নিজস্ব প্রতিনিধি : যে প্রত্যাশা নিয়ে অনভিজ্ঞ, অপরিচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়, তা সফল হয়েছে বলে সরকারি নেতৃস্থানীয়রাও জোর গলায় বলছেন না। প্রায় দেড় বছর হতে চলল এই মন্ত্রিসভা কাজ করছে। এ সময়টা স্বল্পও বলা যাবে না। কিন্তু এই সময়ে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যই তার কার্যক্রমে চোখে পড়ার মতো, ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপকারে আসার মতো কিছু করতে পারেননি। বরং তাদের কিছু সংখ্যকের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ, সংশ্লিষ্টরা অসন্তুষ্ট। এমনকি সরকারের উচ্চতর পর্যায়ও হতাশ। করোনাভাইরাস মহামারি কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর কপাল আপাত রক্ষা করলেও তারা শেষ রক্ষা করতে পারছেন না।
দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, দক্ষ প্রশাসন পরিচালনার মাধ্যমে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে বলিষ্ঠ, দক্ষ নেতৃত্ব দরকার, বর্তমান মন্ত্রিসভার নবীনদের মধ্যে কতজন সে যোগ্যতাসম্পন্ন, তা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথম আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় মাত্র ৩৮ শতাংশ। প্রাকৃতিকভাবে অনুক‚ল পরিবেশ থাকে বলে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে মাঠপর্যায়ে জোরেশোরে কাজ সম্পাদিত হয়। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের অদক্ষতা, অযোগ্যতার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে অসৎ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে এবার তা হয়নি। বিশেষ করে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উন্নয়নকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মে পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কাজ হয়েছে ৪৫ শতাংশ। জুন শেষে তা ৫২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বাস্তবে তাও হবে কি না সংশয় রয়েছে গভীরভাবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকেই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছিল। রেলওয়ে, বাণিজ্য, শিল্প, শিপিং, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, ধর্ম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ, সমাজকল্যাণসহ প্রায় ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম তদারকি, মনিটর করা হচ্ছে। জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গোপনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। কার্যক্রমে ব্যর্থতা, অদক্ষতা প্রতিপন্ন হওয়ায় ৭-৮ জনকে সামনে সরকারে নাও দেখা যেতে পারে। এদের মধ্যে ৩-৪ জনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধর্ম, গৃহায়ণ, পানিসম্পদে কেবিনেট মন্ত্রী দেওয়া হতে পারে।
বিতর্কিত গত সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের মাধ্যমেও এক বিস্ময় সৃষ্টি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে দৃঢ় আস্থা ছিল যে নতুন মন্ত্রীরা তাদের কর্মকাÐে কিছু না কিছু চমক দেখবেন। তারা তা পারেননি। কোনো কোনো মন্ত্রী দেশের মানুষের এত বেশি দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়েছেন, যা অতীতে কোনো সময়েই দেখা যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পেঁয়াজ কেলেঙ্কারি, বাজার মনিটরসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, কোরবানির পশুর চামড়ার চরম অব্যবস্থাপনা মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ দিয়েছে।
ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ সব সরকারের আমলে সব সময়ই কমবেশি হয়ে থাকে। বর্তমান রেলমন্ত্রীর সময়ে মন্ত্রীদের এই দুর্ভোগ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। গত মেয়াদে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তারও অধিকাংশেই হাত পড়েনি। রেল, তথ্যপ্রযুক্তি, বস্ত্র ও পাট, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় গতিহীন হয়ে পড়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে হাজার কোটি টাকার নদী-খাল খনন কর্মসূচিতে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে উপমন্ত্রীর দ্ব›দ্বও দেখা দিয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমের লোকজন রাজউকে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছিল। কোন অযোগ্যতা, অদক্ষতার কারণে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। নতুন মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও কোনো রকম দক্ষতার ছাপ রাখতে পারেননি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী গতানুগতিক কাজ করছেন মাত্র। শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে সৎ বলে প্রচারণা থাকলেও কর্মকাÐে অদক্ষতা, নেতৃত্বে অযোগ্যতার স্পষ্ট ছাপ রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক গতিসঞ্চার সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দু-তিনজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রীসহ দুজনের পদোন্নতি হতে পারে। অভিজ্ঞ, প্রবীণ দুই থেকে তিনজন রাজনীতিবিদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি ঘটানোর প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে বলে উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়।