জাহিদ ইউজেড সাঈদ
নারীর ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে নারীরা তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের যোগ্যতা ও অর্জনকে তুলে ধরতে পারেন এবং পরিবার, সমাজ বা গণজীবনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও অবস্থানকে তুলে ধরেন। নারীর ক্ষমতায়ন মূলত অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং রাজনৈতিক অবকাঠামোতে অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি মাধ্যম বা উপায়, যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রকাশ করতে পারেন এবং নিজেদের অধিকারগুলো আদায়ে সচেষ্ট হতে পারেন।
আলমডাংগার বাজার থেকে ১০ মিনিটের পথ কালিদাসপুর।
মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদ। যা এখন জি কে প্রজেক্ট নামে খ্যাত। একদা সারাক্ষন পানিতে টইটম্বুর।
[গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি-কে প্রজেক্ট) গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে (বাংলাদেশের ভূখন্ডে) সেচের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত একটি প্রকল্প। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং মাগুরা জেলার ১,৯৭,৫০০ হেক্টর জমি এ সেচ কার্যক্রমের আওতাভুক্ত। এর মধ্যে ১,৪২,০০০ হেক্টর জমি সেচযোগ্য। উল্লিখিত চারটি জেলার সর্বমোট ১৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত। উপজেলাগুলি হলো - কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা, চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুন্ড, শৈলকূপা, মাগুরা সদর, শ্রীপুর এবং দৌলতপুর। প্রকল্পের ভৌগোলিক সীমারেখা উত্তরে গঙ্গা ও গড়াই নদী, পূর্বে গড়াই-মধুমতি, দক্ষিণে নবগঙ্গা এবং পশ্চিমে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এ প্রকল্পের বিশেষত্ব হলো, গঙ্গা নদী থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি তুলে সংযোগ খাল ও নালার মাধ্যমে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নকে এ প্রকল্পে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে শস্যের অধিক ফলন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৫১ সালে পরিচালিত প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রস্তাবিত জি-কে প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ১৯৫৪-৫৫ অর্থ বছরে। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় স্থানীয় কিছু উন্নত জাতের ধান চাষ করা হয়। ওই সময়ে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধান চাষ এ অঞ্চলে বিশেষ পরিচিত ছিল না এবং এ ধানের বীজও সহজপ্রাপ্য ছিল না। জি-কে প্রকল্পের কল্যাণে উফশী ধানের চাষ অল্পদিনের মধ্যেই এ এলাকার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বিশেষ করে খরিপ-১ মৌসুমে (মার্চ-জুন) উফশী আউসের চাষ এবং খরিপ-২ (জুলাই এর মধ্যবর্তী সময় থেকে নভেম্বর) মৌসুমে উফশী আমনের চাষ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়।]
এক পাশে সাদা ব্রিজ আর এক পাশে লাল ব্রিজ। সাদা ব্রিজ মানুষ সাথে যানবাহন চলাচলের, লাল ব্রিজ ট্রেন চলাচলের।এখন অবশ্য লাল ব্রিজের কোল ঘেরে মানুষ, যানবাহন চলাচলের আরো একটা ব্রীজ। ব্রীজ পেরুলেই দেশের দ্বীতিয় বৃহত্তম গৌ হাট মানে গরুর হাট।
একসময় এখানে ব্যবসা বাণিজ্য বলতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের আড়ৎদারিকেই বোঝাতো।যদিও তাঁত শিল্পের ব্যাপক প্রভাব ছিলো এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে।যা এখন বিলুপ্ত প্রায়।
ইদানিং এখানে গবাদিপশু পালন বেশ বিস্তার লাভ করেছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি অধিকাংশ বাড়িতে গরু লালন-পালন করা হয়ে থাকে। বছর ধরে ধারদেনা করে গৃহস্থরা গরুর খাবার কিনে থাকেন। অনেকে আবার বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়েও গরু কেনেন। কেরবানি ঈদে সেই গরু বিক্রি করে ঋণ শোধ করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি অধিকাংশ বাড়িতে গরু লালন-পালন করা হয়ে থাকে।এ ব্যাবসাটি মূলত পরিবারের নারী সদশ্যদের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। বছর ধরে ধারদেনা করে গৃহস্থরা গরুর খাবার কিনে থাকেন। অনেকে আবার বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়েও গরু কেনেন। কোরবানি ঈদে সেই গরু বিক্রি করে ঋণ শোধ করেন। কিন্ত এবছর করোনা ভাইরাসে কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে আলমডাঙ্গার হাজারো কৃষক পরিবারের।
আলমডাঙ্গার কুমারি গ্রাম,নাগদাহ ইউনিয়নের জাঁহাপুর গ্রামের ঈদকে সামনে রেখে বিক্রির জন্য প্রস্তত অর্ধশতাধিক গরু। কিন্ত গরুর হাট বন্ধ থাকায় বেচাকেনাও বন্ধ। এ বছর ব্যাপারীরা কেউ আসছেন না।
চরপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক ডাবলু জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়িতে তিনটা গরু লালন-পালন করে বড় করেছেন। দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আর বাড়ির টাকা মিলে তিনটা গরু কিনেছেন। গরুর খাবার বাকিতে কিনছেন আলমডাঙ্গা শহরের একটি আড়ত থেকে। গরু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারলে বেকায়দায় পড়তে হবে।
কালিদাশপুর গ্রাম, আনোয়ার ও সাহেরা বানু এই গ্রামেরই বাসিন্দা। তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। পাশে শহর থাকার কারনে স্বামী ছোটখাটো ব্যাবসা সহ পরিবারটির একাধিক আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে গরু ও মুরগি পালন।
শুক্রবার বিকেলে নিজ বাড়ির আঙিনায় কথা হয় আনোয়ার ও সাহেরা বানুর সঙ্গে। সাহেরা বানু তখন গরু নিয়ে ব্যস্ত। তিনি জানালেন, স্বামী সারাদিন ব্যাবসার দৌড়াদৌড়িতে করে ক্লান্ত থাকেন। তাই ঘরের কাজের পাশাপাশি তিনি গরু ও মুরগি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। আনোয়ার দাবি করলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় বাজারে থাকেন তিনি। গরু-মুরগি তো বাড়ির আঙিনাতেই থাকে। এটুকু কাজ তার স্ত্রী করতেই পারে। তা ছাড়া সারাদিনে সাহেরা বানুর তেমন কাজও থাকে না।
শুধু সাহেরা বানু নন; অধিকাংশ গ্রামীণ নারীরা এভাবে ঘর-গৃহস্থালির পাশাপাশি গরু পালন করছেন। নারীদের এই অবদান পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এর পপজিটিভ প্রভাব পড়ছে। জাতীয় পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন। গ্রামে নারীদের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে। গ্রামীণ নারীদের অবদানের কারনে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাচ্ছে।
যার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রবেশযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে।