Jannatul Naym Pieal
আসিফের বয়স ২৪ বছর। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বছরখানেক আগে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিতে ঢুকেছে সে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ফলাফল খুবই ভালো তার। কারিগরি দক্ষতায়ও অন্য কারো চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না সে। তাই ভেবেছিল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মী হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স হবে তার। প্রমোশন পেয়ে তরতর করে এগিয়ে যাবে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাড়ি-গাড়ি হতে শুরু করবে।
কিন্তু বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। বাড়ি-গাড়ি হওয়া তো দূরে থাক, অফিসের করপোরেট কালচারের সাথে কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছে না সে। তার ধারণা, সে যেহেতু সবদিক থেকে সেরা, তাই সবচেয়ে ভালো সুযোগগুলোর দাবিদারও কেবল সে-ই। কিন্তু তার জায়গায় অন্য কেউ যখন ‘তৈলমর্দন করে’ সুযোগগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে, তখন তার মনে এক ধরণের অন্ধ আক্রোশের জন্ম নিচ্ছে।
তাছাড়া নয়টা-পাঁচটা অফিস করা, সারাক্ষণ বসের তাঁবেদারি করা, পান থেকে চুন খসলেই কথা শোনার ভয়ে তটস্থ থাকা, নিজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও আত্মসম্মানবোধকে বিসর্জন দেয়া — এগুলোর কোনোটাই সহ্য হচ্ছে না আসিফের। তার দৃঢ় বিশ্বাস, খুব বড় কিছুর জন্য জন্ম হয়েছে তার। কারো দাসত্ব করবে না সে, বরং নিজেই অন্য সবার ওপর ছড়ি ঘোরাবে। আর কীভাবে সেটি সম্ভব, তা-ও জানা আছে তার। ওই যে, অন্ট্রাপ্রনারশিপ! সে-ও হবে একজন অন্ট্রাপ্রনার, শুরু করবে নিজের স্টার্ট-আপ।
যেই ভাবা সেই কাজ। ঝোঁকের মাথায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মোটা অংকের বেতনের চাকরিটা ছেড়ে দিল সে। শুরু করল অন্ট্রাপ্রনারশিপ, অর্থাৎ ক্ষুদ্র উদ্যোগ। কিন্তু বুকভর্তি যে স্বপ্ন নিয়ে সে উদ্যোক্তা হয়েছিল, তার বিপরীতে বাস্তবতার রুক্ষ-কঠিন জমিনের দেখা মিলতে খুব বেশিদিন লাগল না। প্রথমত, পুঁজির বড্ড অভাব। নিজের জমানো টাকা, ব্যাংক লোন আর এদিক-ওদিক থেকে ধার নিয়েও পর্যাপ্ত পুঁজি জোগাড় করতে পারল না সে, যা দিয়ে নিজের ব্যবসাটাকে দাঁড়া করাতে পারবে।
গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে হাজির হলো তার ব্যবসায়িক পার্টনাররা। তাদের সাথেও মতের মিল হয় না তার। তার মনে হয়, তাদের চিন্তাভাবনায় কোনো নতুনত্ব নেই, নেই কোনো সৃষ্টিশীলতাও। এদিকে ক্লায়েন্টদের ব্যবহারও হয়ে দাঁড়িয়েছে মর্মপীড়ার কারণ। বসের তাঁবেদারি করবে না বলে চাকরি ছেড়েছে সে, অথচ এখন ক্লায়েন্টদের মন জুগিয়ে চলতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আগে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন সে দেখেছিল, সেই স্বাধীনতার দেখা কিছুতেই মিলছে না। চিরকাল ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ স্বভাবের আসিফের তাই ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে সময় লাগল না।
[অফিসে নিজের ভূমিকা ও অর্জন নিয়ে অসন্তোষে ভোগে অনেক কর্মীই]
