অনলাইন ডেস্ক: হংকংয়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে হংকং সম্পর্কিত নতুন একটি অবরোধ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করবে যেসব ব্যাংক, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই বিলটি এখন অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে সিনেটে। তারপর তা পাঠানো হবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। সমালোচকরা বলছেন, হংকং ৫০ বছর ধরে যে স্বাধীনতা ভোগ করতো, চাপিয়ে দেয়া আইনে তার ইতি ঘটেছে। এ সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, এই আইনটি বর্বর।
এর অধীনে হংকংয়ের মানুষের ওপর দমন পীড়ন চালানো হবে। যার উদ্দেশ্য হলো হংকংয়ের মানুষের প্রতিশ্রুত স্বাধীনতার ধ্বংস। ওদিকে ১৯৮৫ সালে সিনো-বৃটিশ যৌথ ঘোষণার সুস্পষ্ট ও মারাত্মক লঙ্ঘন এই আইন বলে উল্লেখ করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ওই ঘোষণার মাধ্যমে হংকংকে ১৯৯৭ সালে চীনের হাতে তুলে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এক দেশ, দুই ব্যবস্থার অধীনে কমপক্ষে ৫০ বছর ধরে হংকংয়ের মানুষ যে অধিকার ভোগ করছিলেন, সেই স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা হয়। তবে চীন বলছে, ২০১৯ সালে হংকংয়ে যে ধরণের বিক্ষোভ হয়েছে তা বন্ধ করার জন্য নিরাপত্তা মুলক এই আইনটি প্রয়োজন ছিল। ওদিকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে নিন্দা সত্ত্বেও এই সপ্তাহে কিউবার নেতৃত্বে কমপক্ষে ৫০ টি দেশ চীনকে সমর্থন জানিয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে যে অবরোধ প্রস্তাব তোলা হয়েছে তার নাম দেয়া হয়েছে হংকং অটোনমি এক্ট। এর অধীনে চীনা কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে লেনদেনকারী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। চীনের ওই সব কর্মকর্তা এর আওতায় থাকবেন, যারা হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিরুদ্ধে দমনপীড়নে যুক্ত। এ সম্পর্কে ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, চীনের পাস করা তথাকথিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশে করা হয়েছে এই আইন।
প্রতিনিধি পরিষদে এই বিলটি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে থেকেই হংকংয়ের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে ওই ভূখন্ডের প্রতিরক্ষা বিষয়ক রপ্তানি এবং উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য সুবিধায় বিধিনিষেধ। গত বছর হংকংয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেটি এক্ট স্বাক্ষর করা হয়।
হংকং ইস্যুতে বৃটেন সেই দেশের কমপক্ষে ৩০ লাখ অধিবাসীকে বৃটেনে বসবাসের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। বলা হয়েছে, তারা বৃটেনের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়াও হংকংয়ের নাগরিকদের আবাসিক সুবিধা দেয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব শিগগিরই বিবেচনা করবে মন্ত্রীপরিষদ।
এই আইনের নিন্দা জানিয়েছে জাপানও। তারা চীনের এই আইনকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিটসু মোটেগি বলেছেন, এই আইনের ফলে এক দেশ, দুই ব্যবস্থা নীতির প্রতি আস্থা কমে যাবে। ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এই আইনের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে হংকং সফরের ওপর ভ্রমণ সতর্কতা পরিবর্তন করেছে কানাডা। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই নতুন আইন খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে। এমনকি চীনের ভিতর গ্রেপ্তার করে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
তবে বিদেশীদের এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন চীনের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, হংকং ইস্যুতে বিদেশীদের কিছু বলার নেই। চীনের পাশে এ সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে কিউবা সহ ৫৩টি দেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৪তম অধিবেশনে কিউবা বলেছে, আমরা বিশ্বাস করি সব দেশেরই আইন প্রণয়ের মাধ্যমে তার জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার অধিকার আছে।