Abdul Zabbar Khan
০০৭
সাত দিনের জায়গায় দশ দিন পার করে, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরলাম।
সারাদিন সি বিচে আর রোদে ঘুরে ঘুরে, সবার গায়ের রং মোটামুটি কয়লা টাইপ হয়ে গেছে। যার সাথে দেখা হয়, আঁতকে ওঠে।
ফেরার আগে পার্টনার বন্ধুকে ফোন করে জানিয়েছি। ক্ষুদ্ধ কন্ঠে সে জানালো যে আমার ফোন বন্ধ থাকায় তার উপর রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে। আমাদের সেলস এজেন্টরা নাকি বিদ্রোহ করেছে।
এরকম দায়িত্ব জ্ঞানহীন লোকের সঙ্গে ওরা নাকি আর কাজ করতে ইচ্ছুক নয়।
আমি ফোনেই তাকে বললাম,
: বন্ধু, সেলস এজেন্ট আমি তৈরি করেছি। ওরা আমাকে তৈরি করেনি। এসব ফালতু বিষয় নিয়ে ভাবার দরকার নেই।
আসি আগে, বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেবো।
ফেরার পরদিন, যথারীতি অফিসে গেলাম।
দেখলাম, আমার বন্ধু খুব চিন্তিত মুখে বসে আছে। তাকে আমি ভরসা দেয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম,
: লোকজন কোথায়? এজেন্ট দেরকে চায়ের দাওয়াত দিতে বলেছিলাম। কোথায় ওরা? কেউই আসেনি?
: নারে দোস্ত। আমি সবার সঙ্গে রাতেই কথা বলেছি। ওরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পরে সময় পেলে আসবে বলেছে।
আমি একটু মন খারাপ করেই বললাম,
: ঠিক আছে। এখন আর কাউকে কিছু বলিস না। সময় দে। একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের বিজনেস টা এজেন্টের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল।
তাই নতুনদের দিকে নজর দিতে হবে।
সে মাথা ঝাঁকালো।
আমি ড্রয়ার থেকে নগদ কিছু টাকা বের করে বললাম,
: এখানে আড়াই লাখ টাকা আছে। একটা খামে ভরে, এই টাকাটা জলিল ( ছদ্মনাম ) ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এটা ওনার প্রাপ্য কমিশন। অনেক ওজনদার মানুষ। তাই ফোন করে তাগাদা দেননি।
আমি ভীষণ টায়ার্ড। তুই একটু কষ্ট করে এটা ভাইকে পৌঁছে দিবি। আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যা!
বন্ধু শশব্যস্ত হয়ে বললো,
: নো প্রবলেম। এটা নিয়ে তুই কোন চিন্তা করিস না। আমিই পৌঁছে দেবো।
বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার আগে, আবার বন্ধুকে সব বুঝিয়ে দিলাম। বারে বারে বলে দিলাম যে আড়াই লাখ টাকার হিসাব টা যেন বুঝিয়ে বলে।
ড্রাইভার তোতা মিয়া, রাতে গাড়ি ক্লোজ করার সময়, হাত কচলাতে কচলাতে একটা কথা বলার অনুমতি চাইলো।
আমি অনুমতি দিলাম।
: স্যার, আপনি তো আমার সামনেই, আপনার পার্টনার কে আড়াই লাখ টাকা, মানে পাঁচটা বান্ডেল দিলেন। উনি কিছুদূর গিয়েই, খাকি খাম থেকে তিনটা বান্ডেল বের করে, তার কোটের পকেটে ভরে ফেলেছেন। আমার সন্দেহ, উনি ওই তিনটা বান্ডেল জলিল স্যারকে দেন নাই।
তোতা মিয়ার কথা শুনে আমি হতভম্ব।
বললাম,
: তুমি এতো শিওর হলে কিভাবে?