এই আসিফ কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখতে পাবেন, আমাদের চারপাশে এমন হাজারটা আসিফ ঘুরে বেড়াচ্ছে। অসাধারণ আইডিয়ার অধিকারী সেই আসিফরা যথোপযুক্ত সুযোগ ও সাফল্যের অভাবে আজ শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। নিজেদের উপর থেকে তাদের বিশ্বাস উঠে যেতে শুরু করেছে। তাদের এখন মনে হচ্ছে, সত্যিই বুঝি তাদের দ্বারা কিছু হবে না। মরীচিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে এতটা সময় নষ্ট করেছে তারা, জলাঞ্জলি দিয়েছে সঞ্চিত অর্থও।
এবার একজন সফল উদ্যোক্তার কাহিনী জানা যাক। তার নাম সারা ব্লেকলি। স্প্যাংক্স নামে আমেরিকান যে অন্তর্বাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এক সময় গোটা বিশ্বব্যাপী হইচই ফেলে দিয়েছিল, এবং এখনো ধরে রেখেছে নিজ সুনাম, সেটির প্রতিষ্ঠাতা সারা। সফল উদ্যোক্তাদের তালিকায় খুব উপরের দিকেই থাকে তার নাম। অথচ তার শুরুটাও খুব আহামরি কিছু ছিল না।
শুরুতে ফ্লোরিডায় অবস্থিত ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ডে কাজ করতেন তিনি। এরপর কিছুদিন মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে ফ্যাক্স মেশিনও বিক্রি করেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্বজোড়া তার যে সম্মান, এবং যে পরিমাণ অর্থ মজুদ রয়েছে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, তাতে শুরুর সেই দিনগুলোকে তার জন্য নিতান্তই অপমানজনক মনে হতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যখন ওই কাজগুলো তিনি করেছিলেন, তখন সেগুলোকে একবারের জন্যও ছোট মনে করেননি, অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেননি। ওই কাজগুলো যখন করেছেন, তখন ওগুলোতেই নিজের মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। অর্থাৎ পরের অধীনে চাকরিকালেও তিনি কোনোপ্রকার ‘পেশাদারী হতাশায়’ ভোগেননি।
ওই তথাকথিত ‘অড জব’-এর কর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সারা কখনো অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হননি। সময়গুলোকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন শিক্ষা অর্জনে। খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণে যে একটি ব্যবসা কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। পরবর্তীতে সেই অভিজ্ঞতারই তিনি সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছেন নিজে উদ্যোক্তা হয়ে, যার সুবাদে আজ তিনি একটি বিলিয়ন-ডলার কোম্পানির মালিক, এবং ঘরে ঘরে তার খ্যাতি-পরিচিতি। সারা আজ নিজেই স্বীকার করেন, শুরুর দিকে অন্যের অধীনস্থ থাকাকালীন ব্যবসায়িক জগতটাকে খুঁটিয়ে না দেখলে, আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতেন না তিনি।
এসব কারণেই সারা এখন জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, যিনি একজন খুব ভালো কর্মী থেকে সফল উদ্যোক্তা হতে সক্ষম হয়েছেন। তার এই কাহিনী শিক্ষণীয় হতে পারে বাংলাদেশের স্বপ্নচারী প্রতিটি মেধাবী তরুণ-তরুণীর জন্যও, যারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার।
[সারা ব্লেকলি একজন স্বনির্মিত বিলিয়নিয়ার]
চলুন এবার আমরা জেনে নিই প্রধান কয়েকটি কারণ, কেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আগে একজন কর্মী বা চাকরিজীবী হিসেবে ভালো করা জরুরি।
উদ্যোক্তা হিসেবেও আপনার সামনে থাকবে একাধিক বস
