ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম। বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় পেশায় ছিলেন শুল্ক পরিদর্শক।
সালটা ১৯২৩। রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বারের জন্য শিলংয়ে এসেছেন। উঠেছেন ভাইঝি মনীষা দেবীর ‘জিৎভূমি’র বাড়িতে। সঙ্গে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। তাঁদের পালিতা কন্যা নন্দিনী ওরফে পুপে, কবিকন্যা মীরাদেবীও সঙ্গে আছেন। আছে তাঁর মেয়ে নন্দিতা, আর আছে রাণু। তত দিনে যক্ষ্মায় প্রয়াত হয়েছেন গৃহকর্তা তথা ঠাকুরবাড়ির চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। রোজ সকালে প্রতিমা দেবী হাঁটতে বেরোতেন নন্দিনী, নন্দিতা, রাণুদের নিয়ে।
কাছেই থাকেন ময়ূরভঞ্জের রানি সুচারুদেবী। গরমের ছুটিতে তাঁর সঙ্গে তখন আছেন একমাত্র ছেলে কুমার ধ্রুবেন্দ্র ভঞ্জ দেও ও তাঁর কন্যা সিসি। সিসির সঙ্গে আবার রাণুর খুব ভাব। প্রায়ই হাঁটতে বেরোত তারা। মনীষা দেবীর ডাক্তার স্বামী যখন টিবিতে ভুগছেন, তখন ‘জিৎভূমি’-র বাংলোর বারান্দার বাইরে মশারি টাঙিয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ‘জিৎভূমি’-র বারান্দায়
বসে বাইরের সেই উঠোনের দিকে তাকিয়ে ১৯২৩ সালে কবি যখন যক্ষপুরীতে রাজার জালের আড়ালে আইসোলেশনে থাকার কথা লিখছেন, তখন হয়তো দেবেন্দ্রনাথের সেই ছবিটাই কবির মনে ভাসত। অবশ্য তার আগের বার, ব্রুকসাইড বাংলোয় লম্ফের আলোয় লেখালিখি ও অনুবাদ সারতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে। এ বারে অবশ্য ‘জিৎভূমি’র বাড়িতে বিজলি বাতির আলো। রবীন্দ্রনাথ লিখে চলেছেন ‘রক্তকরবী’।
বিলেত-ফেরত এক যুবা ডাক্তার তাঁর ইঞ্জিনিয়ারিং বুদ্ধি আর ব্যবসায়িক বুদ্ধির মিশেলে তাক লাগিয়ে লোয়ার মোপ্রেমের কাছে থাকা সুউচ্চ বিশপ জলপ্রপাতে টারবাইন বসিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি করে ফেলেছেন তার আগের বছরেই, ১৯২২ সালে। ১৯২৫ সালে তাঁর সগর্ব প্রবেশ রাজনীতিতে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি হারালেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এক বছরের ব্যবধানে মহিলা ও শিশুদের জন্য তৈরি করালেন ভবানীপুরের চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতাল। তাঁর হাতেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, যাদবপুর টিবি হাসপাতাল, কমলা নেহরু হাসপাতালের পথ চলা শুরু। কল্যাণী, বিধাননগরের রূপকার বিধানচন্দ্র রায়কে কিন্তু মেঘালয় মনে রেখেছে ডাক্তার হিসেবে নয়, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেই! কারণ, তাঁর বুদ্ধি ও পরিকল্পনায় তৈরি বিশপ-বিডন জলপ্রপাতের জলবিদ্যুৎ ৯৭ বছর পরেও শিলং শহরে বিদ্যুৎ জুগিয়ে চলেছে।
শিলং শহরে অবশ্য বিদ্যুৎ এসেছিল আরও আগেই। ১৯১৫ সালে রাম নাথ বাবু নিজের ময়দা কল চালানোর জন্য ছোট্ট টারবাইন বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিলেন। হাজি কাসিমউদ্দিন মোল্লাও ডায়নামো থেকে বিদ্যুৎ বানিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। কিন্তু শহরবাসীর জন্য বিদ্যুৎ তৈরি করার কথা প্রথম ভাবেন বিধানচন্দ্র রায়।
ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম। বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় পেশায় ছিলেন শুল্ক পরিদর্শক। সেই সঙ্গে সাধ্যের বাইরে গিয়ে সমাজসেবী, উদারমনা। স্ত্রীর শিক্ষকও। মা অঘোরকামিনী দেবী দেড়শো বছর আগের ভারতে নারীশিক্ষা ও নারী জাগরণের পথিকৃৎ। এমন বাবা-মায়ের সন্তান বিধানচন্দ্রের ভিতরে সমাজসেবার বীজ উপ্ত ছিলই। আর ছিল জ্ঞানের বহুবিধ শাখায় অসীম আগ্রহ। ঘটনাচক্রে তিনি ডাক্তার, কিন্তু ইচ্ছে করলে ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পপতি বা মস্ত আমলা, যে কোনও ক্ষেত্রেই সেরাদের টক্কর দিতে পারতেন তিনি।
