ইকবাল বাহার জাহিদ
নতুন ৩০,০০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হল “নিজের বলার মত একটা গল্প” প্লাটফর্মের ১০ম ব্যাচ।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ও ৫০ টি দেশের ২৮০,০০০ তরুণ-তরুণীদের প্লাটফর্ম “নিজের বলার মত একটা গল্প”
টানা ৯০ দিনের উদ্যোক্তা বিষয়ক অনলাইন কর্মশালা।
দেখতে দেখতে ২ বছর ৪ মাস হয়ে গেল আমাদের সামাজিক কাজ “নিজের বলার মত একটা গল্প” এই প্লাটফর্মের। এই সামাজিক প্লাটফর্মের শুরু হয়েছিল গত বছর পহেলা জানুয়ারি ২০১৮ থেকে।
‘চাকরী করবো না চাকরী দেব’
প্রায় অসম্ভব একটি স্বপ্ন আজ সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ও ৫০টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী সহ ২৮০,০০০ তরুণ-তরুণীদের মাঝে ছড়িয়ে গেলো।
গত ৮৪০ দিন একদিনের জন্যও আমাদের এই কর্মশালা বন্ধ ছিল না, শুক্রবার, শনিবার, সরকারী ছুটি এমনকি ঈদের দিনও আমরা সেশান করেছি। এটা সারা বিশ্বে একটি ইতিহাস – এত লম্বা এবং টানা ৯০ দিনের কোন কর্মশালা পৃথিবীতে কেউ কোনদিন করেনি।
আমরা শুধু স্বপ্ন দেখাইনি, কিভাবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হয় তা শিখিয়েছি টানা ৯০ দিন ধরে এক একটি ব্যাচে।
৯০ দিন ধরে আমি শুধু উদ্যোক্তা হবার সকল কলা-কৌশল শিখাইনি, শিখিয়েছি কিভাবে একজন ভালোমানুষ হয়ে বুক ফুলিয়ে বাঁচে থাকতে হয়, কিভাবে সমাজের জন্য ও দেশের জন্য কাজ করতে হয় এবং সফল হতে হলে দরকার মা-বাবার দোয়া।
আমরা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থাকে ১৬৪ জন তরুণ ও তরুণীকে নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির টানা ৯০ দিনের প্রথম ব্যাচ শুরু করেছিলাম। এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও ৮ম ব্যাচ শেষ হল, আমরা এই পর্যন্ত ২৫০,০০০ জন তরুণদেরকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়েছি বিনামূল্যে।
প্রায় ২৫০০ জন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হবার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। যারা বিজনেস বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁরা আবার শুরু করেছেন, যারা আগে শুরু করা বিজনেসে ভাল করছিলেন না তাঁরা এখন আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছেন এবং অনেকে ভেবেছিলেন জীবনে চাকরী করা ছাড়া তাঁকে দিয়ে আর কিছু সম্ভব নয়, তিনিও চাকরী ছেড়ে উদ্যোক্তা হবার কথা ভাবছেন, কেউ কেউ শুরু করে দিয়েছেন।
যারা স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু একটা করতে চান, পরিশ্রম করতে চান, যাদের কোন তাড়াহুড়া নাই ও নিজের জীবনটাকে বদলে চান – আমরা শুধুমাত্র তাদেরকে নিয়ে কাজ করছি।
আমাদের সাথে কাজ শেখার জন্য সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হল - আপনি একজন ভালোমানুষ।
পুরো কার্যক্রমটা হচ্ছে অনলইনে প্রতিদিন। পুরো প্রকল্পটি করা হচ্ছে “বিনা ফি” তে অর্থাৎ প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে কোন টাকা দেয়া লাগছে না – যেহেতু এটা আমার সামাজিক কাজের অংশ।
২৫০,০০০ তরুণদের এই গ্রুপটা আমি তাঁদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তাঁদেরকে যুক্ত রেখেছি তাঁদের ৯০ দিনের এক একটা ব্যাচ শেষ হবার পরও। কারণ শুরু করা অনেক সহজ কিন্তু বিজনেস ধরে রাখা অনেক কঠিন।
তারা তাদের প্রোডাক্ট এখানে ডিসপ্লে করছে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, একে অন্যের ক্রেতা/বিক্রেতা হচ্ছে, একে অন্যের বিজনেস পার্টনার হচ্ছেন, হচ্ছেন বন্ধু। খুব সহজেই তাঁদের সেল বেড়ে যাচ্ছে। চলছে ব্যাপক নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম।
এই ২৫০,০০০ জন থেকে যদি আমরা ১০,০০০ জন উদ্যোক্তাও তৈরি করতে পারি, তবে আগামী ২ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০০,০০০ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে – এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে!
এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে সবাই উদ্যোক্তা হবে না, তবে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা এই ২৫০,০০০ জন তরুণদের সবার নিজের প্রতি বিশ্বাস, সাহস ও স্বপ্ন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে এবং শুরু হয়েছে বদলে যাওয়া একজন মানুষ।
৩টি বিষয় নিয়ে কাজ করে অনলাইন প্লাটফর্ম “নিজের বলার মতো একটা গল্প” – “চাকরী করবো না চাকরী দেব” ঃ
১। উদ্যোক্তা বিষয়ক অনলাইনে টানা ৯০ দিন করে প্রশিক্ষণ অর্থাৎ একজন ইয়ুথকে উদ্যোক্তা হতে যা যা প্রয়োজন তার প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ৬৪ জেলায় ও ৫০ দেশে উদ্যোক্তা মিট আপ ও সম্মেলন।
২। মূল্যবোধ, লিডারশীপ, বিভিন্ন বিষয়ে স্কিলস ও একজন ভালোমানুষ হয়ে উঠার চর্চা কেন্দ্র।
৩। ভলান্টিয়ারিং এবং সোশ্যাল ওয়ার্ক ও মানবিক কার্যক্রম
উদ্যোক্তা তৈরির ৯০ দিনের কোর্সে যা যা থাকছে ঃ
১। যারা স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু একটা করতে চান, পরিশ্রম করতে চান, যাদের কোন তাড়াহুড়া নাই ও নিজের জীবনটাকে বদলে চান – আমরা শুধুমাত্র তাদেরকে নিয়ে কাজ করছি।
২। আমাদের সাথে কাজ শেখার জন্য সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হল - আপনি একজন ভালোমানুষ।
৩। পুরো কার্যক্রমটা হচ্ছে অনলইনে প্রতিদিন – ৬৪ জেলা ও ৫০ টি দেশ থেকে প্রবাসীরা সহ সবাই অনলাইনে অংশ গ্রহণ করছে।
৪। প্রতিদিন ১ টা করে পোস্ট বা ভিডিও বা নির্দেশনা বা হোমওয়ার্ক দেয়া হচ্ছে আমাদের ক্লোজড গ্রুপ ও পেইজে এবং ইউটিউবে।
৫। এটি হল ৯০ দিনের অনলাইনে ও সরাসরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
৬। ফেসবুক লাইভে সপ্তাহে ২ দিন করে সেশান করা হচ্ছে Utv Live থেকে।
৭। পুরো প্রকল্পটি করা হচ্ছে “বিনা ফি” তে অর্থাৎ প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে কোন টাকা দেয়া লাগছে না – যেহেতু এটা আমার সামাজিক কাজের অংশ।
আমাদের প্লাটফর্মের মূল উদ্দেশ্যঃ
১। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরি
২। উদ্যোক্তাদের বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা ও নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি
২। সামাজিক কার্যক্রম
৩। শুধুমাত্র পজিটিভিটির চর্চা, সকল প্রকার নেগেটিভিটি থেকে আমরা সবাই দূরে থাকবো সবসময়। থাকবে না কোন রাজনৈতিক বিষয়।
৪। মানবিক উন্নয়ন এবং ভালোমানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি।
৫। বিনামূল্যে বা কোন ফি ছাড়া ৯০ দিনের উদ্যোক্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ
আগামী ৫ বছরে “নিজের বলার মতো একটা গল্প” এর সামাজিক কাজের পরিকল্পনাঃ
১। আমাদের প্রধান সামাজিক কাজ হবে সারা দেশের গরীব (যারা যাকাতের পাবার পর্যায়ে পরে) ও শিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত ৫০০ তরুণদেরকে একটা ছোট ব্যবসা তৈরি করে দিয়ে স্বাবলম্বী করা এবং তা সারা বছর মনিটরিং করা। প্রথমে তাঁদেরকে ৯০ দিনের উদ্যোক্তা ও ভালোমানুষ হওয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বদলে যাবে কিছু প্রান্তিক ও অসহায় তরুণদের জীবন।
২। রক্ত দান ও ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
৩। প্রতি বছর উদ্যোক্তা সম্মেলন এবং ৪ জন প্রতিষ্ঠিত তরুণ উদ্যোক্তা ও ৬ জন গ্রামের/মফস্বলের উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান। এছারাও বেস্ট কোর ভলান্টিয়ার, ডিসট্রিক্ট এম্বাসেডর, ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, কান্ট্রি এম্বাসেডর ও ভলান্টিয়ারদের সম্মাননা দেয়া হবে।
৪। রমজান মাসে অসহায় ও এতিমদের জন্য ইফতার ও রাতে রাস্তায় মানুষদের জন্য সেহেরী বিতরণ
৫। বর্ষায় দেশব্যাপী গাছ লাগানো কর্মসূচী এবং দেশব্যাপী সচেতনেতা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম ও স্বেচ্ছাশ্রম
৬। দেশের যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং
৭। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী অথচ অসহায় ও গরীব ৫০০ শিক্ষার্থীদের খুঁজে তাঁদের এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়ার খরচের ব্যবস্থা করা এবং তা মাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং করা।
এই সব কাজে সহযোগিতা ও বাস্তবায়ন করবে আমাদের কোর ভলান্টিয়ার, ডিসট্রিক্ট এম্বাসেডর, ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, কান্ট্রি এম্বাসেডর, কমিউনিটি ভলান্টিয়ার ও দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা। সবাই একটা টিম হিসাবে কাজ করবে।
জীবনে বলার মত একটা গল্প থাকা দরকার।