সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ঢাকার বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক মিশনে কর্মরত বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ নেই। তাদের এদেশীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এ তথ্য জানান। ওইসব মিশনকে এ বিষয়টি জানিয়ে ইতোমধ্যে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইসি সচিব জানান, কেউ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও তিনি বাংলাদেশি নাগরিক হলে স্থানীয় পর্যবেক্ষক হবেন। এটা হলো আমাদের নির্বাচনি বিধি। তারা আন্তর্জাতিক হিসেবে বিবেচিত হবেন না, স্থানীয় হিসেবে হবেন। তাদের সেইভাবে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হতে হলে তাদের মিশনের লোক হতে হবে। বাংলাদেশি নাগরিক মিশনে কর্মরত হলে তারা পর্যবেক্ষক হতে পারবেন। আমরা যাদের অনুমোদন দিয়েছি তারা সবাই পর্যবেক্ষণ করতে পাববেন।’ বাংলাদেশি নাগরিকের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নোট ভার্বাল দেওয়া হয়েছে বলেও সিইসি জানান।
এর আগে শুক্রবার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হলো তা জানেন না। আইন মতে, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যারা হন তারা কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হতে পারেন না। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে অবশ্যই বিদেশি হতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের বাংলাদেশি কর্মীদের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে এবং আইনের ভঙ্গ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বিদেশি নাগরিক হতে হবে। তারা তাদের নাগরিককে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বানাক আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক আছে। সেটাও যদি তারা বলে তাহলে কোনও সমস্যা নেই।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচটি ইমাম বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। বিশেষ দেশের কেউ যেন এখানে মাতবরি না করেন। অন্যান্য দেশে এমন কোনও সুযোগ নেই। অন্য দেশে তাদের অনেক বিধিনিষেধ থাকে। অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। অনেক সময়ে অনেকেই অনেক কথা বলে ফেলেন, যাতে মনে হয় আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর কটাক্ষ করে ফেলেন।’
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশি ডিপ্লোম্যাটদের ব্যাপারে যে নিয়মকানুন সেটি তাদের এদেশীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হতে পারে না। কারণ তারা তো আমাদের এদেশের মানুষ। তাদের বেলায় আইনকানুন যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই যেন মেনে চলা হয়। তারা যেন মনে করেন না তারা অনেক কিছুই করতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশনের গণসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঢাকার বিদেশি দূতাবাস এবং হাইকমিশনে কর্মরত ৭৪ জন কর্মকর্তাকে (বিদেশি নাগরিক ৪৬ জন, দেশি ২৮ জন) নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কমিশন অনুমোদন দিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন দূতাবাস, ব্রিটিশ হাইকমিশন, নেদারল্যান্ডস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, জাপান দূতাবাস, ডেনমার্ক দূতাবাস, নরওয়ে দূতাবাস, অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন ও কানাডা হাইকমিশন এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দিয়েছে। এদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া বাদে সব দেশের পর্যবেক্ষকদের মধ্যে তাদের দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরা রয়েছেন