বিধানচন্দ্র যেমন ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড থেকে ডাক্তারি শিখে এসেছেন, তাঁর মেজদাদা সাধন রায়ও ইংল্যান্ড থেকে শিখে এসেছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। তিনি কারও অধীনে চাকরি না করে, নিজেই কিছু করতে ইচ্ছুক ছিলেন। ১৯২০ সালের অক্টোবরে রায় পরিবার ছুটি কাটাতে শিলং আসেন। বাবা প্রকাশচন্দ্র আগে বার সাতেক শিলং এসেছিলেন। শিলংয়ের ব্রাহ্মদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল তাঁর। অঘোরকামিনী অবশ্য মারা গিয়েছেন ১৮৯৬ সালে। সকলে পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ, কিন্তু তার মধ্যেই কাঁটার খোঁচা দিচ্ছিল বিদ্যুতের অভাব।
বাড়ি থেকেই দেখা যায় বিশপ-বিডন জলপ্রপাত। ১৮৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন স্যর সিসিল বিডন। বিধানচন্দ্র ভাবলেন, জলপ্রপাত রয়েছে যখন, তবে বিদ্যুৎই বা কেন থাকবে না? নিজেই খবর নেওয়া শুরু করলেন। জানতে পারলেন, ১৯০৮ সালে জে ডব্লু মিয়ারেস নামে এক ইঞ্জিনিয়ার বিশপ-বিডন জলপ্রপাতকে কেন্দ্র করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সুপারিশ করে রিপোর্ট বানিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই আলাপ হল আর দত্ত নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি আবার লোয়ার মোপ্রেমে থাকা বিডন জলপ্রপাত লিজ নিয়েও বসে আছেন। কিন্তু জলবিদ্যুৎ তৈরির কাজ তেমন কিছুই এগোতে পারেননি। ইঞ্জিনিয়ার দাদাকে সঙ্গে নিয়ে লেগে পড়লেন বিধানচন্দ্র। সিদ্ধান্ত হল, তিন জন মিলে যৌথ স্টক কোম্পানি খুলবেন। সেই মতো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য লাইসেন্সের আবেদন জমা দিলেন তাঁরা।
কিন্তু তত দিনে একই কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করে ইংরেজ সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন মরো-ও আবেদন জানিয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ জেলাশাসক শ্বেতাঙ্গ সেনাকর্তাকেই লাইসেন্স দিতে চান। লাইসেন্সের লড়াই শেষে পৌঁছল ভারত সরকারের দফতরে। দীর্ঘ ন’মাস দড়ি টানাটানির পরে লাইসেন্স আদায় করেই ছাড়ল রায় ও দত্ত-র কোম্পানি।
এ নিছক লাইসেন্স আদায় করাই ছিল না। এক অনামা, ভুঁইফোঁড় বাঙালি সংস্থা যে বাংলার বাইরে গিয়ে এমন একটি বড় উদ্যোগ শুরু করার সাহস দেখাতে পারে, খোদ ইংরেজদের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে সফল হতে পারে, তাও দেখানো গেল।
এখানেই শেষ নয়। তখনকার পরিকাঠামোহীন, সহায়তাহীন পরিবেশে রায় ও দত্ত কোম্পানি দেশের ২২তম সুউচ্চ জলপ্রপাতের গায়ে মাত্র আঠারো মাসে, সেই ১৯২২ সালেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজ সেরে ফেলে! খোদ ইংরেজরাও মেনে নিতে বাধ্য হয়, বিদ্যুৎশিল্পের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা তখনও নজিরবিহীন। ব্রাহ্ম সমাজসংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা তথা ময়ূরভঞ্জের রাজা শ্রীরাম চন্দ্র ভঞ্জ দেওয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী রানি সুচারু দেবী তখন শিলংয়ে। ১৯২৩ সালে তিনিই এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন। পোশাকি নাম ‘সোনাপানি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র’, যা ভারতের তৃতীয় সবচেয়ে পুরনো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। সে বছর এপ্রিল থেকে