: স্যার, কি যে বলেন! রিয়ার ভিউ মিররে সব দেখা যায়। ওনার কাজে কর্মে, আগে থেকেই আমার একটু সন্দেহ ছিলো। তাই ভালো কইরা নজর দিয়া দেখছি।
আপনেরে আমি চিনি। মানুষকে খুব বেশি বিশ্বাস করেন। সাহস পাই না কিছু কইতে।
আজকে আর পারলাম না। সাহস কইরা বইলা ফালাইছি।
আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
পরদিন সকালে, একাই গাড়ি নিয়ে জলিল ভাইয়ের অফিসে চলে গেলাম।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিশাল অফিস।
উনি তখনকার সময়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।
নানাশ্রেণীর লোকজনে ভরা থাকে তার অফিস। আমাকে দেখেই হৈচৈ করে উঠলেন।
: কুসুম, আমি তো তোমাকে একটু পরেই ফোন করতাম। কথা অনুযায়ী আমি আড়াই লাখ টাকা পাই। দিলা মোটে এক লাখ। বাকিটা কি মেরে দিলা?
আমার টাকা মেরে হজম করতে পারবা?
বলে, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
কথা বলতে বলতে, ইশারায় সব লোকজনকে রুম ছেড়ে যেতে বললেন।
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম,
: মেরে দিলে কি আর এখানে আসতাম?
আপনি ওকে ফোন করে এখানে আসতে বলেন। আপনারই তো চামচা। পলিটিকাল চামচাদের কি ধরনের ট্রেনিং দিচ্ছেন, আজই প্রমাণ হয়ে যাবে।
ঘটনাতো শুধু দেড় লাখের না ভাই।
আমার বিশ্বাসের জায়গাটা সে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে কতো টাকা মেরেছে, কে জানে?
আমি যে এখানে আছি, এটা বলবেন না।
উনি ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ হয়ে গেলেন। বললেন,
: আমি অলরেডি বুঝে গেছি। তোমাকে দেখেই আমি কাজটা করে দিয়েছি। ওর মতো টাউটকে আমি কোনদিনই বিশ্বাস করিনি এর আগে।
ঘন্টাখানেক পর আমার বন্ধু খুব হাসিখুশি ভাবে জলিল ভাইয়ের রুমে এসে ঢুকলো। সালাম দিলো ওনাকে। তারপর আমাকে দেখেই চমকে উঠলো। মুখের হাসি গায়েব।
জলিল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
: কুসুম এখানে আছে, আগে বলেন নাই কেন? চালাকি করলেন?
জলিল ভাই তার দিকে তাকিয়ে খুব শক্ত গলায় বললেন,
: কুসুমের মতো উপকারী একজন বন্ধুর সাথে, তুমি এই গাদ্দারিটা কেমনে করলা?
ও তোমাকে ফুটপাত থেকে নিয়ে এসে, জাতে তুলে দিয়েছে।
সবাই জানবে। তোমার রাজনীতি তো শেষ হয়ে গেল। বাকি দেড় লাখ টাকা এখনই গিয়ে নিয়ে আসো। তড়বড় করলে, পোলাপান পাঠামু। হাড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা দিয়া টাকাটা নিয়া আসবো। কোনটা চাও?
ভয়ে মাথা নত করে সে বললো,
: আমি এখনই গিয়ে নিয়ে আসছি।
০০৮
মাত্র আড়াই লাখ টাকা থেকে, দেড় লাখ টাকা মেরে দেয়াটা, ভয়াবহ একটা ব্যাপার।
অনেকটা, অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতোই হাই পারফরম্যান্স।
সেদিন আর অফিসে যাইনি।
অনেক মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছি।
আমার স্ত্রী সুমিকে আগের রাতেই ঘটনাটা শেয়ার করেছিলাম। তাই এটা নিয়ে সে আর কোন প্রশ্ন না করে রেস্ট নিতে বললো।
পরদিন একাই অফিসে গেলাম।
বন্ধুটি গেটে দাঁড়িয়েছিল, গাড়িতে উঠবে বলে। আমি তাকে রিকশায় করে অফিসে আসতে বললাম। এটাও ক্লিয়ার করে দিলাম যে আমার বাসা এবং গাড়ি, দুটোই তার জন্য ব্যান্ড করে দিয়েছি।
লাঞ্চের পর আমরা মিটিং এ বসলাম।
আমি চুরির ঘটনায় গেলাম না।
বললাম,
: এজেন্ট রা আসছে না কেন? তোকে তো এটা নিয়ে ভাবতে দেখছি না। কোন গোপন ঘটনা আছে নাকি?