আপনি হয়তো চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন এজন্য যে আপনি কোনো বসের অধীনে থাকতে চান না। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, উদ্যোক্তা হিসেবেও আপনাকে বসের অধীনে থাকতে হবে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেই বসের সংখ্যা একাধিকও হতে পারে।
কীভাবে? প্রথমত, আপনার পার্টনাররা। অনেক সময় আপনাকে তাদের কথা মেনে নিতে হবে। আপনার মাথায় হয়তো অন্য কোনো আইডিয়া আছে, কিন্তু বাজেট, সময় বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আপনাকে আপনার পার্টনারের কথাই মেনে নিতে হবে, আর না নিলে হয়তো গোটা সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে যাবে।
এরপর আবার রয়েছে আপনার ক্লায়েন্টরা। তারা শুধু নামেই ক্লায়েন্ট, কিন্তু বাস্তবিক তারা অফিসের বসদের চেয়েও এক কাঠি বাড়া। যেহেতু তারা টাকার বিনিময়ে আপনার কাজ গ্রহণ করছে, তাই তারা চাইবে আপনার সর্বস্ব নিঙড়ে নিতে। আপনি হয়তো এমন একটি পণ্য তৈরি করেছেন, যা আপনার দৃষ্টিতে একদম পারফেক্ট। কিন্তু আপনার ক্লায়েন্টের মনে হতেই পারে, আপনাকে আরেকটু চাপ দিলে হয়তো আরো ভালো কিছু পাওয়া যাবে। তারা আপনাকে সে মোতাবেক চাপ দিতে থাকবে। আপনার যতই আঁতে ঘা লাগুক, তবু আপনি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবেন না। তাহলে যে অর্থনৈতিক লোকসানটা সরাসরি আপনার ঘাড়ে এসেই পড়বে!
[ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করা এক দুঃসাধ্য কাজ]
আপনার জন্য আরেক শ্রেণীর বস হিসেবে রয়েছে আপনার স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষকরা। পুঁজি সংগ্রহের তাগিদে আপনাকে তাদের দ্বারস্থ হতে হবে। আর আপনার নিরুপায় অবস্থা দেখে তারা আপনাকে কিছু অর্থ সাহায্য করে মনে করবে, তারা বুঝি আপনার মাথাই কিনে নিয়েছে! তাদেরও থাকবে একশো রকম চাহিদা। যতক্ষণ তাদেরকে আপনি তুষ্ট করতে, এবং পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে আরো অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে না পারছেন, ততক্ষণ আপনার ছুটি নেই।
তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, সব সময়ই আপনার কাঁধের উপর সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে থাকবে এক বা একাধিক বস। তাই স্রেফ বসের উৎপাত থেকে বাঁচতে চাকরি ছাড়া একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং কয়েক বছর কোনো অফিসে বসের অধীনে কর্মী হিসেবে কাজ করে, তাকে সামলানোর কলাকৌশলগুলো শিখে নিতে পারলে, পরবর্তীতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজের সময় তা আপনার জন্য খুবই সহায়ক হবে।
ঘড়ি ধরা কাজের সময়সূচি কখনো পিছু ছাড়বে না আপনার
আপনি হয়তো চাকরি ছেড়ে নিজের আলাদা ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন এই ভেবে যে, প্রাত্যহিক নয়টা-পাঁচটার সময়সূচি মেনে কাজ করা আপনার পক্ষে সম্ভব না। আপনি কোনো বসের তো নয়ই, এমনকি সময়ের দাসও হতে চান না। আপনি হতে চান শুধু নিজের দাস। ছাত্রজীবনে যেমন যখন ইচ্ছা ঘুমাতে গেছেন, যখন ইচ্ছা উঠেছেন, কর্মজীবনেও সেই অভ্যাসই অব্যাহত রাখবেন।
কিন্তু চাইলেই কি আর তা হয়! আপনার ব্যবসা মানে তো শুধু আপনার একার ব্যবসা নয়। তার সাথে আপনার পার্টনার, স্পন্সর, ক্লায়েন্ট বহু মানুষ জড়িয়ে আছে। এবং তারা সবাই যে আপনার টাইমটেবিল মেনে চলবে, তা-ও নয়। আপনি যখন একটু বিশ্রাম চাইছেন, তখন হয়তো মিটিং ডেকে বসল আপনার স্পন্সর বা ক্লায়েন্ট। আবার আপনার শরীর যখন একদমই চলছে না, আপনার একজন পার্টনারের তখনই আপনার সাথে কিছু পরামর্শ করা একান্ত জরুরি।
এভাবেই যেই আপনি এক সময় শুধু নয়টা-পাঁচটার চাকরি করতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠছিলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সেই আপনাকেই দিনের ২৪ ঘণ্টাই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিকাল চারটায় হয়তো আপনাকে ধানমণ্ডি থেকে উত্তরা যেতে হবে স্পন্সরের সাথে মিটিংয়ে, আবার ঘড়ি ধরে রাত চারটার সময় আপনাকে স্কাইপে কথা বলতে হবে বিদেশী কোনো ক্লায়েন্টের সাথে।
[উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার কাজ পুরো ২৪ ঘণ্টার, সপ্তাহে ৭ দিনই]
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সময়কে ফাঁকি দেয়াও কখনো আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান লক্ষ্য হতে পারে না। বরং উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে কাজের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। ছুটি মিলবে না সপ্তাহান্তেও। এই অমানুষিক চাপ সহ্য করার আগে তাই কিছুদিন নয়টা-পাঁচটার চাকরি আপনি করতেই পারেন। আর কিছু না হোক, অন্তত নিয়মানুবর্তিতার দীক্ষাটুকু তো পেয়ে যাবেন!
নিজে কারো অধীনে থাকলেই বুঝতে পারবেন আপনার অধীনস্থদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিৎ
আপনি হতে চান আপনার নিজের রাজ্যের রাজাধিরাজ। আপনি চান না যেন কেউ আপনার উপর ছড়ি ঘোরাক। বরং আপনিই চান সবার উপর ছড়ি ঘোরাতে। কারণ আপনি নিজেকে মনে করেন একজন ‘বর্ন লিডার’।
বেশ তো, সবই ঠিক আছে। কিন্তু যখন আপনি নিজে একটি ব্যবসায়ের মালিক হবেন, এবং আপনার অধীনে অন্য অনেকে কাজ করবে, তখন কিন্তু আপনার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হবে সেই কর্মীদের মন জয় করা, তাদেরকে সব সময় সন্তুষ্ট রাখা। কারণ তারা যদি আপনার উপর সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে আপনি কীভাবে তাদের থেকে সেরাটা বের করে আনবেন?
এখন জরুরি বিষয়টি হলো, কর্মীদের মনস্তত্ত্ব বোঝা। তারা কী চায় না চায় সে বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করা। সেটি আপনি কীভাবে করবেন? আপনার পক্ষে তো আর অন্য কারো মনের ভিতর ঘুরে আসা সম্ভব নয়। তারপরও কিছুটা আন্দাজ আপনি করতে পারবেন, যদি আপনার নিজেরও অতীত অভিজ্ঞতা থাকে একজন কর্মী হিসেবে।
একজন কর্মী হিসেবে আপনি আপনার বসদের যে কাজগুলো পছন্দ করতেন, সেগুলো আপনি আপনার কর্মীদের সাথেও করতে পারবেন। আবার বসদের যে কাজগুলো আপনার অপছন্দ ছিল, সেগুলো আপনি আপনার কর্মীদের সাথে করা থেকে বিরত থাকবেন। অর্থাৎ, এখানেও কর্মী হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা লাভের খাতিরে আপনার নিজেরও কিছু সময় কর্মী থাকা আবশ্যক।
পরাধীন চাকরি থেকে আপনি শিখতে পারেন ব্যক্তিজীবন-কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষার কৌশলটি
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে কী অমানুষিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সে বিবরণ তো আগেই দিয়েছি। এমতাবস্থায় আপনার পক্ষে কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটি বেশ দুরূহ হয়ে পড়তে পারে।
[কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ]