জুন কবিগুরুর দ্বিতীয় শিলং সফরের সময় ‘জিৎভূমি’-র বাড়িতেও সম্ভবত বিজলি বাতির ব্যবস্থা করেছিলেন বিধানচন্দ্র।
এর পর টানা ৬০ বছর বিধান-সাধন ও দত্তর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প শিলং শহরকে বিদ্যুৎ জুগিয়েছিল। প্রথমে বিশপ-বিডন জলপ্রপাত, উমশিরপি ও ওয়ামুখরা নদীর জল থেকে ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। পরে পর্যায়ক্রমে ১৯২৮, ১৯৩৯, ১৯৫৬ ও ১৯৬০ সালে তার উৎপাদন ক্ষমতা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে দেড় মেগাওয়াট করা হয়। কিন্তু যন্ত্রাংশের অভাবে ইংরেজ আমলের মেশিনপত্র মেরামত করা যাচ্ছিল না। উৎপাদনের খরচও বাড়ছিল। তাই ১৯৮২ সালে সোনাপানি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
২০০১ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এর পুনরুজ্জীবনের কাজ হাতে নেওয়া হয়। কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। সোনাপানি ফের শিলংকে বিদ্যুৎ দিতে শুরু করেছে ২০১০-১১ সাল থেকে।
নব্য বাংলার রূপকার হিসেবে বিধানচন্দ্র রাজনৈতিক জীবনে ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যত প্রকল্পের পরিকল্পনা ও রূপায়ণ করেন, তার হাতেখড়ি, অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাস এসেছিল শিলংয়ের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই। বিধানচন্দ্র রায়ের জীবনীকার নীতীশ সেনগুপ্ত বিধানচন্দ্রকে উদ্ধৃত করেছেন, “এই উদ্যোগ আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছিল। বুঝতে পারি, মুনাফার পরিমাণ বেশি হলেও শেয়ার হোল্ডারদের একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি ডিভিডেন্ড দেওয়া উচিত নয়।” শ্রমিকদের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ করা, শিলংয়ের নাগরিকদের বিদ্যুৎ খরচের মাত্রা বেঁধে দেওয়া, বিদ্যুৎ মাশুল নিয়ন্ত্রণে রাখা— এমন অনেক অভিজ্ঞতাই হয়েছিল বিধানচন্দ্র রায়ের। প্রথম জীবনে হাতে-কলমে শেখা এই সব অভিজ্ঞতাই পরবর্তী কালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাজে লেগেছিল। তাঁর কথায়, “১৯২৩ সালে যে সব অদক্ষ শ্রমিক তিরিশ টাকা বেতনে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাই পরে তিনগুণ বেতন পাচ্ছিলেন। বিদ্যুতের মাশুলও কমানো গিয়েছিল। এই প্রকল্প আমায় যুক্তিসঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শিল্প চালানোর আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল।
আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম যে গোটা বিশ্ব এক বিরাট শিল্পক্ষেত্র যেখানে আমরা সবাই খাটছি ও লড়াই করছি।”
বিদ্যুৎ প্রকল্প যদি প্রবাসের মাঠে প্রথম ম্যাচে শতরান হয়, তবে পরের ম্যাচেও দ্বিশতরান করার অপেক্ষায় ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। এ বারেও প্রেক্ষাপট শিলং, গুয়াহাটি। সালটা ১৯৪৬। কলকাতায় তখন শুরু হয়েছে দাঙ্গা। ১৬ অগস্ট বিধানচন্দ্র খবর পেলেন, মুসলিম লিগের সমর্থকরা তাঁর কলকাতার বাড়িতে আক্রমণ চালিয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে বাড়ি আসতে হবে। কিন্তু যাব বললেই কি শিলং থেকে কলকাতা যাওয়া সম্ভব! গুয়াহাটি থেকে কলকাতা ট্রেনে পাড়ি দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পার্বতীপুরে মিটারগেজের ট্রেন থেকে নেমে যাত্রীদের ব্রডগেজের ট্রেনে উঠতে হত। সে এক দক্ষযজ্ঞ। সেই ট্রেনের বেশির ভাগ আসন মিলিটারিদের দখলে। ঠাঁই মেলাই দুষ্কর। ক্ষুব্ধ, বিরক্ত বিধানচন্দ্র সেই দিনই ঠিক করলেন, গুয়াহাটি থেকে কলকাতার মধ্যে বিমান চালাতে হবে।
