নিশ্চয়ই আছে বলে মনে করেন। এভাবে মোট গণনা তিনি খাতায় বুঝে নেন। বন্দী পলায়নের বিষয়ে তিনি কিছু অনুমান করতেও পারেননি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১১. কারারক্ষী রাকিবুল হাসান
কারারক্ষী রাকিবুল হাসান কারাগারের উত্তর-পূর্ব কর্নারে ওয়াচ টাওয়ারে সশস্ত্র ডিউটি করছিলেন। সঠিকভাবে কারাগারের দিকে তাঁর নজর থাকলে তাঁর পক্ষে দেখা সম্ভব ছিল একজন কয়েদি পেরিমিটার ওয়ালে মই লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সে তাঁর কর্তব্যে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১২. কারারক্ষী মো. শহিদুল ইসলাম
কারারক্ষী শহিদুল ইসলাম কারা অভ্যন্তরে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আলোচ্য পলাতক কয়েদি যখন ব্রহ্মপুত্র ভবনের সামনে দিয়ে মই নিয়ে যাচ্ছেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকজন কয়েদি এবং ডিউটিরত কারারক্ষীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন, যা তাঁর কর্তব্যে অবহেলা মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১৩. কারারক্ষী আরিফ সরকার
কারারক্ষী আরিফ সরকারের সিসিটিভি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নির্ধারিত ছিল। কারাগারের আদেশবই এবং জ্যেষ্ঠ জেল সুপারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে কারারক্ষী আরিফ সরকারকে ব্যাগেজ স্ক্যানার, মেটাল ডিটেক্টর, ওয়াকিটকি ও অন্যান্য নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দেখাশোনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তাঁর নিজের জবানবন্দিতেও দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১৪. ডেপুটি জেলার মো. ফারুক হোসেন, ১৫. ডেপুটি জেলার মো. মনির হোসেন, ১৬. ডেপুটি জেলার মো. আখেরুল ইসলাম, ১৭. ডেপুটি জেলার নূর মোহাম্মদ সোহেল।
এঁরা প্রত্যেকেই কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হলো। এ ঘটনায় তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁদের কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১৮. জেলার মো. বাহারুল ইসলাম
বাহারুল তাঁর অধস্তনদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া একজন ডেপুটি জেলারকে মৌখিকভাবে কর্ম থেকে বিরত রাখা যায় না। তাঁকে লিখিতভাবে ছুটি/বিশ্রাম দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি কর্তব্যে চরম অবহেলা করেছেন এবং চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই জেলার মো. বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হলো। উক্ত ঘটনায় তিনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁর দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
১৯. ডেপুটি জেল সুপার মো. মাহবুব কবির সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাঁর জবানবন্দির সঙ্গে তাঁর দায়িত্বের মিল নেই। তাই ডেপুটি জেল সুপার মাহবুব কবিরের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
২০. জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহানারা বেগম
দুর্ঘটনার বিষয়টি তিনি ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় জানার পরও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান পরের দিন ৭ আগস্ট; যা জেল কোডের ৭১(২) ধারামতে অগ্রহণযোগ্য। তিনি কর্তব্য পালনে অবহেলা করেছেন এবং অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে প্রমাণিত হওয়ায় জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো। উল্লেখ্য, তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। বন্দী পলায়নের ঘটনায় তিনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁর দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কারাগারের চলতি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ ধরনের ঘটনার পুনারাবৃত্তি এড়াতে বেশ কিছু করণীয় নির্ধারণ করেছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে আছে:
১. বন্দী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও বন্দী পলায়নরোধে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারাবিধি ও চাকরিবিধি অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. সব কারাগারে নিজ কারা ভবনের বাইরে কয়েদিদের কয়েদি পোশাক পরা নিশ্চিত করা।
৩. বন্দীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও পূর্ব অপরাধের ভিত্তিতে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. কারাগারে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংঘটিত হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত অবহিতকরণের ব্যবস্থা করা।
৫. কোনো কারাগারে পলায়ন সহায়ক সামগ্রী বা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যাদি না থাকে, তা নিশ্চিত করা।
৬. একই কারাগারে বা একই কর্মস্থলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দীর্ঘদিন কর্মরত না রাখা।
সূত্র: প্রথম আলো।