এই বছর ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে অনলাইনে রেকডসংখ্যক কুরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম মিলে প্রায় ২৭ হাজার গরু ছাগল ও অন্যান্য কুরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। অনলাইন থেকে ছবি দেখে কৃষকের বাড়িতে এসে বা খামারে এসে ক্রেতারা যে পরিমাণ গরু ক্রয় করেছেন। তার সংখ্যার হবে এর তিন থেকে চারগুন। আজ ৩১ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর এক যৌথ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। ঢাকা উত্তর কর্পোরেশন এবং ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আয়োজনে কুরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ (www.digitalhaat.net) ও সারাদেশে অনলাইনে গরু ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য উপস্থাপন করে জানানো হয় সারাদেশে আজ পর্যন্ত ২৭ হাজার কুরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। ডিজিটাল হাট, ডিজিটাল হাটের সাথে সম্পৃক্ত মার্চেন্ট ও ই-ক্যাব মেম্বারদের অনলাইনে বিক্রিত গরু, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬হাজার ৮শ। জেলাভিত্তিক সরকারী প্লাটফরম কমপক্ষে ৫ হাজার ৫শ গরু-ছাগল বিক্রির কথা জানা গিয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা এগিয়ে রয়েছে এই জেলায় সরকারী অনলাইন প্লাটফর্মে পশু বিক্রি হয়েছে ৫১৭টি। বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন এর সদস্যভূক্ত কোম্পানীর অনলাইন ফ্লাটফর্ম থেকে বিক্রিত পশু ৯ হাজার ৫শ হাজারের কাছাকাছি। বিচ্ছিন্ন অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে ৫ শতাধিক গরু বিক্রির ধারণা পাওয়া গিয়েছে। সরকারী প্লাটফরম ফুড ফর ন্যাশন ৪০০০ গরু বিক্রি ট্র্যাক করতে পেরেছে। এভাবে পুরো অনলাইন বাজারে প্রত্যক্ষ বিক্রিত পশুর সংখ্যা বের হয়ে আসছে। ধারণা করা হয় আরো লাখখানেক কুরবানির পরোক্ষভাবে এবারের বিভিন্নভাবে অনলাইন শপ থেকে বিক্রি করা হয়েছে।এবং অন্তত পাঁচলাখ গরু ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রদর্শিত হয়েছে।
ডিজিটাল হাট সম্পর্কে ডিএনসিসির মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম বলেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে গিয়ে ডিএনসিসি, আইসিটি ডিভিশন ই-ক্যাব, আইএসএসএল, ধানসিড়ি ও সাদিক এগ্রোর সম্মিলিত টিমকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। নানা ধরনের জটিল ইস্যু ছিল এগুলো তারা আন্তরিকতার সাথে সমাধান করেছে। ৪শ গরু স্লটারিং করার ব্যবস্থাপনা আমি নিজে তদারক করছি। তিনি ঈদের দিন স্লটারিং হাউজে গিয়ে স্বশরীরে পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করব। তিনি নগরবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান, তারা যেন যেখানে সেখানে গরু জবাই না করেন এবং গরুর বর্জ্য অপসারণে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঈদের ছুটির মধ্যে ১১ হাজার কর্মী তৎপর থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মেয়র বলেন, আমাদের এই উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। গরু জবাই করে মাংস ৪ কেজীর প্যাকেটে করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়ার এই প্রচেষ্টাকে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ জানিয়েছেন। মেয়র ডিজিটাল হাঁটের সাথে সম্পৃক্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ই-ক্যাব, ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন, দারাজ, নগদ, মাস্টারকার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট জনাব শমী কায়সার, বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামী কাল আমরা ক্রেতাদের কাছে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে যাচ্ছি। ক্রেতাদের সুবিধা এবং উদ্যোক্তাদের সুবিধা দুটোই আমাদের দেখতে হয়েছে। শুধুমাত্র ডিজিটাল হাট প্লাটফর্মকে ঘিরে এবার বেশ কয়েকজন নতুন অনলাইন উদ্যোক্তাও তৈরী হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন এর প্রেসিন্টে জনাব মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ধাপে ধাপে মান বজায় রাখতে হয়েছে। বিশেষ করে নতুন করে যেহেতু ক্রেতাদের এই অনলাইন ব্যবস্থায় অভ্যাস করার জন্য তাদের সন্তুষ্টিকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। কারণ তারা নতুন এই প্লাটফর্মের উপর আস্থা রেখেছেন।
ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, পুরো প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি ধাপে আমাদেরকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। সঠিক গরু এসেছে কিনা? ওজন ঠিক আছে কিনা? গরুর কোনো রোগ আছে কিনা? ক্রেতা বা খামারিরা পেমেন্ট পেলে কিনা? প্রতিটি ধাপে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে।
এটুআই এর হেড অব ই-কমার্স জনাব রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে এরকম একটি প্লাটফরম তৈরী করে সেখানে শ’খানেক উদ্যোক্তাকে সংযুক্ত করে দেশব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করে ২৭ হাজার গরু অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার এই কাজ ই-কমার্সের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
যাচাই ডট কম এর সিইও জনাব আজিজুল হক বলেন, আমরা অনলাইনে ২৩৭ টি গরু বিক্রি করেছি। আরো কিছু ক্রেতা রয়েছেন যারা অনলাইনে ছবি দেখে খামারে এসে গরু নিয়েছেন। ডিএনসিসি’র ডিজিটাল হাট ক্রেতা-বিক্রেতার আস্থা তৈরীতে যে ভূমিকা রেখেছে তার ফল সবাই ভোগ করেছে।
আজকের ডিল এর সিইও জনাব ফাহিম মাশরুর বলেন, করোনা পেন্ডামিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের উদ্যোগ সবার জন্য সুফল নিয়ে এসেছে। এখানে বিক্রির সংখ্যার চেয়ে ক্রেতাদের আস্থাটাই বড়ো কথা। ভবিষ্যতে এই আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে।
রেইন ফরেস্ট এর সিইও জাহিদুজ্জামান সাইদ বলেন, আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের গরু অনলাইনের মাধ্যমে দূরের বা শহরের ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এটাই এই উদ্যোগের সবচেয়ে ভাল দিক। প্রযুক্তি হাজারে গ্রামীণ খামারীকেও এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত করে দিয়েছে।
ডেলিভারী পার্টনার ই-কুরিয়ারের সিইও জনাব বিপ্লব রাহুল বলেন, গরু জবাই হওয়ার মাংস প্যাকিং হওয়ার আমরা ২ ঘন্টার মধ্যে ক্রেতাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেব। আমাদের গাড়ীতে আইসবক্স থাকবে যাতে মাংস ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
ঈদের তিন থেকে তিন ধরে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্লটারিং হাউজে ৩ দিন ধরে চলবে গরু জবাই, মাংস কাটা, ভুড়ি পরিষ্কার ও ৪ কেজী করে প্যাকিং করে ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেয়ার কাজ। নগরবাসীর ঈদকে স্বার্থক করতে কাজ করবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মী।