ঘন কালো জমিনের ওপর টকটকে সিঁদুরে লাল রঙের পাড়। তার উপরের দিকটায় একই রঙের আরেকটা ডিজাইন। ঠিক যেন মন্দিরের চূঁড়া। একেকবার সুতার টানে মন্দিরের মতো নকশাটি ফুটে উঠছে কাপড়টিতে। এভাবে একেকটা শাল বুনতে অনুরাণীর সময় লাগে দুই দিন।
সারাদিনের কাজকর্ম রান্নাবান্না ঘরকন্না সেরে বসেন তাঁত বুনতে। ঠিক দুপুর সময়টায় তাঁত বন্ধ থাকে। এই সময়টা রান্নাবান্নার সময়। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ঠিক বিকেল চারটায় আবার বসবেন তাঁত বুনতে। শাড়ি, ওড়না, শাল, থ্রিপিছে সুতার টান আর নিজের হাতের ক্ষতায় ফুটিয়ে তোলেন একেকটি ডিজাইন। এভাবেই কেটে যায় শ্রীমঙ্গলে মনিপুরীপাড়ার নারীদের জীবন।
১২ কি ১৩ বছর বয়স থেকেই তাঁত বুনতে পারেন অনুরাণী। শিখেছিলেন মায়ের কাছে। এখন বয়স ৩৫ কি ৪০ এর কোঠা ছুঁইছুঁই। বয়সের সঠিক হিসেবও রাখেন না। কি হবে বয়সের হিসেব রেখে? ঘরকন্না, ছেলেমেয়েকে মানুষ করা আর তাঁত বোনা, এর বাইরে আর কিছু জানতে চান না অনুরাণী।
স্বামী একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন। মায়ের শেখানো বিদ্যায় আর তার হাতের অপূর্ব ক্ষতায় শাড়ি, শাল, ওড়নায় ফুটিয়ে তোলেন বিখ্যাত মনিপুরী ডিজাইন। সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয় এসব পণ্য।
অনুরাণীর হাতে তৈরি করা পণ্য কত মানুষ কেনে সেটা ভেবেই তৃপ্তি পান তিনি। ঢাকাসহ নানা জায়গায় চড়া দামে বিক্রি হয় এসব শাল, শাড়ি। নিখুঁত ডিজাইনে নানা রঙের মনিপুরী শাড়ির চাহিদা আরো বেড়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক এই স্বপ্ন দেখেন অনুরাণী।
তাঁত বোনার পাশাপাশি নিজের হাতের তৈরি পণ্য একটি শোরুমে বিক্রি করার স্বপ্নও বোনেন তিনি। যেখানে সারাদেশের মানুষসহ বিদেশী পর্যটক এসে কিনবে তাঁর হাতের তৈরি পণ্য। ঠোঁটের কোণের এক চিলতে হাসিতে সেই স্বপ্ন খেলে যায়। তবে এভাবেও খারাপ নেই অনুরাণী। তাঁত বুনে এভাবেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চান তিনি।