সে খুবই আহত হবার অভিনয় করলো।
: তুই আমার বন্ধু হয়ে এটা বলতে পারলি?
আমি তোর কাছে গোপন করবো কেন?
করে লাভ কি?
আমি খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বললাম,
: টাকাগুলো তো গোপনেই মেরেছিলি।
তাই জিজ্ঞেস করছি, কোথায় কি কাহিনী করে বসে আছিস, জানা দরকার।
এই কথাটায় সে খুব উষ্ণ হয়েই বললো,
: দেখ কুসুম, কথায় কথায় আমাকে চোর বানানোর চেষ্টা করবি না। জলিল ভাইয়ের সাথে আমার পার্সোনাল লেনদেন ছিলো। ওনার কাছে আমি টাকা পেতাম। সেই টাকাটা অ্যাডজাস্ট করেছিলাম। এটা নিয়ে এতো নাটক হবে, জানতাম না।
আমি খুব ঠান্ডা গলায় বললাম,
: তাই নাকি? ওখানে তো এসব লেনদেনের কথা কিছুই বলতে পারলি না। যাই হোক, আমি নিজেই সবাইকে সন্ধ্যায় আসতে বলেছি। ওরা আসবে।
বন্ধুটি একথায় খুব ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
: ওদের সাথে যোগাযোগ করা তো আমার দায়িত্ব। তুই এখানে নাক গলাচ্ছিস কেন?
: আর গলাবো না। হয়তো এটাই শেষবার।
বকবক না করে আমার সামনে থেকে বিদায় হ!
সন্ধ্যায় এজেন্টদের সাথে মিটিং এ বসলাম।
দেখলাম, আমার বন্ধুর নেতৃত্বে ওরা আগে থেকেই একটা জোট গঠন করে বসে আছে।
ওদের ইচ্ছে ছিলো, আরও কিছুদিন এটা গোপন রাখবে। কিন্তু আমার তাগাদায় ওরা এটা পরিষ্কার বলে দিলো।
বললো যে, ওরা এখন থেকে আর আমার কাছ থেকে কিছু নেবে না। আমি নাকি প্রফিট বেশি করি।
তাছাড়া, আমার বন্ধুটি আমাকে এই ল্যান্ড বিজনেস শিখিয়েছে। তার অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে বেশি। সুতরাং ওস্তাদের সঙ্গে সরাসরি ডিল করাই ভালো।
আমি বুঝে গেলাম যে আমরা কক্সবাজারে বেড়াতে যাবার পর পরই এই জোট গঠন করা হয়েছে। মিটিং এ বেশিরভাগ সময়ই বন্ধুটি আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলো না। সারাক্ষণ মিটিং শেষ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছিলো।
আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম,
: এটা জমিজমা, প্লট নিয়ে ব্যবসা। এসব কাগজপত্র সবাই বোঝে না। বন্ধুর দিকে ইশারা করে বললাম, এই ওস্তাদ এগুলোর ব্যাপারে একদম জিরো। রাস্তা থেকে ধরে এনে চেয়ার দিয়েছি। ধাক্কা খেয়ে বুঝবেন। চাল, ডাল, আলু পটলের ব্যবসা এটা না।
এজেন্টদের মধ্যে সিনিয়র এবং বেশ ধনী একজন, আমার এই লেকচার শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,
: কি বোঝাতে চান আপনি? আমরা আপনাকে বেছে নিতে পেরেছি। উনি যদি নাও পারেন, আমরা কি আরেকজন কুসুম তৈরি করে নিতে পারবো না? কিন্তু আমরা চলে গেলে, আপনার ব্যবসা খতম!
