গত রবিবার Cattle Farmers Association of Alamdanga CFAOA - এর ইয়াং এন্টারপ্রেনার গ্রুপ Young Entrepreneurs Association of Alamdanga: YEAOA এর সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ঢাকা থেকে আগত eCab Enterprenership & Start-up এর স্টান্ডিং কমিটির এক্সিকিউটভ মেম্বার ও “একটি গ্রাম একটি বৃহৎ খামার”এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব জাহিদুজ্জামান সাঈদ। উনি SEAOA এর প্রধান উপদেষ্টা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা মাথায় রেখে সরকার চালু করলেন ডিজিটাল হাট।
পশুর হাটে সামাজি দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই ব্যস্ত ও জনবহুল জায়গাতে ক্রেতারা পশু কিনতে আসবেন কিনা সে বিষয়েও অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। খামারি, প্রান্তিক চাষিকে ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার এবং ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থা সাথে সম্পৃক্ত করার কথা মাথায় রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে।
আলমডাংগার প্রান্তিক গরুর চাষিদের বিষয়ে উনি আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দেন এবং আমাদের প্রান্তিক চাষিদের পাশে দাড়াতে বলেন।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর আমার বাড়ি আমার খামারের কনসেপ্টে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা “একটি গ্রাম একটি বৃহত্তম খামার কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করছি”।তার ধারাবাহিতায় এই মতবিনিময় সভা।
ইয়াং এন্টারপ্রেনার এসোশিয়েশন আলমডাংগার সাধারণ সম্পাদক মোহাই মেনুল হক আবির বলেন, আমরা তরুণরা পৃথিবীকে পাল্টে দেবার ক্ষমতা রাখি।আমরা আলমডাংগার সন্তান। আমাদের দায়ীত্ব ভালোর সাথে সম্পৃক্ত থেকে এই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া।আর তা আমরা করছি।
গরুর প্রান্তিক চাষিরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে তাই ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে সম্মৃক্ত করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের জয় সুনিশ্চিত।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক এশিয়া, কৃষি ব্যাংক,কর্মসংস্থান ব্যাংক, এন আর বি ব্যাংক এক সাথে কাজ করতে প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে।
কনসেপ্ট: একটি গ্রাম একটি বৃহৎ খামার।
পুরো গ্রাম জুড়ে গরুর খামার গড়ে তোলার জন্য একটি দিকনির্দেশনা।এ জন্য প্রথবে গ্রামের বেকার যুবকদেরকে উদ্যক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তারা হবে এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু।
তাদের উদ্যোগে যারা গরু পালনে আগ্রহী,সেই মানুষ গুলো খুজে বের করতে হবে। যেখানে গরুর থাকার ব্যবস্থা হবে।
উদ্যক্তাদের ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু জমি লিজ নিয়ে ঘাস চাষের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ঘাসের অভাব না হয়।
প্রথমে উদ্যক্তাদের প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট যোগার করে দিতে হবে, সুরু করার জন্যে।
এর বাইরে বর্গা সিস্টেমে গরু সংগ্রহ করা হবে এবং গরু পালন করা হবে। আর এ বর্গা ব্যবস্থাটি কিন্তু আমাদের দেশে হাজার বছর ধরেই চলে আসছে।
আমি শুধু এ বর্গা সিস্টেমটির আধুনিক ফরম্যাট করছি এবং এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছি। এখনো আমরা বর্গা ব্যবস্থায় গরু পালন করি।
এ ব্যবস্থায় সচ্ছল লোকেরা নির্দিষ্ট দামে একটি গরু কিনে তা একজন কৃষকের কাছে লালন পালনের দায়িত্ব দেয়। লালন পালন শেষে গরুটি বিক্রি করলে যা লাভ হয়, সেই লাভের একটি অংশ দুই পক্ষের মাঝে নির্ধারিত অনুপাতে বণ্টন হয়। একই সঙ্গে ক্রয়মূল্যটাও গরুর মালিক ফেরত পান।
এ ব্যবস্থার একটি সমস্যা হচ্ছে যেসব কৃষক গরুটি লালন পালন করেন, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা দু-একটির বেশি গরু পালন করতে পারেন না। কারণ এ দেশের অধিকাংশ কৃষকই আর্থিকভাবে একেবারেই গরিব এবং তাদের অধিকাংশই ভূমিহীন। ফলে বেশি সংখ্যক গরু পালনের মতো জায়গা, ঘাসের জন্য জমি এবং গরুর অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর মতো টাকা তাদের নেই।