দিনশেষে এ ভারসাম্য রক্ষার উপায় আপনার নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। তবে আপনি কোনো অফিসে যখন অন্য কোনো বসের অধীনে কাজ করবেন এবং খুব কাছ থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করবেন, তখন কিন্তু আপনি এটিও আবিষ্কার করতে পারবেন যে আপনার ওই বস কীভাবে নিজের ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবনকে আলাদা রাখছেন, এবং সবকিছু সামলে-সুমলে চলতে পারছেন।
অর্থাৎ ভারসাম্য রক্ষার এই বিষয়টিও আপনি শিখে নিতে পারেন আপনার প্রাক্তন বসের কাছ থেকেই। নতুবা সরাসরি উদ্যোক্তা হয়ে তারপর ব্যক্তিজীবন-কর্মজীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে আপনার নিঃসন্দেহে অকূল পাথারে হাবুডুবু খেতে হবে।
[ব্যর্থতাকে কীভাবে সামাল দিতে হয়, সেটি জানাও জরুরি]
উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যে শুধু সাফল্যের দরিয়ায় ভাসতে থাকবেন, তা তো আর হবার নয়। বরং সাফল্যের বিপরীতে যথাপরিমাণ ব্যর্থতাও আপনাকে ভোগ করতে হবে। আর সত্যি কথা বলতে কী, ব্যর্থ হওয়াটা কিন্তু খুব খারাপ কিছু নয়। এটি জীবনেরই অংশ। খারাপ হলো ব্যর্থতা মেনে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে না পারাটা।
কিন্তু এই ঘুরে দাঁড়ানোটা কি সবার পক্ষে সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ আপনি যখন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখবেন, আপনার মাথায় কেবল ইতিবাচক বিষয়গুলোই ঘুরপাক খাবে। অর্থাৎ আপনি কতটা লাভবান হবেন, আপনার সামনে কতশত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব ব্যতিক্রমী কেউ না হলে আপনি অবশ্যই ব্যর্থতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবেন না। তাই শেষমেষ যখন ব্যর্থতাটা চলে আসবে, আপনি তখন পড়ে যাবেন বিপাকে। বুঝে উঠতে পারবেন না কীভাবে ব্যর্থতাকে সামাল দেয়া যায়, ইতিবাচকভাবে বিষয়টিকে মেনে নেয়া যায়।
[ব্যর্থতাকে সামাল দেয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় অফিসের করপোরেট কালচার থেকে।]
অথচ আপনি যদি মোটামুটি উল্লেখযোগ্য একটা সময় কোনো অফিসে কাজ করেন, তাহলে সেখানকার করপোরেট কালচারই আপনাকে শিখিয়ে দেবে সাফল্য লাভের পর কীভাবে পা মাটিতে রাখতে হয়, আবার ব্যর্থতায়ও ভেঙে না পড়ে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হয়।
এই অভিজ্ঞতাগুলো খুবই বিরল, যা কোটি টাকা দিয়েও আপনি কোথাও থেকে কিনতে পারবেন না। এই অভিজ্ঞতা পেতে আপনাকে সরাসরি সেটির অংশ হতে হবে, আর তা সম্ভব কেবল কোনো একটি অফিসে কর্মী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে।
পরিশিষ্ট
এতক্ষণ যে আলোচনা করলাম, তারপর নিশ্চয়ই আপনাদের আর বুঝতে বাকি নেই যে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে ঠিক কি কারণে আগে একজন ভালো কর্মী হওয়াও জরুরি। এবার তাই সেই একই কথারই ফের পুনরাবৃত্তি করে বলব, আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়াই হয়, তারপরও অন্তত কিছু সময়ের জন্য কোনো অফিসে পরের অধীনে কর্মী হিসেবে কাজ করুন। সেটি যে শিক্ষাজীবন শেষেই করতে হবে, এমনও নয়। শিক্ষাজীবনেই কোনো অফিসে পার্ট-টাইম কাজ করার মাধ্যমে অভিজ্ঞতাটি নিয়ে নিতে পারেন। কারণ মনে রাখবেন, কর্মী হিসেবে কারো অধীনে কাজ করাটা কোনোভাবেই সময়ের অপচয় নয়, বরং সেটি এক ধরনের বিনিয়োগ। আর আপনি যদি কর্মী হিসেবে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স করতে পারেন, তবে উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যাবে।