আমি হেসে বললাম,
: আপনার মতো বড় মাপের একজন মানুষ, আমাকে বেছে নিয়েছেন, এটায় এমন কি কৃতিত্ব আছে? আমি যে আপনাদের মতো বড় বড় সব মানুষকে আমার ব্যবসায় কাজে লাগাতে পেরেছি, এটাই আসল ক্রেডিট। এটা আমি আবারও পারবো।
বলে, মিটিং শেষ করে দিলাম।
০০৯
পরের কয়েকটা দিন একটু দেরি করে অফিসে গেলাম। আসলে, বন্ধু নামের ওই চোর টা গাড়িতে লিফট চাইতে পারে, এই অস্বস্তিটা ছিলো। তাই একটু দেরি করে যাওয়া।
একদিন আমার একটু বেশি দেরি হয়ে গেল। ওই চোরের মা এবং তার বোন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।
ড্রইং রুমে বসালাম। ওর মাকে আমি খালাম্মা বলে ডাকতাম।
অবশ্য একই বাসায় থাকি বলে, ওরা প্রায়ই আসে আমাদের ফ্ল্যাটে।
উনি একটু উসখুস করে জানতে চাইলেন যে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। আমি সব ঘটনা বলে দিলাম।
খালাম্মা খুবই নামাজী মহিলা।
তাকে সবসময় আমি ভালো মানুষ বলেই জানতাম। শেষ পর্যন্তও উনি সেই পরিচয়টাই দিলেন।
বললেন যে এই স্বভাবের জন্যই তার ছেলে, সব জায়গা থেকেই বিতাড়িত হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত কিছু করতে পারেনি।
ওর আপন মামারা, অনেক ধণী হওয়া স্বত্ত্বেও, তাদের ব্যবসা থেকে বের করে দিয়েছে।
এই প্রথম একটু নিশ্চিন্ত হতে যাচ্ছিলেন।
কপালে সুখ সইলো না। এগুলো বলতে বলতে ভদ্রমহিলা কথা কেঁদে ফেললেন। তার বোনকেও দেখলাম যে কোন বাদ প্রতিবাদ করলো না।
বোঝা গেল, ভাইয়ের স্বভাব সম্পর্কে সেও ভালোই জানে।
আমি ওদেরকে বলে দিলাম যে আমরা বাসা বদলে জিগাতলায় চলে যাবো।
কোন ঠিকানা দেবো না। কারণ, আমি এরকম নিমকহারামের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ রাখতে চাই না। আমার মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে মা মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করছিলো।
ওরা সত্যিই আমার মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিল।
অফিসে কয়েকদিন ধরেই হিসাব নিকাশ চলছে। একদিন সকালে আমি তাকে আমার রুমে ডাকলাম।
আমার সামনেই অ্যাকাউন্টস অফিসার সব বুঝিয়ে দিলো। তারপর তাকে বললাম,
: আমার চেষ্টা আমি করেছি। ব্যর্থ হয়েছি। তোর মতো গাদ্দারের সঙ্গে, আমি আর এক মুহূর্ত থাকতে চাই না। এক্ষুনি অফিস থেকে বের হয়ে যা! অনেক বড় বিদ্বান সেজে বসে আছিস। এখন নিজের মতো ব্যবসা করে খা!
তার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। বললো,
: দোস্ত, এবারের মতো আমাকে মাফ করে দে! আমি আর কখনোই এরকম করবো না। তবু আমাকে এভাবে ফেলে দিস না!