পরিকল্পনা আরও পোক্ত হল দেশভাগের পরে। কারণ অসম থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতার রেললাইনই গেল বন্ধ হয়ে। এ বার বিধানচন্দ্র তাঁর পুরনো বন্ধু, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তথা ‘এয়ারওয়েজ় ইন্ডিয়া’-র ম্যানেজার কে কে রায়ের সঙ্গে হাত মেলালেন। ভারত সদ্য স্বাধীন, এয়ারফোর্সের বাতিল করা কয়েকটি ডাকোটা বিমান সস্তায় কিনে ফেললেন তাঁরা। প্রথম বার কলকাতা ও গুয়াহাটির মধ্যে চালু হল বিমান। শুধু উত্তর-পূর্বই নয়, দেশভাগ ও স্বাধীনতার অস্থির সময়ে ‘এয়ারওয়েজ় ইন্ডিয়া’-র বিমানগুলি কলকাতার সঙ্গে উত্তরবঙ্গেরও যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান। পরে ‘এয়ারওয়েজ় ইন্ডিয়া’ রাষ্ট্রায়ত্ত হয়ে যায়।
পরবর্তী কালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিধানচন্দ্রের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ইলেকট্রিসিটি বোর্ড, কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন, হরিণঘাটা ডেয়ারি, কল্যাণী স্পিনিং মিল, দে’জ় মেডিক্যালকে উৎসাহ দেওয়ার ভিত গড়ে দিয়েছিল শিলংই।
আজীবন মানুষের সেবার ব্রত নিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র। হাসপাতালগুলিকে সাহায্য করা, বিনা পয়সায় রোগী দেখা তো ছিলই, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি নিজের বেতন ৪২ হাজার থেকে কমিয়ে ১৪ হাজারে বেঁধে দেন। ধীরে ধীরে শুরু হয় টাকার টানাটানি। বাধ্য হয়ে নিজের তৈরি কোম্পানিগুলির শেয়ার, কলকাতার শহরতলিতে থাকা জমি বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। শেষমেষ হাত পড়ে শিলংয়ে তাঁর প্রিয় আবাস ‘রায় ভিলা’ ও ‘বিধান ভবন’-এও। বিক্রি করে দিতে হয় দু’টি বাড়ি। বর্তমানে সেগুলি সরকারি মালিকানাধীন।
শিলং নিবাসী মালবিকা বিশারদ, ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন সমর চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন মন্ত্রী মানস চৌধুরি, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ অধ্যাপক বিধুভূষণ দত্ত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য ব্রুকসাইডের বাংলোকে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা হিসেবে তৈরি করতে লড়াই চালিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত দরবার করেছেন মালবিকাদেবী। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য অন্য দু’টি বাড়ি বাঁচাতে পারেননি বলে দুঃখ করছিলেন। গত বছর বিক্রি হয়েছে ‘জিৎভূমি’। এখন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়, বাঙালি রাজ্যপাল পেয়ে সাহস করে শিলংয়ে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান অমর রাখতে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন তিনি।
মালবিকা আরও জানান, বিধান ভবনে কয়েক বছর আগেও বিধানচন্দ্র রায়ের ব্যবহৃত আসবাব, অন্যান্য সামগ্রী রাখা ছিল। এখন আর চোখে পড়ে না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মেঘালয় স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের নীল ভবনের মাথায় ‘বিধান ভবন’ লেখাটা এক বাঙালির অনন্য জেদ ও সমাজচেতনার প্রতীক হয়ে টিকে ছিল। আজ সে চিহ্নটুকু মুছে গিয়েছে।
কিন্তু বিশপ-বিডন জলপ্রপাতের অবিরাম ধারা এখনও ঘোরাচ্ছে রায়-ভাইদের তৈরি টারবাইন। আর বছর দুই পরে, বিধান রায়ের ১৪০তম জন্মবার্ষিকীতে শিলংয়ের সেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পা দেবে শতবর্ষে।