অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এলেই প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো শেখ হাসিনার পর কে? আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ একাত্ব হয়ে গেছে। শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ একটি দল হিসেবে নিজেদেরকে কল্পনাও করতে পার না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একবাক্যে স্বীকার করে নেয় যে, শেখ হাসিনা যদি না থাকেন তাহলে এই দলটির কি হবে তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন-আতঙ্কিত।
শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, শেখ হাসিনা নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে তিনি এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির-অগ্রযাত্রার প্রতীক, তিনি এখন বাংলাদেশের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান না থাকলে দেশ সত্যিই আর এগিয়ে যাবে কিনা, যেভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে সেই পরিস্থিতি থাকবে কি না তা নিয়ে যেমন সাধারণ মানুষের মাঝে সংশয় রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা যদি না থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক দল হিসেবে এখনো শক্তিশালী এবং দৃঢ় অবস্থানে আছে সেই অবস্থানে থাকবে কিনা তা নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংশয় রয়ছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই, আমৃত্যু তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এখনো আমাদের অনেক অপূর্ণ কাজ রয়েছে গেছে, যে কাজগুলো পুরো না হলে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন যে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প হয়নি। আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি বলেও তিনি মনে করেন। তিনি মনে করেন যে, আওয়ামী লীগই হলো শেখ হাসিনার জীবন, প্রাণ এবং একমাত্র ভালোবাসার জায়গা। কাজেই শেখ হাসিনার বিকল্প যেমন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাবতে পারেনা, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার জন্য আওয়ামী লীগ তাঁর অস্তিত্ব এবং প্রাণ। কাজেই শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবার সময়ে এখনো এসেছে বলে তিনি মনে করেন না। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই মনোভাবই জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিক‚ল এবং বন্ধুর সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং টানা ৩৯ বছর ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। ১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনা দলটিকে ধাপে ধাপে গড়ে তুলেছেন। এখন যারা দলের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন তাঁরা সবাই শেখ হাসিনার হাতে গড়া এবং শেখ হাসিনা এই সংগঠনটিকে পরম মমতায় গুছিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই চার-চারবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ শুধু সংগঠনই নয়, আওয়ামী লীগ এখন সরকারে থাকার কৌশলও রপ্ত করেছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব থেকে জনপ্রিয় এবং তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে এই রাজনৈতিক দলের সব থেকে বড় দুর্বলতা হলো শেখ হাসিনার উপর একক নির্ভরতা। শেখ হাসিনা একাধিকবার, বিশেষ করে কাউন্সিলের সময়ে তিনি বলেছেন যে, এখন তাঁর বয়স হয়েছে। এখন তিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে থাকতে চান আর দলের নেতৃত্বে থাকতে চান না। তবে দলের নেতাকর্মীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে তাঁকে তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হয়েছে। শেখ হাসিনা এখনো বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনায় তিনি তাঁর ক্লান্তির কথা বলেন। ইতোমধ্যে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর আল জাজিরার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যে, এবারই তাঁর শেষ প্রধানমন্ত্রীত্ব, এরপরে আর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি থাকবেন কি থাকবেন না সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেননি। তবে প্রতিবারের কাউন্সিলেই তিনি বলেন যে, এবারই শেষ আর নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে যে, তাঁরা শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প ভাবছেন না, ভাবতে পারেন না এবং শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা না গড়া পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবেনা বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।