আপেল আর নিউটনের কাহিনীটা তো সবারই জানা৷ সেই কাহিনীর মতোই আরেক ঘটনা ঘটল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস রাজ্যের ছোট্ট শহর আর্বানাতে৷
অনলাইন ডেস্কঃ আপেল আর নিউটনের কাহিনীটা তো সবারই জানা৷ সেই কাহিনীর মতোই আরেক ঘটনা ঘটল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস রাজ্যের ছোট্ট শহর আর্বানাতে৷ ১৯৭১ সালের জুলাইয়ের এক রাতে বছর চব্বিশের মাইকেল হার্ট যাচ্ছিলেন ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবরেটরিতে৷ বেশ কিছুক্ষণ ল্যাবে থাকতে হবে ভেবে কাছের এক মুদি দোকান থেকে খাবার কিনলেন৷ জানতেন না খাবারের সঙ্গে আমেরিকার স্বাধীনতার দ্বিশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে দোকানদার তার খদ্দেরদের বিনামূল্যে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রও দিচ্ছেন৷ একটু পরে খাবারের জন্য পিঠের ব্যাগ হাতড়াতেই মাটিতে পড়ল সেই ঘোষণাপত্র৷
বহু বছর পরে হার্ট ২০০২ সালে এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন , ‘মাথার মধ্যে যেন দপ করে আলো জ্বলে উঠল৷ ভাবলাম , কম্পিউটারে এই ঘোষণাপত্র টাইপ করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কী আছে ? শতবর্ষ পরেও তো লোকে এটা পড়তে পারবে৷ শত ভেবেও আর কিছু মাথায় এলো না৷ ’সেই রাতে মাইকেল মার্কিন স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র টাইপ করা শুরু করে দিলেন৷ প্রাক ইন্টারনেট যুগে সেই ল্যাবের কম্পিউটার আরও ১০০টা কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ হার্ট চেয়েছিলেন বাকিরাও ডাউনলোড করে তাঁর টাইপকরা স্বাধীনতাপত্রটি পড়ুক৷ জনা ছ’য়েক সত্যিই ডাউনলোড করেছিলেন৷ শুরু হল বইয়ের ভার্চুয়াল জগতে পথ চলা৷ ইলেকট্রনিক বুক বা ই-বুক জন্ম নিল৷ ইন্টারনেট তখনও জন্ম নেয়নি৷ কিন্ত্ত ১০০ জনের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নিখরচায় বই পাঠাতে চেয়ে হার্ট কার্যত সেই অনাগত দিনেরই আগমনী শোনালেন৷ আজ পঞ্চদশ শতকের ছাপা অক্ষরে লেখাকে নিয়ে আসার সেই জার্মান কর্মবীরের নামানুসারে চালু প্রকল্পে ৬০টি ভাষায় ৫৪ হাজার বই নিখরচায় পড়তে দিচ্ছে৷
আর হার্টের স্বপ্ন সফল করতে প্রযুক্তিও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ইন্টারনেট , হার্ডওয়্যার আর টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির ত্রিবেণী সঙ্গমে ই-বুক আজ বিশ্বজোড়া ব্যান্তি লাভ করেছে৷ ই-বুকের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে৷ ২০১৩ সালে যেখানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ১২.৩% ছিল ই-বুক, ২০১৮ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হতে পারে ২৫ .৮ %৷ পাশাপাশি দুনিয়া জুড়ে ই-লার্নিং যন্ত্র (যেমন না না ব্র্যান্ড্রের ই-বুক রিডার )-এর ব্যবসাও বাড়ছে৷ সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে ২০১৬ সালে এই ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ১৬,৬৫০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়েছে৷ ২০২০ নাগাদ যা ২২,৫০০ কোটি ডলার ছুঁতে পাারে৷ ২০২০ নাগাদ এশীয় -প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলেই ৩০ ভাগ পাঠ থাকবেন | আর এই অঞ্চলের অধিকাংশই হচ্ছেন ভারত আর চিনের পাঠককূল৷ ২০১৫ সালের ওই বছরে ভারতে ই-বুকের ২৬,১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ই-বুকের বাজার ভারত ২০১৫ সালে ইংরেজি ভাষায় ই-বুকের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ছিল৷ ২০২০ সাল নাগাদ ভারতে ই-বুকের বাজার ৭৩ ,৯০০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে৷
ভাগ্যিস ব্যাগ থেকে বইটা পড়েছিল ! ডিজিটাল দুনিয়ায় তা আপেল পড়ার চেয়ে কম কী !