ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ঋণ সহায়তা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। সহজ শর্তে স্বল্প সুদে চাহিদামত প্রদান করছে টাকা।
যশোর থেকে ফিরে: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ঋণ সহায়তা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। সহজ শর্তে স্বল্প সুদে চাহিদামত প্রদান করছে টাকা।
এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করায় তা দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানী করা হচ্ছে বিদেশে। একে অপরের দেখাদেখি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্যোক্তার সংখ্যা।
২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ফাউন্ডেশনের প্রায় দুইকোটি টাকা যশোর জেলা সদরের মনোহরপুর, উপশহর, কিসমত নওয়াপাড়া, চুড়িপট্টি, শংকরপুর, কাজীপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার ১শ ৯৪জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন।
ব্যবসার ধরণ বুঝে র্সবনিন্ম ১লাখ থেকে সর্বচ্চো দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ট্র্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করেছে ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে পাঁচলাখ পর্যন্ত জামানত ছাড়া। এর বেশি হলে সম্পত্তি বন্ধকীর মাধ্যমে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এস এম নুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালীর জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক নকশীকাঁথা। তাই নকশীকাঁথার মান উন্নয়নে উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও ব্যবসার প্রসারেই ঋণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
যশোর উপশহর এলাকার শাহানা বেগম। শ্রাবণ হস্তশিল্প অ্যান্ড অ্যাম্ব্রডারির মালিক। তার কারখানায় অর্ধশত শ্রমিক নকশীকাথা, বিছানার চাদর, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, মেয়েদের পোশাকের কাপড়ের হাতের করে।
১৮ বছর আগে মাত্র ৩গজ কাপড় দিয়ে শাহানার ব্যবসার যাত্রা শুরু। বিক্রি ভালো হওয়ায় কয়েক বছর পরেই পুজি দেড়লাখ টাকায় চলে আসে। তার এই অগ্রগতি দেখে ট্রাস্ট ব্যাংক ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে এসএমই ফাউন্ডেশনের তিন লাখ ঋণ দেয়।
শাহানার কারখানায় উৎপাদিত পন্য বর্তমানে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নামীদামি কাপড়ের দোকানগুলো বিক্রি হচ্ছে। তিন সন্তান, স্বামী ও শ্বশুড়-শাশুড়ি নিয়ে সুখী পরিবার শাহানার।
উপ-শহরের আরেক নারী উদ্যোক্তা অহনা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী বিনু আরা বেগম। ১৯৯৯ সালে মাত্র ৩৭৫ টাকা পুজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকা। ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। ১৮ জন স্থায়ী কর্মী ছাড়াও চুক্তিতে কাজ করে প্রায় দুই হাজার।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের ব্যবসায়ীরা যশোরের পোশাক, নকশিকাঁথা, বিছানার চাঁদর, সোফার কুশন, পাপোশ, ওয়ালম্যাট, ফতুয়া, নকশা করা রকমারি পাঞ্জাবি, নারীদের ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন।
ট্রাস্ট ব্যাংক যশোর ক্যান্টনমেন্ট শাখার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, কারুশিল্পের উন্নয়ন এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের টাকা ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছর থেকে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। ঋণের টাকা পেয়ে অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন।
কারু শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে যশোরের নারীরা ঘরে বসে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ জন্য শুধু এসএমই ফাউন্ডেশন একা নয় সরকারের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিলে ব্যবসার প্রসার আরও বেশি হবে বলে মনে করেন এসব নারী উদ্যোক্তারা।
সরকারের শিল্পনীতি অনুসরণ ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসুচির আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহযোগীতা করতে ২০১০ সাল থেকে দেশ ব্যাপী কাজ করছে সংস্থাটি।