ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে পরিচিত সবজি ব্রোকলি চাষ করে গতবার সাফল্য পেয়েছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভের কারণে এবারও তারা ঝুঁকেছেন ব্রোকলি চাষে। দেখতে ফুলকপির মতো আকৃতির এই সবজির রঙ সবুজ। সেজন্য স্থানীয়রা অনেকে একে ‘সবুজ ফুলকপি’ হিসেবেও অভিহিত করেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের ১২ জন কৃষক ছয় বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এই মৌসুমে ইমন হোসেন নামে এক যুবক একবিঘা জমিতে ব্রোকলির আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখান থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকার ব্রোকলি বিক্রি করবেন। একেকটি ব্রোকলি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
ব্রোকলি চাষ প্রসঙ্গে আরও জানা যায়, গত বছর সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের তরুণ কৃষক মাসুদ হোসেনসহ পাঁচ জন কৃষক মিলে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় জেলায় প্রথমবারের মতো দেড় বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করে ভালো ফলন পান। ব্রোকলি বেচা-বিক্রি ভালো হওয়ায় এবং দাম ভালো থাকায় চলতি মৌসুমি আরও সাত জন কৃষক ব্রোকলি চাষ করেছেন।
কৃষক ইমন হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ব্রোকলির আবাদ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একেকটি ব্রোকলি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছি। এতে যে পরিমাণ লাভ, তাতে আগামীতে ব্রোকলির আবাদ বাড়াবো।’
কৃষক মাসুদ হোসেনের বাড়ি তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামে। কৃষক বাবার পথ অনুসরণ করেই তিনি কয়েক বছর ধরে কৃষিকাজ শুরু করেন। গতবার প্রথম তিনি শুরু করেন ব্রোকলির চাষ। এবছর তিনি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহয়তায় ১০ কাঠা জমিতে ব্রোকলির আবাদ করেছেন। তাতে খরচ হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে।
কৃষক মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরা আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজে থেকে পাশ করে চাকরির জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘুরে চাকরি না পেয়ে বাবার সঙ্গে কৃষি শুরু করি। গত বছর একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় মাত্র ৮ শতক জমিতে ব্রোকলি চাষ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক হাজার দুইশ টাকা। সেখান থেকে আমার আয় এসেছে ১৫ হাজার টাকা।’
নগরঘাটা এলাকার তরুণ চাষী মাসুদ হোসেন। তিনি একজন শিক্ষিত চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচতি। তার বাবার পথ অনুসরণ করে কৃষি কাজ শুরু করেন। এবছর ব্রোকলি চাষ করে সফল হয়েছেন। শুধু মাসুদ নয় উপজেলার আরও কয়েকজন চাষি এই ব্রোকলি চাষ করে বাণিজ্যিকভালো লাভবান হয়েছেন। তারা সবাই আগামী মৌসুমে ব্রোকলির আবাদ বাড়াবেন বলেও জানান।
বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন হোসেন বলেন, ‘গত বছর আমাদের পরামর্শে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের পাঁচ কৃষক ব্রোকলি চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিলেন। তাদের সাফল্য দেখে চলতি মৌসুমে ১২ জন কৃষক ৬ বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করেছেন। এটি ‘ফুলকপি’ পরিবারের একটি নতুন শীতকালীন সবজি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশের মানুষ এর সঙ্গে তেমন পরিচিত নয়। তবে ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পুষ্টির দিক দিয়েও ব্রোকলি অনেক সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্রোকলির গুণ রয়েছে। ব্রোকলি ক্যান্সার প্রতিরোধী সবজি হিসেবে পরিচতি লাভ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘায় পাঁচ হাজার চারা রোপণ করে মাত্র ৫০-৬০ দিন পরই ৬২ মণ ব্রোকলি উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি বিঘায় ৫ হাজার পিস ব্রোকলির জন্য ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৭৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। শতক প্রতি জমি তৈরি, বীজ, সার ও অন্যান্যসহ সর্বোচ্চ মোট খরচ এক হাজার টাকার কম, যা অন্যান্য সবজি বা ফসল চাষের তুলনায় বেশি লাভজনক।’
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ব্রোকলি আমাদের দিকে একটি অপরিচিত সবজি। তবে খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি এমন একটি সবজি যাতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম; কিন্তু ভিটামিন, মিনারেল আর ফাইবারে পরিপূর্ণ। ব্রোকলিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম, যা স্নায়ুতন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ করে একে সুস্থ আর রোগমুক্ত রাখে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘ব্রোকলি এই অঞ্চলের মানুষের কাছে কিছুটা অপরিচিত সবজি। তবে কৃষকদের জন্য এটি লাভজনক।’ আগামী এই চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।