একথা বলে, আক্ষরিক অর্থেই আমার পা ধরার উপক্রম করলো। আমি চট করে পা সরিয়ে নিলাম। বললাম,
: একথা বলছিস কেন? তুই না রিয়েল এস্টেট এক্সপার্ট? আমাকে লাগবে কেন?
বরং আমার যদি কখনও হেল্প লাগে, তোর কাছে যাবো। এই মুহূর্তে, আমার কোন হেল্প লাগবে না। সো, জাস্ট গেট আউট অব মাই সাইট!
তিন দিন পর, আমরা বাসা বদল করে, জিগাতলায় নতুন বাসায় চলে এলাম।
সত্যি বলতে কি, আগের বাসাটায় থাকতে, রীতিমতো ঘেন্না লাগছিল।
আমি আবার আমার আগের সেট আপ এ চলে গেলাম। হিসাব করে দেখলাম যে কক্সবাজার ট্যুর রিলেটেড, এই বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনায়, আমার প্রায় এক কোটি টাকার মতো নগদ লস হয়ে গেছে।
এর বাইরে, অপরচুনিটি লস হয়েছে কতো টাকার, সে হিসেব কষা খুব কঠিন একটা কাজ।
নতুন সেট আপের মধ্যে ধীরে ধীরে ব্যবসাটা আবার চালু হয়ে গেল।
কখনোই আর আগের সেই ফর্মে ফেরা হয়নি। মাত্র দশ পার্সেন্ট ব্যবসা হয়তো টিকে ছিলো।
এর মধ্যে, আমার বন্ধুটি বহুবার ফোনে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। দেখা করতে চেয়েছে। আমি অনুমতি দেইনি। বরং ওর কল দেখলে আর ধরতাম না। আমাদের কমন ফ্রেন্ডদেরকে হাতে পায়ে ধরে রাজী করাতে চেষ্টা করেছে, একবার যেন ওরা সবাই মিলে আমার কাছে আসে। কেউ রাজী হয়নি। বরং ও চলে গেলে, সবাই আমাকে এসব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ফোন দিতো। সতর্ক করে দিতো।
একদিন আমাকে অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে, খুবই স্মার্ট ওয়েতে, নতুন একটা বিজনেস অফার দিলো। লোভ দেখালো যে এটা যদি আমরা দুজনে মিলে করি, তাহলে, পঞ্চাশ কোটি টাকা প্রফিট করা যাবে, দুই মাসের মধ্যে।
আমি বলে দিলাম, এসব অফার আমি আর শুনতে চাই না। পাঁচশো কোটি টাকা লাভ হলেও চাই না।
একদিন বিকেলে অফিসে বসে আছি।
হঠাৎ পিয়ন এসে খবর দিলো যে আগের সেই এজেন্টরা দল বেঁধে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আমি একটু অবাক হয়েই ওদেরকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলাম।
রুমে ঢুকেই ওদের দলনেতা আমার হাত চেপে ধরে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো।
বললো যে আমার বন্ধুটি নাকি সবার হয়ে একটা বড়সড় জমি কিনেছে, ব্যবসার জন্য। পুরোটাই জাল কাগজপত্রের মালিকানা। এখন কয়েক কোটি টাকা হারিয়ে ওরা সর্বশান্ত। অনেক চেষ্টা করেও ওই টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
আমি বললাম,
: সমস্যা কি? আপনাদের এক্সপার্ট তো আছেই। এটা তার দায়িত্ব। সে উদ্ধার করে দেবে সব টাকা পয়সা।
ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন। বললেন, গত রাতে গিয়ে দেখেছেন যে বাসা ছেড়ে দিয়ে ওরা পালিয়ে গেছে। কেউ জানে না, কোথায় গেছে।
আমি গভীর সহানুভূতি নিয়ে তাদের উদ্ভ্রান্ত
চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।