এমনকি গরু পালনের মতো আধুনিক জ্ঞানও এসব কৃষকের নেই। ফলে সামর্থ্যের অভাবে এসব কৃষক যেমন বর্গা ব্যবস্থায় বেশি সংখ্যক গরু পালন করতে পারেন না, ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে গরু পালন করে খুব বেশি লাভবানও হতে পারেন না।
এ অবস্থায় এই বর্গা সিস্টেমকে আধুনিক রূপ দিলে বেশি গরু পালন করা যাবে এবং ব্যাপক আকারে গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। আর এ ব্যবস্থায় সামর্থ্যবান লোকেরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরু কিনে খামারে তা পালনের দায়িত্ব দেবে অর্থৎ বর্গা দেবে।
আর উদ্যক্তাগন নির্দিষ্ট চুক্তিতে এসব গরু লালন পালন করবে। অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় সবাই এক জায়গায় গরু বর্গা দেবে। সুবিধা হচ্ছে, যে কোনো ব্যক্তি ইচ্ছে করলে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এক বা একাধিক গরু কিনে এ খামারে বর্গা দিতে পারে।
এমনকি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইয়েরাও তাদের সামর্থ্য এবং ইচ্ছানুযায়ী এ খামারে গরু বিনিয়োগ করতে পারে। ফলে খুব সহজেই কয়েকশ গরু জোগাড় হয়ে যাবে। এভাবে অতি সহজেই বৃহৎ আকারের গরুর খামার প্রতিষ্ঠা সম্ভব, যেখানে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গরু পালন হবে।
শুধু তাই নয়, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিই ইচ্ছে করলে এ খামারে বর্গা ব্যবস্থায় গরু বিনিয়োগ করতে পারে।
বর্তমানে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবে— এ রকম লোকের সংখ্যা অনেক। একজন রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক, নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী এমনকি একজন ছোট ব্যবসায়ী— প্রত্যেকের কিন্তু ১৫-২০ হাজার টাকা সঞ্চয় আছে। অথচ এ টাকা দিয়ে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন না।
তিনি হয়তো এ টাকা ঘরের আলমারি অথবা মাটির ব্যাংকে জমা রাখেন। আর ব্যাংকে জমা রাখলে বছর শেষে হয়তো হাজার বারোশ টাকা সুদ পান, কিন্তু এ ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে ওই ব্যক্তি একটি ছোট আকারের গরু কিনে তা পালনের জন্য গরুর খামারে বর্গা দিতে পারেন।
এভাবে যে কোনো ব্যক্তি খামারে গরু বর্গা দিতে পারেন এবং এ প্রক্রিয়ায় অতি সহজেই গ্রামে গ্রামে সমবায়ভিত্তিক গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
আর প্রতিটি গরুর যাবতীয় তথ্য যেমন গরুর মালিক, এর ক্রয়মূল্য, ক্রয়ের তারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। ফলে স্বচ্ছতার সমস্যা হবে না।
কোনো কারণে যদি কোনো গরু মারা যায়, তাহলে সমিতি গরুটির ক্রয়মূল্য মালিককে ফেরত দেবে। আর এ অর্থ জোগানের জন্য প্রতিটি গরুর লভ্যাংশ থেকে একাংশ দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করা হবে।
এদিকে খামারে লালন পালনের পর গরুটি বিক্রি করে লাভ লোকসানের হিসাব-নিকাশের পর একজন ব্যক্তি নতুনভাবে পুনরায় আরেকটি গরু কিনে খামারে বর্গা দিতে পারে অর্থৎ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তবে সবার আগে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে কোনো ব্যক্তি যখন কয়েকটি গরু পালন করে, তখন তার পক্ষে গরুর রোগব্যাধি নির্মূলের জন্য একজন পশুডাক্তার নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এ ভাবে কয়েকশ গরু নিয়ে খামার প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে স্থায়ীভাবে একজন পশুডাক্তার নিয়োগ দেয়া সম্ভব।
তখন সার্বক্ষণিকভাবে গরু দেখভাল করা যাবে এবং রোগব্যাধি নির্মূল করা সম্ভব হবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সহজেই সম্ভব। আর প্রতিটি খামারের গোবর দিয়ে একটি করে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে এবং ঘরে ঘরে এ বায়োগ্যাস সরবরাহ করে জ্বালানি চাহিদা মিটবে এবং অর্থও উপার্জন হবে।