অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা মাথায় রেখে সরকার চালু করলেন ডিজিটাল হাট।
পশুর হাটে সামাজি দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই ব্যস্ত ও জনবহুল জায়গাতে ক্রেতারা পশু কিনতে আসবেন কিনা সে বিষয়েও অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। খামারি, প্রান্তিক চাষিকে ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার এবং ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থা সাথে সম্পৃক্ত করার কথা মাথায় রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে।
করোনার কারণে ডিজিটাল মাধ্যমকেই অনেকে বেছে নিচ্ছেন পশু কেনা-বেচার জন্য। অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে সরকারিভাবে এবারই প্রথম অনলাইনে বসছে পশুর হাট।
এটি হবে সরকারি উদ্যোগে দেশের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাট। এই হাটে ক্রেতারা ঘরে বসেই গরুর ছবি-ভিডিও দেখা ও লাইভ ওজন জানার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে গরু চাষি, খামারি বা বেপারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ পাবে ক্রেতা। এরপর নির্দিষ্ট স্থান থেকে অথবা হোম ডেলিভারির ভিত্তিতে টাকার বিনিময়ে গরু সংগ্রহ করতে পারবেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
এক প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, “এক্ষেত্রে হটস্পট চিহ্নিত করে দিলে সুবিধা হবে। যেসব জায়গায় সংক্রমণের সম্ভবনা রয়েছে তা পরিহার করতে হবে। এছাড়া গ্রামে এক জায়গায় হাট না করে বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে, উপায় নেই। কোরবানি দিতে হবে এই বিবেচনায় এই ব্যবস্থা। আগামী দিনগুলোতে এসব প্ল্যাটফর্মে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমিও এভাবে কোরবানি দিতে চেষ্টা করব।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “যে পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে তা যথেষ্ট বরং বেশি পশু রয়েছে। গতবারও ভারত থেকে দেশে পশু আসেনি। এবারও ভারত থেকে কোনো পশু দেশে প্রবেশ করবে না।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “মহামারীকালে অনলাইনে মানুষের কেনাবেচা বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরে এ খাতে আরো কয়েক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কোরবানির হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু কেনায় সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে।”
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “একটি গরু কেনার পর প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় পশুর স্বাস্থ্য নিয়ে একটি সনদ দেবে। মাংস দান করার বিষয়ে সহযোগিতা চাইলেও সে ব্যবস্থা করা হবে। এ হাটে পশু কিনলে কোনো হাসিল লাগবে না। পশু কেনায় নগদ প্ল্যাটফর্মে কম চার্জে মূল্যে পরিশোধ করা যাবে।”
ঈদের প্রথম দিন ৪০০, পরের দিন এক হাজার এবং তৃতীয় দিন ৬০০ কোরবানির পশু প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান উত্তর মেয়র।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “চামড়ার দাম নিয়ে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্লটার হাউজগুলোর দিকে নজর দিতে হবে যেন ভালোভাবে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।”
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, “অনলাইনে পশু কেনায় আস্থার জায়গা তৈরি করতে চাই। প্রান্তিক চাষি ও খামারিদের সমৃক্ত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালারে গরুর ডিজিটাল হাট।এছাড়া লেনদেনের সুবিধার্থে এ প্ল্যাটফর্মে ৫০টি পেমেন্ট গেইটওয়ে সংযুক্ত রয়েছে।”
যে প্রক্রিয়ায় পশু কেনা ও কোরবানি
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, কিছুদিনের মধ্যে এ সাইটে বিক্রির জন্য পাঁচ হাজার গরুর তথ্য আপলোড হয়ে যাবে।
যেহেতু মাত্র দুই হাজার পশু প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা রয়েছে তাই আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে এখানে অর্ডার নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তমাল বলেন, পশু প্রক্রিয়াজাত করতে মূল দামের ২৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে ক্রেতাদের। এখান থেকেই সব ধরনের খরচ যেমন পশু পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে প্যাকেট করে বাসায় পৌঁছানো খরচ বহন করা হবে।
আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, ডিজিটাল হাট ওয়েব সাইটে গিয়ে যে কেউ গরু পছন্দ করে অর্ডার দিতে পারবেন। বর্তমানে আটটি ই-কমার্স সাইট এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে।
ওয়েবসাইটে পশুরর ওজন থেকে শুরু করে সব তথ্য দেওয়া রয়েছে। অনলাইন পেমেন্ট, এমএফএস নগদ বা ক্রেডিট কার্ডে এ মূল্য পরিশোধ করা হবে। মূল্যে পরিশোধ করা হলেও পুরো টাকা গরু বিক্রেতাকে দেওয়া হবে না। পশুর স্বাস্থ্য সনদ নিশ্চিত হওয়ার পর সেই টাকা পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে ক্রেতা সুস্থ পশু কেনায় নিশ্চয়তা পাবেন।
ক্রেতা বাসায় পশু নিতে চাইলে বা প্রক্রিয়াজাত মাংস চাইলে সেই ভিত্তিতে অর্ডার দিতে পারবেন। কবে পশু নিতে চান সেই বিষয়টি অনলাইনে পশু কেনার সময় ক্রেতার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হবে।