কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মহান জাতীয় সংসদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৫ পাশ করেন। মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ সভায় ৬ই জুলাই ২০১৫ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিলটি সংসদ কর্তৃক পাশ হয়। ১৩ মার্চ ২০১৬ খ্রিঃ মহান জাতীয় সংসদে পাশকৃত বিলটির গেজেট প্রকাশিত হয়। ১১ আগস্ট ২০১৬ খ্রিঃ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে লেঃ কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ, এলডিএমসি, পিএসসি নিয়োগ লাভ করেন এবং তিনি ১৪ আগস্ট ২০১৬ খিঃ তার পদে যোগদান করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ আগস্ট ২০১৬ খ্রিঃ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সচিব মহোদয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, কক্সবাজারে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এর দায়িত্ব অর্পন করেন। উল্লেখ্য যে, ১৭ আগস্ট ২০১৬ খ্রিঃ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার তিন জন জেলা প্রশাসক, সভাপতি হিসাবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শুরুটা কেমন ছিলো? নিশ্চয় সাজানো গোছানো কোনো যাইগায় তিনি টুপ করে আবির্ভূত হন নাই। ঢাকার অতিথিদের বিদায় দিয়ে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে টমটমে বাসায় ফিরতে হয়ে। ছোট্ট ভাড়া করা বাসায় অফিস করতে হয়েছে। মাত্র তিনজন জনবলের উপর নির্ভর করে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ।
২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট হতে ২০২৯ সালের ৫ আগস্ট এই অল্প সময়ে পাড়ি দিয়েছেন অনেকটা পথ:
সম্পাদিত প্রকল্প
কক্সবাজারের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য স্থাপন
সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প ০১
সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প ০২
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এবংকউকের উন্নয়ন সম্বলিত টেরাকোটা স্থাপন
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজারে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ
চলমান প্রকল্প
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল বিশিষ্ট অফিস ভবন
কক্সবাজার শহরস্থ ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটা পুকুর সংস্কারসহ পুনর্বাসন প্রকল্প
হলিডে মোড়- বাজারঘাটা- লারপাড়া (বাস স্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ
কক্সবাজার সদর উপজেলাধীন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১
সবুজায়ন প্রকল্প
পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন
সুগন্ধা মোড়-সুগন্ধা পয়েন্ট-লাবনী পয়েন্ট সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনকরণ
কলাতলীস্থ কউকের বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ
বাঁকখালী নদী সংলগ্ন ১৫০ ফুট প্রশস্ত সবুজ বেস্টনীসহ সড়ক উন্নয়ন
লাইট হাউজ- পাহাড়তলী- শহরের প্রধান সড়ক পর্যন্ত ২-৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণ
লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) ফোরকান আহমদ এলডিএমসি, পিএসসিকে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৪ আগষ্ট মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব মোহাঃ অলিউর রহমান স্বাক্ষরিত ২৫২ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে তাকেঁ এ নিয়োগ দেওয়া হয়।
আগামী ১৩ আগষ্ট তাঁকে ২য় বার চেয়ারম্যান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী দিন অর্থাৎ আগামী ১৪ আগষ্ট থেকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য তারঁ ৩য় মেয়াদের কার্যদিবস শুরু হবে।
গত জানুয়ারীতে সরকার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এর পদটি যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করেছে।
লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) ফোরকান আহমদ ১৯৫৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁহ ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
তারঁ পিতার নাম হাজী মোহাঃ নাজির হোসেন এবং মাতার নাম রুপবাহার বেগম।
তিনি ১৯৭৪ সালে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৬ সালে চট্রগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন।
এরপর তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন।১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, ভাটিয়ারীতে যোগদান করেন।
লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) ফোরকান আহমদ ১৯৮০ সালে সেকেন্ড লেঃ হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
১৯৯৮- ১৯৯৯ সালে তিনি ভারতের ওসমানীয়া ইউনিভার্সিটি হতে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ইন ম্যানেজমেন্ট কোর্স ( এলডিএমসি) সমাপ্ত করেন।
কমিশন লাভ করার পর তিনি বিভিন্ন পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন।
তিনি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট ডেপুটি কমান্ডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্ব ( এএসএফ) এ কর্মরত ছিলেন।
তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর ২০১৬ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু করলে তিনিই প্রথম এবং বর্তমানে ৩য় বারের মতো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম টেকসই উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। উক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কক্সবাজার ও সন্নিহিত এলাকা সমন্বয়ে একটি আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী প্রতিষ্ঠার জন্য উক্ত অঞ্চলের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল- ২০১৫ পাশের মাধ্যমে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত উক্ত আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘‘এই কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো’’ এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিগত ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ইং প্রতিষ্ঠানটির প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যদিও এই কক্সবাজার শহর এবং তৎ সংলগ্ন এলাকাসমূহ ইতোমধ্যে অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত স্থাপনা ও দূষণের শিকার হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কক্সবাজার শহরের মানুষের মধ্যে যে প্রগাঢ় ভালবাসা লক্ষ্য করেছেন তিনি তাদের সেই দেশপ্রেমই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে একটি অত্যাধুনিক ও মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী যুগোপযোগী পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার; যা ক্ষেত্রবিশেষে কারো কারো অসুবিধার কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
কউক-এর লক্ষ্য ও অঙ্গীকার, কক্সবাজারকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি পরিকল্পিত, আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের দোয়া, ভালোবাসা এবং আন্তরিকতায় রূপকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে তিনি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সহজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা ককরেছেন।
তিনি বলেন, “আমি কক্সবাজারের সন্তান হিসেবে সদা প্রস্তুত আপনাদের যেকোন অভিযোগ-অনুযোগ শোনার জন্য। এছাড়াও যেকোন সময় আমাদের ওয়েবসাইটে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে অভিযোগ ও পরামর্শ জানাতে পারেন।”