করোনাভাইরাসের দাপটে অত্যন্ত সমস্যায় পড়েছে পর্যটন শিল্প। মন খারাপ ভ্রমণ পিপাসু মানুষদেরও। এই অবস্থায় সংক্রমণের আশঙ্কা এড়িয়ে কী ভাবো ঘোরা সম্ভব, তার হাল-হদিশ দেওয়া হল এখানে।
ভালোবাসার দার্জিলিং
করোনার দাপটে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের বেড়ানো শেষ।
পর্যটন শিল্প সবচয়ে বড় বিপর্যয়ে।
ভারতেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের কাজ চলে যাওয়ার আশঙ্কা।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্প। তিনটি পথ ধরে তারা ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।
অনলাইন ডেস্কঃ বাপ-ঠাকুর্দার মুখে শোনা হাওয়া বদলের গল্প মনে আছে? শরীর খারাপ থেকে সেরে ওঠার সময় চিকিৎসকরা পরামর্শ দিতেন পশ্চিমের হাওয়ায় খানিকটা ঘুরে আসতে। পশ্চিম মানে, ইউরোপ বা পশ্চিম এশিয়া নয়, ঘরের কাছের শিমুলতলা, গিরিডি বা ঘাটশিলা। সেই হাওয়াবদলের দিন গিয়েছে। কিন্তু শরীর খারাপ তো যায়নি। বরং এখন সামগ্রিক ভাবে সকলের শরীর খারাপের আশঙ্কা করোনা হাওয়ায়।
করোনার দাপটে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের বেড়ানো শেষ। পর্যটন শিল্প সবচয়ে বড় বিপর্যয়ে। ভারতেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের কাজ চলে যাওয়ার আশঙ্কা।
পর্যটন ব্যবস্থাকে আবার আলোয় ফেরানোর ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা কী? বাংলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিন রাস্তা দেখা যাচ্ছে আপাতত।
এক, হোটেলের বদলে হোমস্টে-তে থাকার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। দুই, বিমান বা ট্রেনের বদলে বেড়ানো ভালো কোনও গাড়িতে। তিন, বিদেশ বা ভিন রাজ্য নয়, নির্ভয়ে ঘুরুন বাংলাতেই।
ধরুন সপ্তাহান্তে নিজের গাড়ি চালিয়েই আপনি হাজির হলেন উত্তরবঙ্গ, দিঘা বা সুন্দরবন বা অযোধ্যা পাহাড়ে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা জানাচ্ছেন, আতিথেয়তা হবে বাপ-ঠাকুর্দার মুখে শোনা হাওয়াবদলের মতোই। টাইফয়েড কাটিয়ে তুলতে যে ভাবে আপনার দাদামশাই গিয়ে আস্তানা গাড়তেন মধুপুরের কোনও বাড়িতে। সে বাড়ির রাঁধুনি দিনে তিনবেলা রান্না করে খাওয়াতেন, দাদামশাই-দিদিমা সবাইকে নিয়ে চারপাশে ঘুরতেন।
একটা হোমস্টে-র সুবিধে কি? একটি মাত্র পরিবারই গিয়ে থাকতে পারবে ইচ্ছেমতো। বাড়ির মালিকের সঙ্গেও বিশেষ দেখাসাক্ষাতের সুযোগ থাকবে না। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ি— সামনের মাস থেকেই এ ভাবে সেখানে যেতে পারেন আপনি। আলিপুরদুয়ার জেলা পর্যটন সংস্থা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নিয়ে সাপ্তাহিক ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করেছে। কোভিড থেকে বাঁচার পদ্ধতি শেখানো হবে তাঁদের। সামনের মাসেই সেখানে যেতে পারবেন পর্যটকরা। পুরুলিয়া-বাঁকুড়াতেও একই রাস্তা ভাবা হচ্ছে। সুন্দরবনে তো অনেকে শুরুও করে দিয়েছেন যেতে।
সে সব তো হল। কিন্তু দেশের বাইরের ভ্রমণের কী হাল? দিল্লির এক নামী ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন কুন্তল সাহা রায়। করোনায় কাজ গিয়েছে তাঁরও। তাঁর কথায়, ‘বিমান বন্ধ বলে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতের মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার কথা সবাই আগে ভাববে।’
আর যাঁরা সেটাও পারবেন না? তাঁদের জন্য থাকছে ভার্চুয়াল ভ্রমণ। কেমন ব্যাপারটা? গত বছর বারো ক্লাস পাশ করা নীলাভ বসুর কথা ধরা যাক। তাঁদের মতো অনেকেই করেছেন ভ্রমণ-পত্রিকা। যা বাকিদের সুযোগ করে দেবে ভার্চুয়াল ট্রাভেলের। নীলাভর কথায়, ‘ভাবলাম, এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব, যেখানে সাধারণ মানুষ ভ্রমণের খিদেটা মেটাতে পারেন। আমাদের ‘ওথেলো’ পত্রিকার পুরোটাই সাদা-কালো। বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে চারপাশের রংগুলো ফিকে। তাই সাদাকালোতেই এই ভ্রমণ।’ সঙ্গী শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের পত্রিকার প্রয়োজন বাড়বে, যাতে বেড়ানোর গল্পগুলো বন্ধ না হয়, মানসভ্রমণের পথ খোলা থাকে।’
কী ভাবছেন? এ বার একটু হাওয়াবদলে যাবেন প্রেমিক বা প্রেমিকার হাত ধরে। তখন আপনাদের ‘ঘিরে থাকবে অদৃশ্য কত সুতনুকা হাওয়া’, এই কোভিড-বিপর্যয়েও তখন ‘সামনে কোথাও কোনো অপঘাত নেই আর/ মৃত্যু নেই দিগন্ত অবধি’। যাবেন তো এ অচেনায়?